ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অস্ত্রবিরতি ঘোষণা ও কার্যকর হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারতীয় সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা গত কয়েকদিনের সংঘর্ষে পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে পেরেছে।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে গত কয়েকদিন ‘অনেক মিথ্যা ও ভুয়া খবর প্রচার’ করা হয়েছে বলে অভিযোগও তুলেছে তারা।

সামরিক বাহিনীর বিশেষ বৈকালিক ব্রিফিংয়ে এই প্রথমবারের মতো ভারতীয় নৌবাহিনীর এক সিনিয়র অফিসার হাজির হয়েছিলেন।

নৌবাহিনীর সেই কর্মকর্তা কমোডর রঘু নায়ার বলেন, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছে, সেই নির্দেশ তিন বাহিনীই পালন করবে। তবে বাহিনীগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত ও সজাগ আছে।

‘পাকিস্তানের তরফ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তা শক্তি দিয়ে রোখা হয়েছে বা ভবিষ্যতেও যদি আবারও উত্তেজনা বাড়ে, সেক্ষেত্রেও উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। রাষ্ট্র রক্ষা করতে যে কোনো প্রয়োজনীয় সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত আছি,’ বলেন কমোডর নায়ার।

সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ‘ব্যাপকহারে মিথ্যা তথ্য’ ছড়ানো হয়েছিল।

‘ভারতীয় বিমান ও স্থল বাহিনীর যেসব স্থাপনা তারা ধ্বংস করতে বা ক্ষতি সাধন করতে পেরেছে বলে দাবি করেছিল, সে সবই ভুয়া দাবি,’ বলেছেন কর্নেল কুরেশি।

অন্যদিকে পাকিস্তানের সেনা ও বিমানবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পেরেছে বলে ভারতীয় সামরিক বাহিনী দাবি করেছে।

বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং বলেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বারবার সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে ভারতীয় বাহিনী নাকি সে দেশের মসজিদ নিশানা করে আক্রমণ করেছে।

‘স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং ভারতের সামরিক বাহিনীগুলো সাংবিধানিক মূল্যবোধের প্রতিফলন। তারা প্রতিটা ধর্মীয় উপাসনালয়কে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে থাকে। আমাদের অপারেশনগুলোর একমাত্র লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসীদের শিবিরগুলো এবং যেসব স্থাপনাকে ভারতবিরোধী কাজের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল সেগুলো। কোনো ধর্মীয় স্থান ভারতীয় বাহিনীর নিশানায় ছিল না,’ বলেন উইং কমান্ডার সিং। সূত্র: বিবিসি

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসংহতি আন্দোলনের ১১ দফা প্রস্তাব

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ১১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) স্বাধীন ও শক্তিশালী করা, ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর হাতিরপুলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন দলটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। প্রস্তাবে অর্থনীতির উৎপাদনশীল রূপান্তরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির বিকাশ, বখরাতন্ত্রের বিদায় এবং কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে তরুণদের শ্রম ও মেধাকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কাজে লাগানোর কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক খাত পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট আইনগত ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়।

প্রস্তাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী সংস্থায় পরিণত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দুদককে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপমুক্ত তদন্তের সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য পর্যাপ্ত বাজেট, প্রযুক্তি ও জনবল নিশ্চিত করতে হবে।

আর্থিক খাত নিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইনসহ আর্থিক খাতের সব আইন সংস্কার করতে হবে। এ খাতে জমিদারিসুলভ কর্তৃত্বের অবসান ঘটাতে হবে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক বরাদ্দ বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে স্বাধীনভাবে অডিট নিষ্পত্তি এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরির বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে শাস্তির বিধান করতে হবে।

টেন্ডার ও ক্রয়প্রক্রিয়ায় ই-টেন্ডার বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়ে গণসংহতি আন্দোলন বলেছে, ক্রয়সংক্রান্ত সব তথ্য ওপেন ডেটা পোর্টালে প্রকাশ করতে হবে এবং বড় প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অডিট ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়, পদোন্নতি ও বদলি হতে হবে মেধা ও কর্মদক্ষতা অনুযায়ী। দুর্নীতির অভিযোগে সুস্পষ্ট শাস্তির বিধান করতে হবে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিচারক ও জনপ্রতিনিধিদের (স্ত্রী-সন্তানসহ) সম্পদের বিবরণ দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলন বলেছে, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন ছাড়া অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের নামে তথ্য গোপন করার আইন বাতিল করতে হবে। সরকারি কাজের তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে এবং নাগরিক সমাজকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে হবে।

সেবা প্রদান ডিজিটাল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রস্তাবে বলা হয়, লাইসেন্স, অনুমোদন ও জমি রেজিস্ট্রির মতো সেবা ডিজিটাল করতে হবে। ঘুষ নেওয়ার সুযোগ কমাতে মানবসম্পৃক্ততা হ্রাস করতে হবে এবং নাগরিক সেবাকেন্দ্রগুলোতে এক টেবিল সেবা চালু করতে হবে। দুর্নীতি সম্পর্কে তথ্যদাতাকে আইনগত সুরক্ষা দেওয়ার প্রস্তাবও করেছে দলটি। বলা হয়েছে, তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রেখে তদন্ত করতে হবে এবং তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় আইন বদলে, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদলে, ইনডেমনিটি দিয়ে দুর্নীতির দ্বার অবারিত করা হয়। টাকা পাচার সব রেকর্ড অতিক্রম করে। এতে আরও বলা হয়, খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়, যার সঙ্গে অবলোপণকৃত ও পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ যুক্ত হলে এটি দাঁড়ায় চার লাখ কোটি টাকা।

প্রস্তাবে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর জনগণের ভেতরে আশার সঞ্চার হয়েছিল—লুণ্ঠনকারীদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে, পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলটি মনে করে, দুর্নীতি রোধে সরকার প্রশাসনের সব স্তরে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, এমন আশা থাকলেও কার্যত এসব বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি ঘটেনি।

এ ছাড়া বিচারব্যবস্থা সংস্কার করে আদালতকে রাজনৈতিক চাপমুক্ত রাখা, বড় দুর্নীতির মামলা পৃথক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পরিচালনা করা এবং সাইবার ফরেনসিক ও আর্থিক তদন্তে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সব সরকারি অফিসে নাগরিকের হয়রানিমুক্ত সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে অভিযোগ বক্স চালু এবং তার দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থার কথাও বলা হয়। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় নৈতিকতা ও দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে দুর্নীতিকে সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য করে তোলার প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি।

গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য জুলহাসনাইন বাবুর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, মনিরুল হুদা, আমজাদ হোসেন, গোলাম মোস্তফা, জাহিদ সুজন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ