আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় প্রতিক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই নির্লজ্জ খুনি, গণতন্ত্রবিরোধী ও দুর্নীতিগ্রস্ত দলের পক্ষে কখনো কথা বলবে না বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বাসসের করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব আজ রোববার এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে বিশ্বের কোনো দেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় তাতে দুঃখ প্রকাশ করবে।’

শফিকুল আলম আরও বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন ছিল।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘এর আগে আমরা দেখেছি, শুধু কোনো দলের কার্যক্রমই নয়, বরং সম্পূর্ণ রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও, যখন তারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে বা জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।’

শফিকুল আলম বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানি ও ইতালি নাৎসি ও ফ্যাসিস্ট দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে। এ ছাড়া স্পেন ও বেলজিয়ামে কিছু দলকে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রমের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) প্রতিবেদন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ও দলের কর্মী-সহযোগী সংগঠনগুলো মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য অপরাধে অংশগ্রহণ করেছে।

শফিকুল আলম বলেন, দলটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ব্যাপক ধ্বংস সাধন করেছে। আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকেরা ব্যাংকগুলো লুটে নিয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, গণতান্ত্রিক বিশ্বে এমন কোনো পক্ষ নেই, যারা নির্লজ্জ এই খুনি, গণতন্ত্র বিরোধী ও দুর্নীতিগ্রস্ত দলের পক্ষে কথা বলবে।

শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘সুতরাং আমরা আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো নেতিবাচক আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আশা করি না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ন ষ দ ধ কর আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

নেতৃত্ব কেন উদাসীন থাকবে

সম্প্রতি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত গণতন্ত্র শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন।

যেকোনো রাজনৈতিক দল পরিচালিত হয় গঠনতন্ত্র ও নীতি-কর্মসূচির ভিত্তিতে। কিন্তু আমাদের নেতা-নেত্রীরা দেশবাসীকে গণতন্ত্রের সবক দিতে যতটা উদ্‌গ্রীব, দলের গণতন্ত্রায়ণ নিয়ে ততটাই উদাসীন। তারেক রহমানের এ বক্তব্যে যদি সেই উদাসীনতা কাটানোর সদিচ্ছা প্রকাশ পায়, আমরা স্বাগত জানাই।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। এর বাইরে অনেক অনিবন্ধিত দল আছে, যারা নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। আশা করি, নির্বাচন কমিশন দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকুক আর না-ই থাকুক, তাদের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। তারা যে জনগোষ্ঠীর সমর্থন চায়, তাদের আস্থা অর্জন করতে হয়। মানুষ দলটির নীতি-আদর্শের পাশাপাশি নেতৃত্ব গঠনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও দেখতে চাইবে। বিশেষ করে দলটি গণতান্ত্রিক রীতিনীতি কতটা মেনে চলছে, সেসব বিষয়ে তাদের আগ্রহ থাকা অস্বাভাবিক নয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর উপস্থিতি কম থাকায় এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন প্রতিটি দলের সব স্তরের কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেয়, যা ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু কোনো দলই সেই শর্ত পূরণ করেনি। বাংলাদেশে কিছু দল আছে, তারা নারী নেতৃত্বের ঘোর বিরোধী। তারা কমিটিতে নারীর উপস্থিতি দেখতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেসব দল দশকের পর দশক নারী নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে, সেসব দলও এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা নেই। এ কারণে কোনো দলের কোনো স্তরে ১০ শতাংশ নারী নেতৃত্বের দেখা পাওয়া যায় না। এই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন বাধ্য হয়ে ২০২০ সালের বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়।

যে রাজনৈতিক দল জনগণকে নেতৃত্ব দেবে, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, তাদের কর্মকাণ্ডে কেন জবাবদিহি থাকবে না। একনায়ক পদ্ধতিতে দল পরিচালিত হওয়ার পরিণাম কতটা বিপজ্জনক হয়, তার প্রমাণ আমরা নিকট অতীতে কিংবা তারও আগে বহুবার পেয়েছি। তারপরও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মানসিকতার দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে দলে গণতন্ত্রায়ণের কথা বলেছেন, সেটি সব রাজনৈতিক দলের জন্যই প্রযোজ্য। প্রতিটি দল পরিচালিত হতে হবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। সেই সঙ্গে যেসব দলের গঠনতন্ত্রে দলীয় প্রধানকে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা পরিবর্তন করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও দলে গণতন্ত্রায়ণের বিষয়টি সামনে আসে। কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক দলের গণতন্ত্রায়ণের জন্য আলাদা কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ মুহূর্তে সেই সুযোগ না থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতৃত্ব গঠনের কাজটি এগিয়ে নেওয়া।

বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা যখন দলে গণতন্ত্র সংহত করার কথা বলেছেন, তখন সেই দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা কতটা মজবুত, দলটির নেতৃত্বের উচিত সেটা খতিয়ে দেখা। বিএনপির তৃণমূল স্তরে যে নানা রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে, তার জন্য নেতৃত্ব গঠনের দুর্বলতাও কম দায়ী নয়। যে দলটি ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দিতে চাইছে, সেই দলটির নেতৃত্ব দলের গণতন্ত্রায়ণের বিষয়ে উদাসীন থাকতে পারে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের ‘তরুণকম্পের’ সম্ভাবনা ও ঝুঁকি
  • গণতন্ত্রে উত্তরণে আমরা কেন বারবার হোঁচট খাচ্ছি
  • জুলাই সনদে এক বিন্দু ছাড় নয়: নাহিদ
  • নেতৃত্ব কেন উদাসীন থাকবে
  • ইসি অভিযান থেকে রাহুলদের আটক, পরে ছেড়ে দিল পুলিশ