সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ (ইউএই) অন্যান্য দেশের আদলে বাংলাদেশেও মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিজেড) স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক বছরের মধ্যে জোন ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে আগামী ৬ মে উচ্চ পর্যায়ের সভা করার কথা রয়েছে।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন, অর্থনীতি ও রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনা, আঞ্চলিক উন্নয়নসহ নানা কারণে বর্তমান বিশ্বে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল বা ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে এফটিজেড স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই; অন্যান্য দেশের আইন, প্রণোদনা, মডেল ইত্যাদি পর্যালোচনার লক্ষ্যে গত ২১ এপ্রিল বেজার উদ্যোগে বাংলাদেশে ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) স্থাপনে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে বেজা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিডার প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ কমিটি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, কাস্টমস আইন, আমদানি ও রপ্তানি আইনসহ সংশ্লিষ্ট সব আইন, বিধি, বিধান পর্যালোচনা করবে এবং ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) স্থাপনে সহায়ক আইন, বিধি, গাইডলাইনস প্রণয়ন/ সংশোধন করবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং বেজা ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের যৌথ উদ্যোগে এফটিজেড বাস্তবায়িত হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড)  স্থাপনের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় কমিটির প্রথম সভা বেজা ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের সভাপত্বিতে আগামী ৬ মে হওয়ার কথা রয়েছে। 

জাতীয় কমিটির কার্যপরিধি
ক) ফ্রি ট্রেড জোনে (এফটিজেড) সফল দেশগুলোর এফটিজেড পরিচালনার মডেল, আইন, নীতি, প্রণোদনা ইত্যাদি বিষয় পর্যালোচনা করা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এফটিজেড স্থাপনের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় কাঠামোর খসড়া প্রস্তুত করা।

খ) এফটিজেড স্থাপনের সম্ভাব্য উপযুক্ত স্থানগুলো নির্বাচন করা এবং এগুলোর প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই করা।

গ) সম্ভাব্য স্থানগুলোর ভৌগোলিক, অবকাঠামোগত ও লজিস্টিক সুবিধা যাচাই করা।

ঘ) এফটিজেড স্থাপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশীজন নির্ণয় এবং তাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা করা।

ঙ) এফটিজেড স্থাপনের লক্ষ্যে অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ, কার্যক্রম ও সহায়তা করা।

মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিজেড) হলো এমন নির্দিষ্ট এলাকা, যেখানে শুল্ক কর্তৃপক্ষের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়াই পণ্য আমদানি, উৎপাদন এবং পুনঃরপ্তানি করা যায়। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং শিল্পায়নের পরিবেশ সৃষ্টি করার কারণে এফটিজেড সফল অর্থনৈতিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ: প্রণোদনা এবং অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এ অঞ্চল বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।

রপ্তানি এবং বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি: এফটিজেডের মধ্যে পরিচালিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ববাজারে কার্যকরভাবে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হয়। এর ফলে রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। পণ্য সরবরাহ চেইন সমৃদ্ধ হয়।  

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হিসেবে সিঙ্গাপুরের সাফল্যের পেছনে আছে সুপরিকল্পিত এফটিজেড স্থাপন, যেমন: জুরং দ্বীপে বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত এফটিজেড। এর বিশ্বমানের অবকাঠামো এবং পরিষেবার ফলে সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির একটিতে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর বৃহত্তম এবং সর্বাধিক সফল এফটিজেডগুলোর মধ্যে একটি হলো দুবাইয়ের জেবেল আলী মুক্ত অঞ্চল। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) পরিচালনা করে ডিপি ওয়ার্ল্ড। মূলত, দুবাইয়ের এ বন্দর পরিচালনার জন্য ডিপি ওয়ার্ল্ড আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করেছে।

ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) স্থাপনের বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশকে গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কাজ শুরু হয়েছে। এই গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাবের জন্য ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) অন্যতম অনুষঙ্গ।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাতীয় কমিটির কার্যকর সমন্বয় এবং সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হলে এ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড)   স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হবে।

গত ৭ থেকে ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সামিটের অংশ হিসেবে ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে একটি সেন্সিটাইজেশন সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ওই সেমিনারে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। পরে ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় কম ট পর চ ল লক ষ য

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ