বাংলাদেশে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ
Published: 30th, April 2025 GMT
সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ (ইউএই) অন্যান্য দেশের আদলে বাংলাদেশেও মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিজেড) স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক বছরের মধ্যে জোন ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে আগামী ৬ মে উচ্চ পর্যায়ের সভা করার কথা রয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন, অর্থনীতি ও রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনা, আঞ্চলিক উন্নয়নসহ নানা কারণে বর্তমান বিশ্বে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল বা ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে এফটিজেড স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই; অন্যান্য দেশের আইন, প্রণোদনা, মডেল ইত্যাদি পর্যালোচনার লক্ষ্যে গত ২১ এপ্রিল বেজার উদ্যোগে বাংলাদেশে ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) স্থাপনে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে বেজা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিডার প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ কমিটি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, কাস্টমস আইন, আমদানি ও রপ্তানি আইনসহ সংশ্লিষ্ট সব আইন, বিধি, বিধান পর্যালোচনা করবে এবং ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) স্থাপনে সহায়ক আইন, বিধি, গাইডলাইনস প্রণয়ন/ সংশোধন করবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং বেজা ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের যৌথ উদ্যোগে এফটিজেড বাস্তবায়িত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) স্থাপনের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় কমিটির প্রথম সভা বেজা ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের সভাপত্বিতে আগামী ৬ মে হওয়ার কথা রয়েছে।
জাতীয় কমিটির কার্যপরিধি
ক) ফ্রি ট্রেড জোনে (এফটিজেড) সফল দেশগুলোর এফটিজেড পরিচালনার মডেল, আইন, নীতি, প্রণোদনা ইত্যাদি বিষয় পর্যালোচনা করা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এফটিজেড স্থাপনের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় কাঠামোর খসড়া প্রস্তুত করা।
খ) এফটিজেড স্থাপনের সম্ভাব্য উপযুক্ত স্থানগুলো নির্বাচন করা এবং এগুলোর প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই করা।
গ) সম্ভাব্য স্থানগুলোর ভৌগোলিক, অবকাঠামোগত ও লজিস্টিক সুবিধা যাচাই করা।
ঘ) এফটিজেড স্থাপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশীজন নির্ণয় এবং তাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা করা।
ঙ) এফটিজেড স্থাপনের লক্ষ্যে অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ, কার্যক্রম ও সহায়তা করা।
মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিজেড) হলো এমন নির্দিষ্ট এলাকা, যেখানে শুল্ক কর্তৃপক্ষের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়াই পণ্য আমদানি, উৎপাদন এবং পুনঃরপ্তানি করা যায়। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং শিল্পায়নের পরিবেশ সৃষ্টি করার কারণে এফটিজেড সফল অর্থনৈতিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ: প্রণোদনা এবং অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এ অঞ্চল বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
রপ্তানি এবং বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি: এফটিজেডের মধ্যে পরিচালিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ববাজারে কার্যকরভাবে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হয়। এর ফলে রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। পণ্য সরবরাহ চেইন সমৃদ্ধ হয়।
বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হিসেবে সিঙ্গাপুরের সাফল্যের পেছনে আছে সুপরিকল্পিত এফটিজেড স্থাপন, যেমন: জুরং দ্বীপে বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত এফটিজেড। এর বিশ্বমানের অবকাঠামো এবং পরিষেবার ফলে সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির একটিতে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর বৃহত্তম এবং সর্বাধিক সফল এফটিজেডগুলোর মধ্যে একটি হলো দুবাইয়ের জেবেল আলী মুক্ত অঞ্চল। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) পরিচালনা করে ডিপি ওয়ার্ল্ড। মূলত, দুবাইয়ের এ বন্দর পরিচালনার জন্য ডিপি ওয়ার্ল্ড আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করেছে।
ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) স্থাপনের বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশকে গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কাজ শুরু হয়েছে। এই গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাবের জন্য ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) অন্যতম অনুষঙ্গ।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাতীয় কমিটির কার্যকর সমন্বয় এবং সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হলে এ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হবে।
গত ৭ থেকে ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সামিটের অংশ হিসেবে ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে একটি সেন্সিটাইজেশন সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ওই সেমিনারে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। পরে ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.
ঢাকা/হাসনাত/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় কম ট পর চ ল লক ষ য
এছাড়াও পড়ুন:
জরুরি পরিস্থিতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রতিনিয়ত জরুরি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। অনেক সময় ভ্রান্ত ধারণায় পড়ে এ পরিস্থিতিতে আরও বড় ধরনের ভুল করে ফেলি আমরা। সে ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতিতে কী করবেন আর কী করবেন না, তা জেনে রাখা ভালো।
যেমন–
পুড়ে গেলে : গরম তেল পড়ে হোক বা আগুনে পুড়ে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পোড়া স্থানে পেস্টের আস্তরণ দিই। অনেকে ডিম ভেঙে দেন, কেউ বা লাগান চুন। এগুলো ক্ষতিকর। পুড়ে গেলে ঠান্ডা পানির ধারা রাখতে পারেন ১০ মিনিট; অন্য কোনো কিছু নয়।
ব্যথা পেলে : হাড় ভাঙলে নড়াচড়া না করে ভাঙা স্থানের দু’পাশে কাঠ দিয়ে বেঁধে হাসপাতালে আনতে হবে।
রক্ত ধুয়ে ফেলা নয় : রক্তপাত হতে থাকলে পরিষ্কার কাপড় বা গজ-ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিন। বেশি কেটে গেলে বা রক্তপাত ১০ মিনিটের মধ্যে বন্ধ না হলে হাসপাতালে নিতে ভুলবেন না।
নাক দিয়ে রক্ত পড়লে : আক্রান্ত ব্যক্তিকে সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে বসাতে হবে। বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল ও অনামিকা দিয়ে নাসারন্ধ্র টানা ১০ মিনিট বন্ধ রাখতে হবে। এ সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। বরফ নাকের ওপরে দেওয়া যেতে পারে। যদি একটানা ১০ মিনিট নাসারন্ধ্র চেপে ধরে রাখার পরও রক্ত বন্ধ না হয়, দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
সাপে কাটলে : সাপে কাটার স্থানের কিছু ওপরে আমরা শক্ত বাঁধন দিই। এতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হাত-পা পচে যেতে পারে। বাঁধন দিতে হবে, তবে রশি দিয়ে নয়; গামছা, কাপড় দিয়ে ঢিলে করে বাঁধলেই চলবে।
বিষপানে নয় গোবরপানি : বিষ পান করলে অনেকে গোবরমিশ্রিত পানি পান করিয়ে বমি করার চেষ্টা করেন। এটি ভ্রান্ত ধারণা। যদি বিষপান করা ব্যক্তি অচেতন বা অবচেতন থাকে, তাহলে বমি ফুসফুসে চলে যেতে পারে; যা গুরুতর। বিষপানের এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি, নিনস