অ্যানফিল্ড যেন রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতে রূপ নিয়েছিল আনন্দের সমুদ্রে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ২০২৪-২৫ মৌসুমে মাত্র এক পয়েন্টের প্রয়োজন ছিল লিভারপুলের শিরোপা নিশ্চিত করতে। কিন্তু তারা অপেক্ষা করেনি কোনো সমীকরণের জন্য। টটেনহ্যাম হটস্পারকে বিধ্বস্ত করে ৫-১ গোলের বড় জয় তুলে নিয়েছে অলরেডরা। তাতে চার ম্যাচ হাতে রেখেই প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয় নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের।

ঘরের মাঠে শুরুটা অবশ্য প্রত্যাশামতো হয়নি। ম্যাচের ১২ মিনিটে কর্নার থেকে আসা বলে হেড করে টটেনহ্যামকে এগিয়ে দেন ডমিনিক সোলাঙ্কে। গোল খেয়ে কিছুটা থমকে গিয়েছিল গ্যালারি। তবে দ্রুতই নিজেদের মেলে ধরে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে লিভারপুল। চার মিনিটের ব্যবধানে লুইস দিয়াজ সমতা ফেরান ডমিনিক সোবোসলাইয়ের নিখুঁত পাস থেকে। প্রথমে অফসাইডের সংকেত এলেও ভিএআর রিভিউর পর গোলটি বৈধ ঘোষণা করা হয়।

তারপর শুরু হয় গোলের বন্যা। ২৪ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শটে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার দলকে এগিয়ে দেন। বিরতির আগে ৩৪ মিনিটে কডি গাকপোর গোলে লিভারপুলের লিড বাড়িয়ে নেয় ৩-১ গোলে। প্রথমার্ধের শেষ বাঁশির আগে গ্যালারি ছিল উত্তেজনায় ফেটে পড়ার অপেক্ষায়।

দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে লিভারপুল। ৬৩ মিনিটে সোবোসলাইয়ের পাস ধরে ডান প্রান্ত থেকে দারুণ ফিনিশে গোল করেন মোহাম্মদ সালাহ। এটি ছিল তার চলতি মৌসুমের ২৮তম গোল। এই গোলের মাধ্যমে তিনি প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে সার্জিও আগুয়েরোকে ছাড়িয়ে সর্বকালের পঞ্চম সর্বোচ্চ গোলদাতার আসন দখল করেন।

ম্যাচের ৬৯ মিনিটে স্পার্স ডিফেন্ডার ডেসটিনি উদোগির দুর্ভাগ্যজনক আত্মঘাতী গোল লিভারপুলের জয়টাকে আরও বড় করে তোলে। 

৩৪ ম্যাচ শেষে লিভারপুলের সংগ্রহ দাঁড়াল ৮২ পয়েন্টে, যা দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্সেনালের চেয়ে ১৫ পয়েন্ট বেশি। ফলে চার ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা নিশ্চিত করেছে আর্নে স্লটের দল। এই জয়ে সর্বোচ্চ ২০টি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জেতা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলেছে অলরেডরা।

শিরোপা জয়ের পর অ্যানফিল্ডে দেখা গেছে এক অনন্য দৃশ্য। বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত ‘চ্যাম্পিয়ন্স’ লেখা জার্সি পরে মোহামেদ সালাহ, ভার্জিল ফন ডাইকরা উদযাপনে মেতেছিলেন। গ্যালারির লাল সমুদ্র যেন আনন্দের জোয়ারে ভেসেছিল পুরো সময়টা।

লিভারপুল কোচ আর্নে স্লট নিজের প্রথম মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি জিতে গড়লেন অনন্য কীর্তি। হোসে মরিনহো, কার্লো আনচেলত্তি, ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনি ও আন্তোনিও কোন্তের পর তিনিই হলেন আরেকজন কোচ, যিনি ইংলিশ লিগে প্রথম মৌসুমেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেলেন। উচ্ছ্বসিত স্লট বলেন, ‘‘কিছু জেতা সবসময় দারুণ অনুভূতির, তবে লিভারপুলের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবে প্রথম মৌসুমেই শিরোপা পাওয়া, এটা বিশেষ কিছু।’’

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ