জাবির গাঁজা সেবনকালে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীসহ আটক ৪
Published: 25th, May 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে গাঁজা সেবনরত অবস্থায় সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীসহ চার শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের ৫০তম ব্যাচের হৃদয় ইসলাম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের একই ব্যাচের রাইসুল রুবাই, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৯ ব্যাচের কিরন সূত্রধর হিমু ও তন্ময় চন্দ্র রায়।
রবিবার (২৫ মে) দুপুর ২টার দিকে হলের ২৫৫/বি কক্ষে গাঁজা সেবনরত অবস্থায় তাদের আটক করেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান। এ সময় হলের নিরাপত্তা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
ফুলের রাজ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশালে মেডিকেল ছাত্রের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার
হলের ২৫৫/বি কক্ষের বসবাসকারী শিক্ষার্থী হৃদয় ইসলাম ও রাইসুল রুবাই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তারা দুইজনই মীর মশাররফ হোসেন হলের অবৈধ ছাত্র। তবে হৃদয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক ছাত্র। রাইসুল রুবাই ওই কক্ষে সিট দখল করে রাখলেও থাকেন অন্য হলে। তিনি ছাত্রলীগের রাজনাীতি করার সময় গণরুমে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করতেন। অভিযুক্ত হৃদয় দুইজনের রুমে একাই থাকতেন এবং নিয়মিত গাঁজার আসর বসাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্ত অন্য দুইজন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের কিরন সূত্রধর হিমু ও তন্ময় চন্দ্র রায় আল বেরুনী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নামাজ পড়ে হলের বারান্দা দিয়ে যাওয়ার সময় তারা গাঁজার গন্ধ পান। এ সময় দরজায় কয়েকজন নক করলে ভেতর থেকে সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে হলের প্রাধ্যক্ষ স্যারকে ডাকলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে গাঁজা সেবনরত অভিযুক্তদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গাঁজার সোর্স সম্পর্কে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা সত্ত্বেও তাদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হৃদয় বলেন, “আমি গত পরশুদিন ঢাকা থেকে আসার পথে গাঁজা নিয়ে আসি। আজ আমি বাড়ি চলে যেতাম। তাই ভাইদের মেসেজ দিয়ে আসতে বলি, পরে তারা আসেন। হল প্রশাসনের মাদকবিরোধী জিরো টলারেন্সের নীতি আমি জানতাম। আমার ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।”
অভিযুক্ত কিরন সূত্রধর হিমু গাঁজা খাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “হৃদয়ের সঙ্গে আমার পূর্বপরিচয় ছিল না। আজ তন্ময়ের সঙ্গে বটতলায় আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন তন্ময়ের সঙ্গে হৃদয়ের কক্ষে আসি।”
অভিযুক্ত তন্ময় চন্দ্র রায় দোষ স্বীকার করে বলেন, “বেলা ১১টার দিকে আমাকে হৃদয় হলে গাঁজা খেতে আসতে বলে। পরে আমি আর হিমু হলে আসি।”
মীর মশাররফ হোসেন হলে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স উল্লেখ করে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, “হৃদয়কে শোকজ করা হবে এবং তাকে আজ বিকেলের মধ্যে হল ত্যাগ করতে বলেছি।”
তিনি বলেন, “এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস বরাবর অভিযোগপত্র দেব। যেহেতু সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী, তাই ওই হলের প্রাধ্যক্ষকেও অবহিত করব।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫