প্রণমী দাস শিক্ষার্থী, শিল্পী ও একজন উদ্যোক্তা। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফুড সেফটি বিভাগের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। কিন্তু পড়ালেখার জগতের বাইরেও তার আরেকটি রঙের, কাঠের ও ডিজাইনের জগত আছে। সেই জগতের নাম ‘গার্গী’। এখানে গহনার পাশাপাশি হাতে রঙ করা পাঞ্জাবি, শাড়ি, কুর্তি নিয়েও কাজ করা হয়।

আকর্ষণীয় নকশার বাহারি গহনাগুলো মূলত কাঠের বা মেটালের তৈরি বেইজ, তার ওপর বিডস, কালো সুতা, ট্যাসেল, কড়ি, রঙ তুলি, আঠা এবং নানারকম পুতিসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করে শৈল্পিক রুপ দেওয়া হয়। পরে এগুলো বিক্রি করা হয় শখের পণ্য হিসেবে।

২০১৮ সালে ঢাকার বাসিন্দা প্রণমী তার বোনের হোস্টেলের বান্ধবীদের কাছ থেকে পছন্দসই নকশা করে দেওয়ার শর্তে অর্ডার নিয়ে শুরু করেন গহনা বানানোর কাজ। প্রথমদিকে ছিল হাতে গোনা কয়েকটি কাঠের গহনা আর অল্প কিছু রঙ। প্রথম বিক্রির আনন্দটা আসে সেখান থেকেই। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়, যখন সবাই ঘরে বন্দি, তখনই প্রণমীর ‘গার্গী’ নতুন করে ডানা মেলতে শুরু করে।

আরো পড়ুন:

দুই বান্ধবীর ‘ওলো সই’

আদিবাসী তরুণরা প্রশিক্ষণে ভাগ্য বদলে হচ্ছেন স্বাবলম্বী

গহনা বানানো নিয়ে কখনো কোনো প্রশিক্ষণ নেননি প্রণমী। তার নিজের ভাষায়, “আমি যখন ফেসবুকে হাতে বানানো গহনার ছবি দেখতাম, তখনই মনে হতো আমি পারব। কারণ শখের বসে আঁকা আঁকিতে আমি ভালো দক্ষ।”

সেই বিশ্বাস থেকেই শুরু হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার গল্প। নিজের জন্য বানানো, আবার খুলে নতুন করে ডিজাইন করা, রঙ বদলে আরো নতুন কিছু বানানো। এভাবেই ক্রমে তৈরি হয় ‘গার্গী’র আলাদা এক পরিচিতি।

তবে এই পথ সহজ ছিল না। পরিবারের সবার সমর্থন আছে, তবে আমার বাবার একটু আপত্তি ছিল শুরুতে। আমার বাবা বলতো যে, “তোর হলের নেত্রী আপুরা যদি সবাই বিনা পয়সায় বানিয়ে দিতে বলে তখন কী করবি? পড়াশোনা ফাঁকে আবার বিনা পয়সায় এত কষ্ট করি কীভাবে বানাবি? 

“পড়াশোনার চাপের কারণে মাঝে মাঝে গহনার কাজ বন্ধ রাখতে হয়। কাস্টমারদের অনেকেই বুঝতে চান না হাতের কাজের মূল্য কতটা শ্রমসাধ্য, কতটা সৃজনশীল চিন্তার ফসল। একটা ডিজাইনের পেছনে কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে হয়। আবার কখনো নিজেরই পছন্দ হয় না, রং চেঞ্জ করতে হয়। এই চিন্তা আর শ্রমের মূল্য সব ক্রেতা বুঝতে চায় না।”

তবুও থেমে থাকেননি। মাসে ১৫-২০টি অর্ডার পেয়ে থাকেন, লাভ রাখেন সীমিত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। এক মাসে সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে ৮-৯ হাজার টাকার গহনা।নিজ হাতে বানানোর পাশাপাশি সময় ও পড়াশোনার সাথে ভারসাম্য রেখে কিছু গহনা সংগ্রহ করেও বিক্রি করেন।

“এই ব্যবসা আমি পছন্দ করেছিলাম তার কারণ হচ্ছে এটা মূলত আমার শখের কাজ। আমি একটা ছবি আঁকব, রং করব এবং আমি যেই নকশা করে গহনা বানাব সেই গহনা পরে কেউ ঘুরতে যাবে, কেউ খুব আনন্দের সাথে ছবি তুলবে এই জিনিসটা আমার কাছে খুব আনন্দের লেগেছে এবং আমার কাছে মনে হয়েছিল এই কাজটা আমার কাছে খুব সহজ, আমি পারব। আমার শখের বসে করা কাজটাই আস্তে আস্তে আমার উপার্জনের একটা মাধ্যম হয়ে গেছে,” বলছিলেন প্রণমী।

এই পুরো উদ্যোগে প্রণমীর কোনো বড় পুঁজি ছিল না, ছিল না ঋণ। নিজের জমানো টাকায় শুরু, আর লাভের টাকা থেকেই ধীরে ধীরে বর্তমানে সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকার পণ্য। কারোর সাহায্য ছাড়াই তিনি একাই কাজ করেন, একাই গড়েছেন ‘গার্গী’।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক, এই স্বপ্ন গড়তে বড় ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, “করোনার মধ্যে পেজটা খুলেছিলাম। তখন সবাই ঘরে বন্দি, কিন্তু ফেসবুকের মাধ্যমেই সবাই আমার গহনা দেখেছে, অর্ডার দিয়েছে। এখন ক্যাম্পাসে, হলে, আশেপাশে সবাই চেনে গার্গীকে।”

“আমি এখনো এটাকে ফুলটাইম ক্যারিয়ার হিসেবে ভাবি না,” বললেন প্রণমী। তিনি বলেন, “তবে শখের জায়গা থেকে এটা আমার আনন্দ আর উপার্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতদিন পারি, এটা চালিয়ে যাব।”

ঢাকা/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উদ য ক ত ই কম র স আনন দ প রণম

এছাড়াও পড়ুন:

সিরাজ–কৃষ্ণাতে ম্যাচে ফিরল ভারত

অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফিতে মোহাম্মদ সিরাজের মতো আর কোনো পেসার নেই, এভাবে বলাই যায়। কারণ, সিরাজ ও ক্রিস ওকসই এই সিরিজের সব কটি ম্যাচ খেলেছেন। সেই ওকসও ওভাল টেস্টের প্রথম দিনে চোট পেয়ে টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন, টিকে আছেন সিরাজ।

টিকে থাকা সিরাজ কী করেছেন? গতকাল ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ৮ ওভারের এক স্পেলে ফিরিয়েছেন ওলি পোপ, জো রুট, জ্যাকব বেথেলকে। এরপর আরও এক উইকেট। সিরাজকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন প্রসিধ কৃষ্ণা। দ্বিতীয় সেশনের শেষ ওভারে দুই উইকেটসহ তিনিও নিয়েছেন ৪ উইকেট। ভারতের ২২৪ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড অলআউট হয়েছে ২৪৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারত কাল দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে ২ উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে। দুই ‘জীবন’ পাওয়া যশস্বী জয়সোয়াল ৫১ ও আকাশ দীপ ৪ রান নিয়ে উইকেটে আছেন।

অথচ কাল প্রথম সেশন শেষে ম্যাচের চিত্র ছিল আলাদা। ইংল্যান্ড প্রথম ১৬ ওভারেই তোলে ১ উইকেটে ১০৯ রান। দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট ৭৭ বলে গড়েন ৯২ রানের জুটি। এমন বাজবলীয় শুরুর পর চিত্র পুরোপুরি বদলে যায় দ্বিতীয় সেশনে। শুরুটা করেন কৃষ্ণা। তাঁর শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ক্রলি। পরের গল্পটা সিরাজের। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ৩১ রান দেওয়া সিরাজকে অধিনায়ক গিল যখন বোলিংয়ে আনেন, তখন ইংল্যান্ডের রান ২৪ ওভারে ২ উইকেটে ১৪২। তিনি একে একে ফেরান দুই সেট ব্যাটসম্যান পোপ (২২), রুটকে (২৯) ও বেথেলকে (৬)। এরপর কৃষ্ণার দুই উইকেটে দ্বিতীয় সেশনটা পুরোপুরি ভারতের হয়ে যায়। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সেশনে ১০৬ রান তুলতে হারায় ৬ উইকেট। তৃতীয় সেশনে আর ৩২ রান যোগ করতে পারে তারা।

আরও পড়ুনকাঁধের চোটে ভারতের বিপক্ষে আর খেলতে পারবেন না ওকস১১ ঘণ্টা আগেলোকেশ রাহুলকে আউট করার পর অ্যাটকিনসনের আনন্দ

সম্পর্কিত নিবন্ধ