যুক্তিতর্কের বালাই না রেখে পুরো নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনই কেন বাতিল করার চক্রান্ত করা হচ্ছে, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন পেশার ২২ জন গুরুত্বপূর্ণ নারী। আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, যার যার যে প্রস্তাবে আপত্তি আছে, সে প্রস্তাব নিয়ে তর্কবিতর্ক দেশের গণতন্ত্রায়ণের জন্য জরুরিও বটে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ, নৃবিজ্ঞানী নাসরিন সিরাজ, সাংবাদিক সাদিয়া গুলরুখ, মানবাধিকার আইনজীবী তাবাস্‌সুম মেহেনাজ ও ইশরাত জাহান, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী লায়েকা বশীর, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন সংগঠক সুলতানা বেগম, পরিবেশ আন্দোলনকর্মী সৈয়দা রত্না, থিয়েটারকর্মী নাজিফা তাসনিম খানম তিশাসহ অধিকারকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশায় থাকা ২২ নারী।

বিবৃতিতে এই নারীরা বলেন, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন নারীবান্ধব প্রস্তাব পেশ করবে, সেটিই প্রত্যাশা এবং সেটিই উচিত। একটি কমিশনের সব প্রস্তাব সবার কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হবে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। যার যার যে প্রস্তাবে আপত্তি আছে, সে প্রস্তাব নিয়ে তর্কবিতর্ক দেশের গণতন্ত্রায়ণের জন্য জরুরিও বটে। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, কেবল নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয় এলেই একদল যেন দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’

বিবৃতিতে প্রশ্ন রেখে বলা হয়, ‘নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে কি তাদের খুব অসুবিধা হবে? তারা কি এই সমাজের বাইরে? যুক্তিতর্কের বালাই না রেখে তারা পুরো কমিশন বাতিল করতে চায়। এই হীন চক্রান্ত কেন?’

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেন, নারীকে হেয়প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে নারীর প্রতি তারা যে আজন্ম ঘৃণা, হিংস্রতা ও নিপীড়নের মনোভাব লালন করে; সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের বক্তব্যে নারীদের নোংরাভাবে উপস্থাপন করে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত চিন্তা, চেতনা ও রাজনৈতিক সংকীর্ণতাও প্রকাশ করছে।

বিবৃতিতে বিস্ময় প্রকাশ করে বলা হয়, নারীর প্রতি এই অসম্মান নিয়েই এরা রাষ্ট্র পরিচালনার স্বপ্নও দেখে। দেশের ৫১ শতাংশ নারীকে বাদ দিয়ে অথবা পদদলিত করে সরকার গঠনের দিবাস্বপ্ন কতটা অমূলক, সেটি বোঝার বোধবুদ্ধি পর্যন্ত তারা হারিয়েছে।

আরও পড়ুননারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও প্রতিবেদন বাতিলের দাবি১ ঘণ্টা আগে

চিৎকার করে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া যায় না উল্লেখ করে বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেন, সৎসাহস থাকলে নারী কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে কোথায়, কেন তাদের আপত্তি; সেটি নিয়ে তারা কথা বলতে পারে। রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ কোনো ছেলের হাতের মোয়া নয় যে কেউ অন্যায়ভাবে হুংকার দেবে আর ভয় পেয়ে পুরো কমিশন বাদ দিয়ে দিতে হবে।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, চরমপন্থী হুমকির মুখেও নারীর অধিকার সংশোধন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে—রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জনসমক্ষে এ মর্মে ঘোষণা দিতে হবে।

এ ছাড়া ঘৃণা ও হুমকি উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেন, ‘নারী কমিশনের প্রত্যেক সদস্য দীর্ঘদিন ধরে দেশের সাধারণ নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নেতৃস্থানীয় নারীদের অশালীন বাক্যে গালমন্দ করা আমরা কিছুতেই মেনে নেব না।’

আরও পড়ুননারীবিষয়ক কমিশন বাতিলসহ সব দাবি না মানলে দেশ অচলের হুঁশিয়ারি হেফাজতের৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ক ষরক র ন র ব ষয়ক প রস ত ব

এছাড়াও পড়ুন:

জনগণের বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার পতন হবে না: সাকি

এই মুহূর্তে ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘জনগণের বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার পতন হবে না।’ তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ থাকলে বাংলাদেশের শ্রমিক, কৃষক, কর্মচারী, নারী, জাতিগত বা ধর্মীয় নিপীড়িত মানুষের কোনো দাবি আদায় হবে না।

গণসংহতি আন্দোলনের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন জোনায়েদ সাকি। শুক্রবার বেলা তিনটার পর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলটির তিন দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করা হয়।

কোনো একক দলের পক্ষে শেখ হাসিনার কায়েম করা ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বদল সম্ভব না বলে মনে করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা নির্বাচনী গণতন্ত্রের কথা বলছি। কিন্তু এই নির্বাচনী গণতন্ত্র যদি খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার রক্ষার গণতন্ত্রে পরিণত হতে না পারে, তাহলে এই গণতন্ত্র টেকে না। সে কারণে আমরা রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি, দেশের সামাজিক ব্যবস্থা, দেশের সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা—সবকিছু পরিবর্তনের জন্য লড়াই করেছি।’

মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার কথা উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, সে জন্য দেশের বিদ্যমান রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলাই এখন প্রধান কর্তব্য বলে মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আজকে এমন একটা লক্ষ্য নিয়ে সামনে যাচ্ছে, কোনো কিছুই আর তাকে পিছুটান দিতে পারবে না। সেই পিছুটান যারা দেবে, যারা কোনো না কোনোভাবে, অন্য কোনো নামে কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করতে চাইবে, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো তৈরি করতে চাইবে, তাদের এ দেশের জনগণ আর গ্রহণ করবে না। কাজেই এ দেশে জাতীয়তাবাদের নামে যেমন ফ্যাসিবাদ চলবে না, কোনো মতবাদ দিয়ে কোনো ফ্যাসিবাদ এ দেশে গ্রহণযোগ্য হবে না।’

‘গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য বিচার, সংস্কার, নির্বাচন—সবকিছুই অপরিহার্য’ উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া আমাদের রাজনৈতিক উত্তরণ হবে না।’ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো বিরোধ তৈরি না করে জুলাই জাতীয় সনদ কার্যকর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

‘আজকে যে সংকট তৈরি করেছে এই অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন, আমি বিশ্বাস করি যে এই সংকট কেটে যাবে। এ দেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয় না। পরাজয় বরণ করেনি, পরাজয় বরণ করবে না।’বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

এই অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে যে সংকট তৈরি করেছে এই অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন, আমি বিশ্বাস করি যে এই সংকট কেটে যাবে। এ দেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয় না। পরাজয় বরণ করেনি, পরাজয় বরণ করবে না।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মৌলিক শাসনতান্ত্রিক কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে এবং মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা, স্বৈরতন্ত্র তৈরির সাংবিধানিক কাঠামোর পরিবর্তন করতে হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অনেক সময় চরম বুদ্ধিমান মানুষেরা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেয়; জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবার সেই পরিচয়টা দিয়েছে। তারা এখন বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে। এর চেয়ে কষ্টকর, দুঃখের, লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।

শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলনের সূচনা করেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানা এবং শহীদ ওমর নুরুল আবছারের স্ত্রী ফারজানা জাহান। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই জুলাই শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা প্রমুখ।

কৃষক-শ্রমিক, খেটে খাওয়া, নিপীড়িত ও প্রান্তিক মানুষের ন্যায্য হিস্যার দাবি এবং ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ, অধিকার ও মর্যাদার বাংলাদেশ, জনগণের বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকারে গণসংহতি আন্দোলন তাদের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন করছে। তিন দিনের এই আয়োজনে সারা দেশ থেকে আসা প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকেরা দলের আগামী নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমার বিধান প্রশ্নে রুল
  • আপিল বিভাগের বিচারকাজ পর্যবেক্ষণ করলেন নেপালের প্রধান বিচারপতি
  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • গণতন্ত্রের পথে সংকট দেখছেন তারেক
  • খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন স্থগিত
  • বোয়েসেলে বিভিন্ন গ্রেডে নিয়োগ, পদসংখ্যা ১৪
  • এখন দেখছি নতুন প্রতারকের জন্ম হয়েছে: কায়সার কামাল
  • ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি ডলার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এখন জাতির দাবি
  • জনগণের বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার পতন হবে না: সাকি