চট্টগ্রাম মেডিকেলে মাতৃমৃত্যু জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি
Published: 28th, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মাতৃমৃত্যুর হার দেশের গড়ের চেয়ে বেশি। চলতি ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত হাসপাতালে ৬ হাজার ৩৫৫ জন প্রসূতির মধ্যে মারা গেছেন ১৯ জন। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮৩ এবং ২০২৩ সালে ৭৫ জন।
গত বছরের ২ এপ্রিল চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক রোকসানা আক্তার (৩২)। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিনি তিনটি সন্তান জন্ম দেন। এর মধ্যে একটি ছেলে নবজাতক মারা যায়। অস্ত্রোপচারের পর থেকেই রোকসানার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। রক্তক্ষরণ থামানো যায়নি। পরে আরও দুবার অস্ত্রোপচার করা হলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। ৪ এপ্রিল ভোররাতে তিনি মারা যান।
রোকসানার স্বামী মো.
চমেক হাসপাতালে প্রতিবছরই এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি এক লাখ জীবিত সন্তানের জন্মে ১৫৩ জন মায়ের মৃত্যু হয় (২০২৩ সালের হিসাব)। ২০২১ সালে এ হার ছিল ১৬৮।
চমেক হাসপাতালের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত হাসপাতালে ৬ হাজার ৩৫৫ প্রসূতির মধ্যে মারা গেছেন ১৯ জন, যা প্রতি লাখে প্রায় ৩০০ জনের কাছাকাছি। ২০২৪ সালে ২১ হাজার ৭৭ জন প্রসূতির মধ্যে মারা যান ৮৩ জন—প্রতি লাখে যা ৩৯৪। ২০২৩ সালে ২২ হাজার ৯৮৭ জন প্রসূতির মধ্যে মারা যান ৭৫ জন—প্রতি লাখে ৩২৭ জনের মতো।
চমেক হাসপাতালের ৩৩ নম্বর প্রসূতি ওয়ার্ডে শয্যা আছে ৭০টি; কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ২০০ জনের বেশি রোগী থাকেন। দিনে গড়ে ৪০টির বেশি অস্ত্রোপচারে এবং ৫০টির বেশি স্বাভাবিক প্রসব হয়। রোগীর চাপ বেশি থাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।চমেক হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ফাহমিদা আখতার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে প্রসূতি মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো রক্তচাপ বেড়ে অ্যাকলাম্পশিয়ার জটিলতা এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। অনেকেই শেষ সময়ে হাসপাতালে আসেন। ফলে তাঁদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।’
আরও পড়ুনসন্তান জন্মে অস্ত্রোপচারে ১৬ মায়ের মৃত্যু ২৯ মার্চ ২০২৪আজ ২৮ মে পালিত হচ্ছে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘মাতৃস্বাস্থ্যসেবায় সমতা: কোনো মাকে পেছনে না রেখে’।
চিকিৎসকদের মতে, ঘরে প্রসবের চেষ্টা, দেরিতে হাসপাতালে আসা এবং অবহেলার কারণে রোগীর অবস্থা জটিল হয়। অনেক প্রসূতি শেষ সময়ে চমেক হাসপাতালে আসেন, যখন তাঁদের অবস্থা সংকটাপন্ন থাকে।
চমেক হাসপাতালের ৩৩ নম্বর প্রসূতি ওয়ার্ডে শয্যা আছে ৭০টি; কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ২০০ জনের বেশি রোগী থাকেন। দিনে গড়ে ৪০টির বেশি অস্ত্রোপচারে এবং ৫০টির বেশি স্বাভাবিক প্রসব হয়। রোগীর চাপ বেশি থাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এই সংক্রমণও মাতৃ ও নবজাতকের মৃত্যুর একটি কারণ বলে উল্লেখ করে চিকিৎসকেরা।
এখানে প্রসূতি মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো রক্তচাপ বেড়ে অ্যাকলাম্পশিয়ার জটিলতা এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। অনেকেই শেষ সময়ে হাসপাতালে আসেন। ফলে তাঁদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েঅধ্যাপক ফাহমিদা আখতার চৌধুরী, বিভাগীয় প্রধান, প্রসূতি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালহাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইনফেকশন (সংক্রমণ) কমাতে হলে শয্যার বাইরে রোগী রাখা যাবে না; কিন্তু আমাদের পরিস্থিতি এমন যে বারান্দা, মেঝে এমনকি বাথরুমের সামনেও রোগী রাখতে হয়। একজন রোগীর সঙ্গে দু-তিনজন করে স্বজন আসেন। হাইজিন বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।’
২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১২৩। চমেক হাসপাতালের হার তার তুলনায় অনেক বেশি।
আরও পড়ুনঅপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারে ১০ লাখ শিশুর জন্ম ১২ এপ্রিল ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)