বগুড়ায় সাবেক এমপির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, দেড় বছর পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন
Published: 29th, May 2025 GMT
বগুড়ায় সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রায় ৬ মাস পর আদালতের নির্দেশে নিহত নূরনবী ওরফে রবিনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বগুড়ার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু শাহমার উপস্থিতিতে নূরনবীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়।
নিহত নূরনবী ওরফে রবিন বগুড়া শহরের জয়পুরপাড়ার মৃত আব্দুল জোব্বারের ছেলে। মুঠোফোন চুরির অভিযোগে বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদার ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট নূরনবীকে ডেকে নেন। এরপর নূরনবীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। নুরুল ইসলাম তালুকদার সংসদ সদস্য পদে থাকায় থানা-পুলিশ ওই সময় হত্যা মামলা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ বাদীর।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর নূরনবীর মা রওশন আরা বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা করেন। এতে সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদার, তাঁর ছেলে জাতীয় ছাত্রসমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মারুফ ইসলাম তালুকদারসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার আরজি সূত্রে জানা যায়, মুঠোফোন চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদার দুপচাঁচিয়া সদরের মাস্টারপাড়াসংলগ্ন ভাড়া বাসায় ডেকে নেন নূরনবীকে। পরে চুরির অপবাদ দিয়ে তাঁকে বেধড়ক মারপিট ও নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে মা রওশন আরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছেলেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। হাসপাতাল থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরার পর ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর নূরনবী মারা যান। সে হত্যা মামলা করতে চাইলে থানা-পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি।
দুপচাঁচিয়া থানা-পুলিশ জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নূরনবীর মা বাদী হয়ে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দুপচাঁচিয়া আমলি আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তা নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করার জন্য দুপচাঁচিয়া থানা-পুলিশকে নির্দেশ দেন। ২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর মামলাটি থানায় রেকর্ড করা হয়। আদালতের নির্দেশে আজ নূরনবীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন শেষে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)