বাংলাদেশে অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করবে তুরস্ক
Published: 1st, June 2025 GMT
বাংলাদেশে অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করবে তুরস্ক। তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ড. কেমাল মেমিসওলোর সঙ্গে তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আমানুল হকের এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ কথা উঠে আসে।
আলোচনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তুরস্ক কর্তৃক পূর্বে প্রস্তাবিত বাংলাদেশে একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ বিষয়টি উত্থাপন করেন।
রবিবার (১ জুন) তুরস্কের বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
আরো পড়ুন:
তুরস্কে শান্তি আলোচনায় থাকছেন না পুতিন-ট্রাম্প
বৃহস্পতিবার তুরস্কে আবারো বৈঠকে বসছে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র
দূতাবাস জানায়, বিগত বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত জায়গা বরাদ্দ না করায় হাসপাতালটি আলোর মুখ দেখেনি।
বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সাম্প্রতিক তুরস্ক ভ্রমণকালীন, বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের জায়গা বরাদ্দ বিষয়ক সমস্যাটি তুলে ধরলে, তিনি নিশ্চয়তা প্রদান করেন যে, জায়গা বরাদ্দ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক। সে পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পুনরায় বিষয়টিতে জোর দেন। তিনি তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন।
তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে জানান যে, শিগগিরই একটি কমিটি গঠন করে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তুরস্ক কর্তৃক হাসপাতালটি নির্মিত হলে- সেটি যেন বাংলাদেশিদের তত্ত্বাবধানেই পরিপূর্ণভাবে পরিচালিত হতে পারে এমনভাবে প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে। এছাড়াও তিনি জানান যে, এটির নির্মাণ হবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বড় পরিবর্তন হবে এবং জটিল রোগীদের তখন বিদেশমুখী হতে হবে না।
বৈঠকে রাষ্ট্রদূত জুলাই অভ্যুত্থানে আহত সাতজন বাংলাদেশিদের তুরস্কে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তুরস্ক সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও তিনি প্রস্তাব করেন যে, তুরস্ক প্রদত্ত বিশেষ সুবিধার আওতায় সম্ভব হলে আরো আহত বাংলাদেশিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য তুরস্কে আনার সুযোগ দিতে। এর প্রতিউত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আহত রোগীদের মধ্যে যাদের উন্নত চিকিৎসায় সুস্থ করা সম্ভব বলে প্রতীয়মান হয়, তাদের একটি তালিকা প্রদান করতে অনুরোধ করেন।
বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশি চিকিৎসক এবং নার্সদের তুরস্কে প্রশিক্ষণ প্রদান, জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানে তুরস্ক হতে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল প্রেরণ এবং অভ্যুত্থানে যারা অঙ্গ হারিয়েছেন তাদের কৃত্রিম অঙ্গ স্থাপনে সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
উভয় দেশের কল্যাণে স্বাস্থ্যখাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য পারস্পরিক সদিচ্ছা এবং যৌথ প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে বৈঠকটি শেষ হয়।
ঢাকা/হাসান/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত রস ক স ব স থ যমন ত র ত রস ক র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির জন্য সেরা পশু কোনটি
কোরবানির জন্য পশু নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; কারণ, এটি শরিয়াহর নির্দিষ্ট শর্ত ও গুণাবলির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, কোরবানির জন্য কোন পশু সবচেয়ে উত্তম? উট, গরু, ভেড়া, নাকি ছাগল? ইসলামি শরিয়াহ এবং হাদিসের আলোকে এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের জন্য স্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
কোরবানির জন্য উত্তম পশু
ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী, কোরবানির জন্য পশুগুলোর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে উত্তমতা রয়েছে। প্রখ্যাত আলেম সালেহ আল মুনাজ্জিদ পরিচালিত ইসলাম কিউ অ্যান্ড এ-এর ফতোয়া কেন্দ্রের মতে, কোরবানির জন্য পশুগুলোর ক্রম নিম্নরূপ:
পশুর আকার, মাংসের পরিমাণ এবং এর মাধ্যমে বেশি মানুষের উপকারের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, উট বা গরুর মাধ্যমে বেশি মানুষের মাঝে মাংস বিতরণ করা সম্ভব।১. উট: একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানির জন্য সবচেয়ে উত্তম পশু হলো উট।
২. গরু বা ষাঁড়: একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ গরু বা ষাঁড় দ্বিতীয় স্থানে।
৩. ভেড়া: এরপর রয়েছে ভেড়া।
৪. ছাগল: ভেড়ার পর ছাগল।
৫. উটের সাত ভাগের এক ভাগ: একাধিক ব্যক্তি মিলে উটের অংশে অংশগ্রহণ করলে।
৬. গরুর সাত ভাগের এক ভাগ: একাধিক ব্যক্তি মিলে গরুর অংশে অংশগ্রহণ করলে।
এই ক্রমানুসারে উত্তমতা নির্ধারণের পেছনে পশুর আকার, মাংসের পরিমাণ এবং এর মাধ্যমে বেশি মানুষের উপকারের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, উট বা গরুর মাধ্যমে বেশি মানুষের মাঝে মাংস বিতরণ করা সম্ভব, যা দরিদ্রদের জন্য বেশি উপকারী।
আরও পড়ুনকোরবানি যাঁর জন্য ওয়াজিব, যেভাবে করতে হবে১৭ জুলাই ২০২০উত্তম পশুর বৈশিষ্ট্য
শুধু পশুর ধরনই নয়, কোরবানির পশুর কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যও গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসের আলোকে এই বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
মোটা ও মাংসল: পশুটি মোটা, স্বাস্থ্যবান এবং মাংসে পরিপূর্ণ হওয়া উচিত। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) দুটি শিংওয়ালা, সাদা-কালো মিশ্রিত ভেড়া কোরবানি করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৫৫৭)
শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ: পশুটি শারীরিকভাবে সুস্থ ও অক্ষত হতে হবে। আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) একটি সম্পূর্ণ (খাসি না করা), শিংওয়ালা, কালো মুখ, চোখের চারপাশে কালো বৃত্ত এবং কালো পা বিশিষ্ট পুরুষ ভেড়া কোরবানি করেছিলেন। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ১১,৩১৫)
যদি পশু জন্মগতভাবে এই ত্রুটি নিয়ে জন্মায়, তবে তা কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য।আরও পড়ুনঈদ যেভাবে এল১১ এপ্রিল ২০২৪মোটা বা খাসি করা: আবু রাফি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কোরবানির জন্য দুটি মোটা ভেড়া কিনতেন, যার মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে খাসি করা ভেড়াও ছিল। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ২৩,৪৫৩)
খাসি করা পশুর মাংস সাধারণত সুস্বাদু হয়, তবে শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ পশু বেশি মর্যাদাপূর্ণ।
মাকরুহ বা অপছন্দনীয় পশু
কিছু পশু কোরবানির জন্য মাকরুহ বা অপছন্দনীয়; কারণ, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ত্রুটি রয়েছে। বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘চার ধরনের পশু কোরবানির জন্য এড়ানো উচিত: স্পষ্ট খোঁড়া পশু, স্পষ্ট এক চোখ বিশিষ্ট পশু, স্পষ্ট রোগাক্রান্ত পশু এবং এমন কৃশ পশু যা কেউ পছন্দ করবে না।’ (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস: ১,০০৪)
এ ছাড়া নিম্নলিখিত ত্রুটিযুক্ত পশুগুলো মাকরুহ:
১. যার শিংয়ের অর্ধেক বা তার বেশি কাটা বা যার শিং পুরোপুরি উপড়ে ফেলা হয়েছে।
২. যার কান সামনে বা পেছনে ক্রস করে কাটা বা লম্বালম্বি কাটা বা ছিদ্র করা, কিংবা এতটাই কাটা যে কানের নালি দৃশ্যমান।
৩. যে পশু এতটাই কৃশ যে তার হাড়ে মজ্জা নেই।
৪. যে পুরোপুরি অন্ধ, যদিও চোখ উপস্থিত।
৫. যে পশু পালের সঙ্গে না চলে, যতক্ষণ না তাকে তাড়ানো হয়।
রাসুল (সা.) একটি সম্পূর্ণ (খাসি না করা), শিংওয়ালা, কালো মুখ, চোখের চারপাশে কালো বৃত্ত এবং কালো পা বিশিষ্ট পুরুষ ভেড়া কোরবানি করেছিলেন। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ১১,৩১৫)৬. যার লেজের অর্ধেক বা তার বেশি কাটা।
৭. যার জননাঙ্গ কাটা।
৮. যার দাঁত (সামনের বা পেছনের) কিছু হারিয়েছে (জন্মগতভাবে না হলে)।
৯. যার স্তনবৃন্ত কাটা (জন্মগতভাবে না হলে) বা যার দুধ বন্ধ হয়ে গেছে।
এই ত্রুটিগুলো পশুর শারীরিক অখণ্ডতা বা স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে, যা কোরবানির মানকে হ্রাস করে। তবে যদি পশু জন্মগতভাবে এই ত্রুটি নিয়ে জন্মায়, তবে তা কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য।
কোরবানির পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে শরিয়াহর নির্দেশনা আমাদের শিক্ষা দেয় যে এটি কেবল একটি ধর্মীয় রীতি নয় বরং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতার প্রকাশ। উত্তম পশু নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জন্য বেশি মাংস বিতরণ করতে পারি।
সূত্র: ইসলাম কিউএ ডটইনফো
আরও পড়ুনঈদুল আজহা ও হজ যখন প্রতিবাদের ক্ষেত্র১২ মে ২০২৫