স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখী পদযাত্রায় পুলিশের বাধা
Published: 2nd, May 2025 GMT
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ঢাকা মহানগরীর সাবেক সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনের অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত। এ সময় তাদের বাধা দেয় পুলিশ।
আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে এ পদযাত্রা শুরু করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের নেতা–কর্মীরা। এর আগে জুমার নামাজের পর সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে ইসলামী ছাত্রসেনার ঢাকা মহানগর শাখা।
গত ২৭ এপ্রিল সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হায়দারাবাদ এলাকার একটি মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা রইস উদ্দিনকে শিশু বলাৎকারের অভিযোগে গাছে বেঁধে মারধর করে একদল মানুষ। পরে সকাল ১০টার দিকে তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। দিবাগত ভোররাতেই কারাগারে তিনি মারা যান।
মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে পদযাত্রাটি বিকেল ৪টার পর মৎস্য ভবন এলাকায় পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। একপর্যায় নেতা–কর্মীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে।
অবশ্য পরে পুলিশ সরে গেলেও মিছিলটি শেষ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যায়নি। মৎস্য ভবন মোড় পার হয়ে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ফটকের সামনে এসে এটি শেষ হয়।
এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের নির্বাহী মহাসচিব আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় বিনা উসকানিতে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘এরপরও আমরা যেহেতু শান্তিপ্রিয়, আমরা শান্তি চাই। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে, আমরা সে প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলব।’
লাঠিপেটার অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের সঙ্গে কথা ছিল তাঁরা, মৎস্য ভবনে এসে পদযাত্রা শেষ করে চলে যাবেন। তারপরও আমরা ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিলাম। কারণ, এখানে বিভিন্ন ধরনের লোকজন থাকতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘তাঁরা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে আহত করেন। এরপর তো আর পুলিশ তখন বসে থাকবে না। এরপরও আমরা তাঁদের ছেড়ে দিয়ে সামনে চলে আসি।’
পদযাত্রা শুরুর আগে সমাবেশ থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের নেতা মাসুদ হোসাইন আল–কাদেরি মাওলানা রইস উদ্দিন হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। তিনি বলেন, ‘অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। আমরা রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেব, অফিস–আদালত বন্ধ করে দেব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেব। আপনারা ঘুমন্ত সিংহকে জাগাবেন না।’
সমাবেশে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের নির্বাহী মহাসচিব মুফতি আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পরে যে পরিণতি হয়েছে, সেটি কিন্তু আমরা ভুলে যাইনি। জেনে রাখুন, আমরা যদি বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেই, তাহলে রাজধানী অচল করে দেব।’
আরও পড়ুনমাওলানা রইস হত্যার বিচার দাবি জানিয়ে ১০২ নাগরিকের বিবৃতি৩০ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পদয ত র
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে ডিসির বাসভবনে হামলার ঘটনায় ১০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের জেরে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বাসভবনে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করেন।
মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ পৌর পার্ক, লঞ্চঘাট, কাঁচাবাজার এলাকাসহ সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে জনগণের মনে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে যান চলাচল ব্যাহত করা হয়। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের পক্ষে মিছিল করা হয়। আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে ও এনসিপির পথসভা নস্যাৎ করতে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করতে জনসাধারণের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
এ নিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা ও ককটেল নিক্ষেপ, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, জেলা কারাগারে হামলা, জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ১৪টি মামলা করা হলো। সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। ১৪টি মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ১৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৫৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৬ জুলাই থেকে গত সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেদিন প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। রাতেই কারফিউ জারি করা হয়। পরে কারফিউর মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। পরে ২০ জুলাই রাত আটটায় কারফিউ ও ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়।