নাগরিকত্ব নিয়ে মামলা ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন হলেও আসাম রাজ্যের এক সরকারি স্কুলের সাবেক শিক্ষককে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খায়রুল ইসলাম নামের ৫১ বছর বয়সী ওই সাবেক স্কুলশিক্ষকের স্ত্রী ও কন্যা এই অভিযোগ করেছেন।

বাংলাদেশি নাগরিক ‘দাগিয়ে’ এভাবে জবরদস্তি ‘পুশ ব্যাক’ নীতির বিরোধিতা করে আসামের বিরোধী দল এআইইউডিএফের এক প্রতিনিধিদল গতকাল বুধবার রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্যের সঙ্গে দেখা করে ‘পুশ ব্যাকের মাধ্যমে অমানবিক আচরণ’ বন্ধের দাবি জানিয়েছে।

ভারতের জাতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ওই প্রতিনিধিদলের নেতা বিধায়ক আমিনুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেপ্তার ১৪ জনকে সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হলেও বাংলাদেশ তাদের গ্রহণ করেনি। ফলে তাঁরা নো ম্যানস ল্যান্ডে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। এই আচরণ অমানবিক।

খায়রুল ইসলাম নাগরিকত্ব মামলায় জড়িত। ২০১৬ সালে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তাঁকে বিদেশি ঘোষণা করার পর তিনি রায়ের বিরুদ্ধে গুয়াহাটি হাইকোর্টে মামলা করেন। ২০১৮ সালে হাইকোর্ট ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখেন। এরপর তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।

২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, বিদেশি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে যাঁরা দুই বছরের বেশি কারাগারে রয়েছেন, তাঁদের জামিনে মুক্তি দিতে হবে। সেই রায়ের পর খায়রুল জামিন পান।

খায়রুলের আইনজীবী অভিজিৎ রায় গণমাধ্যমকে বলেন, মামলাটি এখনো সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। শেষ শুনানি হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মক্কেলকে জবরদস্তি পুশ ব্যাক করা হয়েছে। রাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ শুধু বেআইনিই নয়, অসাংবিধানিকও।

খায়রুলের স্ত্রী রীতা খানম ও কন্যা আফরিন জানিয়েছেন, খায়রুলের এ অবস্থা তাঁরা জানতে পারেন ২৭ মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড হওয়া এক ভিডিও থেকে। ওই ভিডিওতে এক বাংলাদেশি সাংবাদিক দাবি করেন, খায়রুল ইসলাম বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার বড়াইবাড়ি সীমান্তের কাছে রয়েছেন।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, খায়রুল তাঁর পরিচয় জানিয়ে বলছেন, তিনি মরিগাঁও জেলার খান্দা পুখুরি গ্রামের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক।

রীতা খানম ও আফরিনের অভিযোগ, ২৩ মে পুলিশ খায়রুলকে বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত ব্যক্তিদের রাখার জন্য তৈরি মাটিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে। সেখান থেকে ২৭ মে হাত-পা ও চোখ বেঁধে তাঁকে একটি বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য।

এআইইউডিএফের প্রতিনিধিরা রাজ্যপালকে বলেছেন, এভাবে বহু মানুষকে রাজ্যে আটক করা হচ্ছে। পুশ ব্যাক করা হচ্ছে। রাজ্যে একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

খায়রুল ইসলামের বর্তমান অবস্থান ও তাঁর পরিবারের অভিযোগ নিয়ে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বা রাজ্য সরকার এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

এর আগে গত মঙ্গলবার বিএসএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, ২৭ মে আসামের দক্ষিণ সালমারা-মানকাচর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন বাংলাদেশের কিছু নাগরিক। বিএসএফ চ্যালেঞ্জ জানালে তাঁরা ফিরে যান। বিএসএফের ওই বিবৃতিতে অবশ্য খায়রুল ইসলামের নাম বা তাঁর অবস্থান নিয়ে কিছু ছিল না।

দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, পেহেলগামের ঘটনার পর রাজধানী দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে মোট ৪৭০ জনকে ‘বাংলাদেশি’ চিহ্নিত করে সে দেশে পাঠানো হয়েছে। গত ছয় মাসে এভাবে ফেরত পাঠানো হয়েছে ৭৭০ জনকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এসএফ

এছাড়াও পড়ুন:

বিএসএফের গুলিতে আহত বাংলাদেশির ১৩ দিন পর মৃত্যু

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আহত নাসির উদ্দিন (৪০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন।  বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাত দেড়টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।

মহেশপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, “১৩ দিন আগে শ্যামকুড় এলাকায় বিএসএফের গুলিতে নাসির আহত হন। বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু হয়। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।”

নিহত নাসির উদ্দিন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে।  

আরো পড়ুন:

খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে আরো ১৪ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ

সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আরো ১৬ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ মে (শনিবার) রাতে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের শ্যামকুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ঘাট দিয়ে নাসির উদ্দিনসহ কয়েকজন বাংলাদেশি ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে নাসির উদ্দিন আহত হন। স্বজনর সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে গোপনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। আহত হওয়ার ১৩ দিন পর বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, নাসিরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলেননি। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি আড়াল করে রাখা হচ্ছে।

মহেশপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, “বিষয়টি জানার পর আমরা ঘটনাস্থলে বিজিবি সদস্য পাঠিয়েছি। পরিবারের কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি বা গুলির বিষয়টি স্বীকার করেনি। গত ১৭ মে তারিখে সীমান্তে একটি ঘটনা ঘটেছিল।” 

গত এপ্রিল মাসে একই সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে আরো দুই বাংলাদেশি নিহত হন। ১১ এপ্রিল বাঘাডাঙ্গা গ্রামের ওয়াসিম ও ২৭ এপ্রিল গোপালপুর গ্রামের ওবাইদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দেড় মাস পার হলেও তাদের মরদেহ এখনো দেশে ফেরত আসেনি। 

ঢাকা/শাহরিয়ার/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেনী সীমান্ত দিয়ে আরো ১৩ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • খাগড়াছড়ি সীমান্তে আবারও ১৪ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • ফেনী সীমান্তে ১৩ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • বিএসএফের গুলিতে আহত বাংলাদেশির ১৩ দিন পর মৃত্যু
  • যতদিন শেখ হাসিনা ভারতে থাকবেন ততদিন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না: সারজিস
  • কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের
  • সরকারের সমালোচনা করায় এভাবে কারও জীবন নষ্ট করতে পারেন না: মহারাষ্ট্র সরকারকে হাইকোর্ট
  • সাপ্তাহিক ছুটি ও মানবিক আচরণ চান গৃহকর্মীরা
  • সরকারের ওপর অব্যাহত চাপ জাতি ভালোভাবে দেখছে না: চরমোনাই পীর