Samakal:
2025-11-03@02:04:07 GMT

দাবার আকাশে নতুন তারা

Published: 26th, April 2025 GMT

দাবার আকাশে নতুন তারা

তাহসিন তাজওয়ার জিয়া। ২০ এপ্রিল হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ফারাগো ইভান মেমোরিয়াল গ্র্যান্ডমাস্টার দাবায় স্বাগতিক দেশের গ্র্যান্ডমাস্টার গেরগেলি আৎসেলকে হারিয়ে বহুল কাঙ্ক্ষিত তৃতীয় আইএম নর্ম পান। আইএম খেতাব পেতে তাহসিনের রেটিং ২৩৭৪। আর ২৬ রেটিং পেলে তাকে এনে দেবে আইএম খেতাব। তাহসিনের  বাবা গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান দেশের দাবার পোস্টারম্যান। স্বপ্নবাজ এই তরুণের স্বপ্নের পথে ছুটে চলার গল্প শুনেছেন আশিক মুস্তাফা

দা বায় আন্তর্জাতিক মাস্টার বা আইএম হতে আর তিনটি নর্ম দরকার ফিদে মাস্টার তাহসিন তাজওয়ার জিয়ার। তাহসিন তাঁর বহুল কাঙ্ক্ষিত তৃতীয় আইএম নর্মটি পেলেন গত ২০ এপ্রিল। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ফারাগো ইভান মেমোরিয়াল গ্র্যান্ডমাস্টার দাবায় দশম রাউন্ডে স্বাগতিক দেশের গ্র্যান্ডমাস্টার গেরগেলি আৎসেলকে হারিয়ে এই আইএম নর্ম অর্জন করেন তাহসিন। কেবল তাই নয়, টুর্নামেন্টে রানারআপও হয়েছেন এই ফিদে মাস্টার। দশ ম্যাচে তাঁর পয়েন্ট ৬। এক ম্যাচ হেরেছেন, যেটি ছিল নবম রাউন্ডে। তিনটি জিতেছেন, ছয়টি ড্র। তবে আইএম খেতাব পেতে তাহসিনের রেটিং হতে হবে ২৪০০। এ টুর্নামেন্ট শেষে তাঁর  রেটিং ২৩৭৪। এক-দুটি টুর্নামেন্টেই হয়তো তা পূরণ করে ফেলতে পারবেন।
একটু পেছনে ফিরে
তাহসিন তাজওয়ার জিয়া তাঁর প্রথম আইএম নর্ম অর্জন করেন ২০২৩ সালে ঢাকায় এশিয়ান জোনাল চ্যাম্পিয়নশিপে। দ্বিতীয়টি গত মাসে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত এশিয়ান জোনালে। ওই টুর্নামেন্টে রানারআপ হন তাহসিন। কলম্বোয় খেলে হাঙ্গেরিতে গিয়েছিলেন তিনটি টুর্নামেন্টে খেলতে। প্রথম দুটিতে নর্ম না মিললেও তৃতীয়টি তাঁকে নিরাশ করেনি। এই নর্ম অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে তাহসিন বলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। আজ বাবা থাকলে আরও বেশি ভালো লাগতো। তবে এই অর্জনে বাবার স্বপ্ন পূরণে এক ধাপ এগিয়েছি। সামনে বাকি নর্মগুলো অর্জন করে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’
তাহসিন ও দেশের দাবার দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া
তাহসিন তাজওয়ারের বাবা গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। তিনি বাংলাদেশের দাবার দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার। ২০২৪ সালের ৫ জুলাই বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনে জাতীয় দাবায় খেলতে খেলতেই তিনি আকস্মিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ‘বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে গ্র্যান্ডমাস্টার হবে।’ এ কথা বলতে বলতে চোখ ভিজে আসে জিয়াপত্নী তাসমিন সুলতানা লাবণ্যর। চোখ মুছে, নিজেকে সামলে বলেন, ‘ছেলের এমন অর্জন তার বাবা দেখে যেতে পারেনি। আজ জিয়া থাকলে খুব খুশি হতো। ওর কথা অনেক মনে পড়ছে। তবে জিয়া না থাকলেও নিশ্চয় সে সব দেখতে পাচ্ছে এবং খুশি হয়েছে। তাহসিন আইএম হওয়ার জন্য তৃতীয় নর্ম করেছে। এরচেয়ে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না। তবে ছেলের জন্য কতোটা পরিশ্রম করে যাচ্ছি তা বলে বোঝানো যাবে না। তবু দিন শেষে এমন সাফল্য সব ক্লান্তি দূর করে দেয়।’ 
বর্তমান ব্যস্ততা
২৪ এপ্রিল গ্রেট ওয়াল সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও বাংলাদেশ দাবা 
ফেডারেশনের আয়োজনে গ্রেট ওয়াল সিরামিক প্রিমিয়ার ডিভিশন দাবা লিগের খেলা শুরু হয়। তাতে খেলছেন তাহসিন তাজওয়ার জিয়া। এই টুর্নামেন্ট চলবে আগামী ২ মে পর্যন্ত। এরপর ৬ মে তাহসিন উড়াল দেবেন দুবাইয়ের উদ্দেশে। ৬ মে থেকে ৫ জুন থাকবেন দুবাইয়ে। সেখানে খেলবেন এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ও শারজাহ এবং দুবাইতে দুটি গ্র্যান্ড মাস্টার টুর্নামেন্ট। এ তিনটি টুর্নামেন্ট শেষে ৫ জুন দুবাই থেকে উড়াল দেবেন শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে। সেখানে ৫ তারিখেই শুরু হবে ওয়েস্টার্ন এশিয়ান জুনিয়র দাবা। চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। সেই টুর্নামেন্ট শেষে বাড়ি ফিরবেন এই তরুণ দাবাড়ু। তাহলে তো দেশের বাইরে কাটাতে হবে ঈদ–এমন প্রশ্নের উত্তরে তাহসিন বলেন, ‘তেমন বেশি সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া খেলার জন্য, দেশের জন্য এ ছাড়টা তো দিতে হবে।’
জন্ম, বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা 
তাহসিনের জন্ম ঢাকার মোহাম্মদপুরে। বেড়ে ওঠাও সেখানে। তবে বাবার সঙ্গে বেশ আনন্দে দাবার বোর্ডে কেটেছে শৈশব। বাবা বিভিন্ন টুর্নামেন্টে নিয়ে যেতেন। দেখতেন বিশ্বের নামিদামি দাবাড়ুদের। তাদের দেখে আর বাবার অনুপ্রেরণা থেকে দাবাকে নিজের ধ্যানজ্ঞান মানিয়ে নেন তাহসিন। বর্তমানে এ-লেভেলে পড়ছেন সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এখান থেকে ও-লেভেল পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাহসিন। 
আগামীর স্বপ্ন
আগামীর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তাহসিন তাজওয়ার জিয়া বলেন, ‘বাবাকে ছাড়িয়ে যেতে চাই। হতে চাই দেশের সেরা খেলোয়াড়। একটু চুপ থেকে ফের বলেন, ‘কেবল দেশে নয়, দেশের বাইরেও সেরা খেলোয়াড় হতে চাই। মানে দাবায় বিশ্বসেরা খেলোয়াড় হতে চাই আমি। যদিও এর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও প্রশিক্ষণ। আমি বিশ্বাস করি, এ পর্যন্ত সবাইকে যেমন পাশে পেয়েছি আগামীতেও পাবো! তবে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে পারবো।’
তাহসিনের কথা শেষ হতে মনে হলো, আসলে স্বপ্ন দেখতে বড় করে দেখা উচিত। বাবার পথ ধরে দাবার আকাশ জয় করবেন তাহসিন; এমন স্বপ্ন দেখতে পারি আমরা! 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘বউ পেটানো’ অভিনেতার দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন

সৈয়দা আলিজা সুলতানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরোজ খান। তাদের এই সংসার ভেঙে গেছে। আলিজা অভিযোগ করেছিলেন, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন ফিরোজ। কেবল তাই নয়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ছবিও প্রকাশ করেছিলেন। এরপর তোপের মুখে পড়েন ফিরোজ খান। নেটিজেনদের অনেকে তাকে ‘বউ পেটানো’ অভিনেতার তকমাও দেন।

প্রথম সংসার ভাঙার প্রায় দুই বছর পর ডা. জয়নবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফিরোজ খান। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন ছড়িয়েছে। মূলত, বিনোদনভিত্তিক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ডা. জয়নবের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়। তারপরই শুরু হয় ফিরোজ খানের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে জয়নবের অভিযোগের স্ক্রিনশট। 

ডা. জয়নব কথিত এই নোটে বলেন, “আমি আমার সহনসীমার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। অবিরাম মানসিক চাপ ও উদ্বেগে ক্লান্ত। এমন একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে আছি, যে আমাকে বিশ্বাস করে না। আমি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি এখন ক্লান্ত। প্রতিটি কথোপকথন একটা লড়াইয়ের মতো লাগে, প্রতিটি মতবিরোধ যেন যুদ্ধ। এমন আচরণের শিকার হয়ে আমি ক্লান্ত। আমি যখন তাকে কিছু বলি, সে আমার উপর রাগ ঝাড়ে।”

স্ত্রী জয়নবের সঙ্গে ফিরোজ খান

সুখ স্মৃতিগুলো কষ্টে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। এমন মন্তব্য করে জয়নব বলেন, “সত্যি বলতে, আমরা একসঙ্গে যে স্মৃতিগুলো তৈরি করেছিলাম, তা এখন কষ্ট ও আঘাতে ঢাকা পড়ে গেছে। আমি অসংখ্যবার তাকে ক্ষমা করেছি। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো কখনো পুরোপুরি সারেনি। বুঝতে পারছি, আমি এক ধরণের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে বাস করছি, একটা সম্পর্কে আটকে আছি, যা আমার জীবনের শক্তি শুষে নিচ্ছে। আমি জানি, আমি এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। আমি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কোমলতার যোগ্য। সবকিছু ঠিক আছে—আমি আর এই ভান করতে চাই না।”

ডিভোর্সের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে জয়নব বলেন “এমন বিষাক্ত একটা সম্পর্কের জন্য আমি আমার সুখ ত্যাগ করেছি। আমি এখন নিজের জন্য, নিজের মানসিক সুস্থতার জন্য দাঁড়াচ্ছি। বেদনা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে, আমি আমার জীবনের এই অধ্যায় (বিবাহিত জীবন) শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ডিভোর্স নিচ্ছি। কারণ আমি জানি, এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর জন্য আমি প্রস্তুত, যেখানে আমাকে মূল্য দেওয়া হবে, সম্মান করা হবে, ভালোবাসা হবে।”

জয়নবের এই ‘ডিভোর্স নোট’ নিয়ে যখন জোর চর্চা চলছে, তখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন ফিরোজ খান। তবে এর আগে ফিরোজ খানের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে দেখা যায়। তাতে জয়নবের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেইল’ ও ‘মানসিক চাপের’ অভিযোগ তোলেন। যদিও পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। পাশাপাশি এই অভিনেতা জানান, তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল।

ডা. জয়নব

তবে সংসার ভাঙার গুঞ্জনে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি ফিরোজ খান কিংবা তার স্ত্রী ডা. জয়নব। তবে বিনোদনভিত্তিক যে পেজ থেকে জয়নবের ‘ডিভোস নোট’ ছড়ানো হয়েছে, সেই পোস্টে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাতে জয়নব লেখেন, “এই ধরনের পেজগুলো আনফলো করুন অথবা রিপোর্ট করুন। এই ধরনের পেজ থেকে ভুয়া খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিরক্ত করা হচ্ছে। সত্যি বলছি, আমি জানি না কীভাবে তারা আমার স্টোরিতে পোস্টটি করার অ্যাকসেস পেয়েছে। এই পোস্ট আমি কখনো করিনি।”

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম স্ত্রী সৈয়দ আলিজা সুলতানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় ফিরোজ খানের। এ সংসারে সুলতান খান ও ফাতিমা খান নামে দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে দুই সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে আদালতে মামলা লড়ছেন এই প্রাক্তন দম্পতি। ২০২৪ সালে ডা. জয়নবকে বিয়ে করেন ফিরোজ খান।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ