‘শামীম ওসমানরা প্রতিবারই পালিয়ে যায়, নব্য শামীম ওসমানরা মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করে’
Published: 2nd, May 2025 GMT
শামীম ওসমানদের (আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য) আমলে নারায়ণগঞ্জ ত্রাসের নগরী হিসেবে পরিচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক। তিনি বলেছেন, ‘এই শামীম ওসমানরা প্রতিবারই ক্ষমতা পরিবর্তনের পরপরই পালিয়ে যায়। কিন্তু আবার নব্য শামীম ওসমানরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। তাই আমরা বলতে চাই, জুলাই–পরবর্তী এই বাংলাদেশে আর কোনো মাফিয়া বা নব্য শামীম ওসমানের যেন জন্ম না হয়।’
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর ৪ নম্বর সড়কে আয়োজিত যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল হক এই মন্তব্য করেন। শুক্রবার বিকেলে এই সমাবেশের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ যুব অধিকার পরিষদ।
লড়াকু ছাত্র-জনতা আগামী দিনে এই দেশে কোনো ফ্যাসিবাদ তৈরি হতে দেবে না উল্লেখ করে সমাবেশে নুরুল হক বলেন, ‘আগামীতে যাঁরা নেতা হবেন, জনপ্রতিনিধি হবেন, ওই ভোটকেন্দ্র দখল করে সিল মেরে জনপ্রতিনিধি হবেন, সেই দুঃস্বপ্ন দেখবেন না। জনগণ যাকে সমর্থন করবে, জনগণ যাদের পেছনে থাকবে, তারাই নেতা হবে, দেশ শাসন করবে।’
যুব অধিকার পরিষদ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি শেখ সাব্বির রাজের সভাপতিত্বে যুব সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, সহসভাপতি ওয়াহিদুর রহমান। প্রধান বক্তা ছিলেন যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ। এ সময় গণ অধিকার পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি নাহিদসহ জেলা ও মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন‘ফুল স্টপ মারেন’—মানবিক করিডর প্রসঙ্গে সরকারকে নুরুল হক০১ মে ২০২৫ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক আরও বলেন, ‘কোনো কোনো দল যদি ভাবে আমরা একাই এক শ, আমরাই সব নিয়ন্ত্রণ করব, আমরাই হর্তাকর্তা, তাদের বলব, আওয়ামী লীগের পতন থেকে শিক্ষা নিন। এই দেশের মানুষ কাউকে পরোয়া করেননি, ১৬ বছরের দৈত্য দানবীয় হাসিনার ফ্যাসিবাদ হটাতে বুক পেতে দিয়েছিল। সেই বীর লড়াকু ছাত্র-জনতা-আগামীতে এই দেশে কোনো ফ্যাসিবাদ তৈরি হতে দেবে না।’
দলীয় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে নুরুল হক বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে জনগণকে সচেতন করা, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং পরিবর্তনের জন্য গণ অধিকর পরিষদের বার্তাকে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া।’ গণ অধিকার পরিষদ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে উল্লেখ করে তিনি মানুষের বিকল্প আশাআকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিটি আসনে নেতা–কর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।
গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন না হলে আজকের এই বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতন হতো না। ২৪ সালের গণ-অভুত্থ্যান এই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু আমাদের ভাইয়েরা নতুন বন্দোবস্তকারীরা আজকে সেটি অস্বীকার করে।’
এদিকে অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে দাঁড়ানো নিয়ে নেতা–কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ম ম ওসম ন ন র য়ণগঞ জ ন র ল হক
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।
রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি
ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।
যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।
কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী