জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে, এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করা, যেখানে মানুষ গুম-খুনের শিকার হবেন না৷ নিজস্ব বিশ্বাসের কারণে নিপীড়নের শিকার হবেন না। কোনো নাগরিকই নিপীড়িত হবেন না৷ জনগণের একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণের চেষ্টা করছি। 

বুধবার (৭ মে) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড.

বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

আলোচনার সূচনায় জাতি, রাষ্ট্র এবং জনগণের স্বার্থকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আশা ব্যক্ত করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব আদর্শিক পরিকল্পনা থাকে৷ তারপরও মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে একটি রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মাণের সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে৷ 

তিনি আরো বলেন, এ দেশের জনগণের চাওয়া হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা৷ কেবল কমিশনের আনুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য গড়ে উঠবে, তা আমি মনে করি না৷ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় সনদ তৈরি করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। 

গত ১০ এপ্রিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে তাদের মতামত জমা দেয়৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে দলটির সঙ্গে আজ আলোচনায় বসে কমিশন৷ 

আলোচনায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদের নেতৃত্বে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী ও মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী মুহাম্মদ আশরাফুল আলমসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। 

ঢাকা/এএএম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণত ন ত র ক র ষ ট র ঐকমত য

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থানের ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এর সমাধানের জন্য দলীয় স্বার্থের বাইরে এসে জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ঐকমত্যে আসতে হবে। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব রয়েছে ঐকমত্যে আসার, অন্যদিকে যেহেতু সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল একটি গণতান্ত্রিক উপায়ে ঐকমত্য সৃষ্টির, তাই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কাজটি সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে শেষ করতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী দাবিদাওয়া সামনে আনবে, সেটা অনুমেয়। কিন্তু ন্যূনতম প্রত্যাশা ছিল যে তারা কিছু সংস্কারের প্রশ্নে ঐকমত্যে আসবে। এখন তারা যদি দলীয় স্বার্থের জায়গাগুলো ছাড়তে রাজি না হয়, তাহলেও সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, তা যত কঠিনই হোক না কেন। কতগুলো বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে রেখেছে। এগুলো বাদ দিয়ে জোর করে চাপিয়ে দিয়ে সংস্কারকাজ সম্পন্ন হবে ভাবলে তা–ও আসলে টেকসই হবে না।

আরও পড়ুনঐকমত্য না হলে দেশে টালমাটাল অবস্থা তৈরি হবে৩ ঘণ্টা আগে

আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে আসা উচিত। আবার একই সঙ্গে মনে করি, গণভোটের মধ্য দিয়ে আরও বড় বিভাজনও তৈরি হতে পারে। সেই বিভাজন নিয়ে জাতি কীভাবে সামনে এগোবে, সেটা বলা কঠিন।

জুলাই সনদে অনেক ভালো ভালো বিষয় রয়েছে। আবার অনেক ভালো ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব বাদ পড়েছে। একটা সফল গণভোট হতে হলে শুধু ভোট সম্পন্ন করলেই হবে না, প্রতিটি বিষয় নিয়ে জনসচেতনতা থাকতে হবে। এখানে মানুষ যে ‘হ্যাঁ’-‘না’ ভোট দেবে, অনেকেই জানবে না কে কী কারণে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিচ্ছে।

গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে যে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে, মানুষ এ থেকে মুক্ত হতে চায় একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাটাও সরকারের দায়িত্ব।

অন্তর্দলীয় সংঘাত ও অন্য দলের সঙ্গে সংঘাত—এই ঘটনাগুলো সমাধান করতে হবে সংলাপের মাধ্যমে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

আরও পড়ুনযেটা ৮ মাসে হয়নি, সেটা ৮ দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে৩ ঘণ্টা আগে

নির্বাচনে সাধারণ মানুষকে যদি ভয় দেখানো হয়, তারা যদি ভোটকেন্দ্রে যেতে না চায়, এর দায় সরকারের ওপরই বর্তায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো এখন থেকেই এ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে একটা ম্যাপিং করতে পারে যে কোথায় কোথায় সংঘাত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল ঠিক করা যেতে পারে।

আরও পড়ুনসবাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছি২ মিনিট আগে

গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ যে পরিমাণ আত্মত্যাগ করেছে, এখন তাদের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন দলের মধ্যে কিছু অসহিষ্ণুতা দেখতে পাচ্ছি। নানা ধরনের মব আক্রমণ চলছে, কিন্তু শাস্তি হচ্ছে না। মেহনতি মানুষের দাবিদাওয়াকে সরকার গণ্য করছে না। এগুলো মানুষের মধ্যে অস্থিতিশীলতার অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। আবার এই মব আক্রমণকে জায়েজ করছেন অনেকে। শিশু-কিশোরদেরও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জেলে রাখা হয়েছে। অনেক অমানবিক ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতি মোটেই কাম্য নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে বিষয়গুলো আলোচনাতেই আসে নাই, সেগুলোও ঢুকিয়েছে ঐকমত্য কমিশন: সেলিমা রহমান
  • অন্তর্বর্তী সরকার কেন জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু করতে পারল না
  • নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে কিছু থিঙ্কট্যাংক বলছে, জুলাই সনদে নারী, কৃষক, শ্রমিক নেই: প্রেস সচিব
  • মতৈক্য হবে না, কারণ দলগুলো বিভিন্ন মহলের স্বার্থ দেখে: ফরহাদ মজহার
  • ঐকমত্যের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই: আমীর খসরু
  • জুলাই সনদ ও নোট অব ডিসেন্টের রাজনীতি
  • ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে
  • ‘জাতীয় ইস্যুতে সর্বদলীয় ঐকমত্য জরুরি’
  • ঐকমত্য না হলে দেশে টালমাটাল অবস্থা তৈরি হবে
  • যেটা ৮ মাসে হয়নি, সেটা ৮ দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে