আগামী বছরের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশের এলডিসি বা স্বল্পন্নোত দেশ থেকে উত্তরণের কথা। তখন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিদ্যমান অনেক সুযোগ-সুবিধা কমে আসবে। ফলে স্থানীয় শিল্পকে প্রতিযোগিতা করেই বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হবে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকেই নিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে স্থানীয় শিল্পের বিকাশে অতিরিক্ত সুরক্ষা সুবিধা কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যাহার, কিছু ক্ষেত্রে কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে দেশে উৎপাদিত কিছু পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। তাতে পণ্যের দামও বাড়তে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটে এমন কিছু ঈঙ্গিত দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড.
খাত-সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা, শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়লে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন। তাতে বিনিয়োগের গতি মন্থর হয়ে পড়বে। কমে যাবে কর্মসংস্থান।
প্রস্তাবিত বাজেটে প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
যারা ঘরবাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করেছেন তারাও হোঁচট খেতে পারেন। কারণ রডের উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত সুনির্দিষ্ট কর প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে নির্মাণ খাতের প্রধান এই উপকরণটির দাম বাড়তে পারে।
২০১৯ সাল থেকে হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট এবং উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছিল। তবে সরকারের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব খাতে অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আগামী পাঁচ বছরে তিন ধাপে ভ্যাট বসাতে যাচ্ছে সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে দুই বছরের জন্য এসব পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এরপরের দুই বছর ভ্যাটের এই হার হবে সাড়ে ৭ শতাংশ, যা ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। তারপরের বছর ভ্যাট আরও বেড়ে ১০ শতাংশ হবে। এটি কার্যকর থাকবে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। তবে এ সময়ে পণ্যগুলোর উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকবে। সরকারের এমন পদক্ষেপে বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে।
এ ছাড়া রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এসি ও কম্প্রেসরের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত সুবিধা কমানো হয়েছে। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে ২০১১ সাল থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছে। রাজস্ব বাড়াতে এখন এসব খাতের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যমান অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছর থেকে এসব পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট দিতে হবে। তবে এসব খাতে বিদ্যমান বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উৎপাদনের ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে সম্পূরক শুল্ক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপের কারণে এসি-ফ্রিজের উৎপাদন খরচ ও দাম বেড়ে যাবে। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের পক্ষে এসব পণ্য কেনা অনেকটা কঠিন হয়ে যাবে।
দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা রয়েছে। তবে এবারের বাজেটে এ ক্ষেত্রে ভ্যাট দুই থেকে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সরকার ব্লেডের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ ত শ আমদ ন প রস ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেটে বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম
অন্তর্বর্তী সরকার আজ সোমবার আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করবে। বাজেট এলে বেশির ভাগ মানুষের মাথায় প্রথম প্রশ্ন আসে– জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না-তো। দুপুর ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তব্য দিবেন। সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে।
বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম
ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ফ্রিজ, এসিসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের স্থানীয় শিল্পের বিকাশে বেশ কয়েক বছর ধরে ‘অতিরিক্ত সুরক্ষা’ সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এই অতিরিক্ত সুবিধার কিছুটা লাগাম টানতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এসব পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়তে পারে। এতে বাড়তে পারে দামও। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অনেকের পক্ষে ভবিষ্যতে এসব পণ্য কেনার শখ পূরণ করা কঠিন হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, সরকার ২০১৯ সালে দেওয়া প্রজ্ঞাপন অনুসারে এতদিন ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার এবং প্রেশার কুকারের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট এবং উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক (আগাম করসহ) অব্যাহতি সুবিধা রয়েছে। তবে অন্তবর্তী সরকারের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব খাতে অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আগামী পাঁচ বছরে তিনটি ধাপে ভ্যাট বসাতে যাচ্ছে সরকার। যেমন, ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে এসব পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই ভ্যাট বলবৎ থাকবে। এর পরের দুই বছর ভ্যাটের এই হার বেড়ে হবে সাড়ে ৭ শতাংশ, যা ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। তার পরের অর্থবছর ভ্যাট আরও বেড়ে ১০ শতাংশ হবে। এটি কার্যকর থাকবে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত। তবে এ সময়ে পণ্যগুলোর উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক (আগাম করসহ) অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকবে।
এ ছাড়া রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এসি ও কম্প্রেসরের ক্ষেত্রে কিছুটা কঠোর হচ্ছে সরকার। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ২০১১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছে।
২০১৯ সালের প্রজ্ঞানপন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা পেয়ে আসছে এসব পণ্য। সরকার রাজস্ব বাড়াতে এসব খাতের অতিরিক্ত সুরক্ষা সুবিধা প্রত্যাহার করতে চায়। এরই অংশ হিসেবে এসব পণ্যের উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যমান অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ এসব পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট (আগাম করসহ) দিতে হবে। তবে এসব খাতে বিদ্যমান বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুধু উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে সম্পূরক শুল্ক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।
মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা রয়েছে। তবে আসছে বাজেটে এ ক্ষেত্রে ভ্যাট দুই থেকে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর ফলে দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে।
বর্তমানে আয়রন বা স্টিলের এলপিজি সিলিন্ডারের ওপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। আগামী বাজেটে এটি বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে, যা ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। স্থানীয়ভাবে লিফট উৎপাদনের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছেন উদ্যোক্তারা। এই সুবিধা আর থাকছে না। আগামী অর্থবছর থেকে উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক আরোপ হবে, যা ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর পরের বছর এই হার বেড়ে হবে সাড়ে ৭ শতাংশ, যা ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। পরের বছর আরও বেড়ে মূসক হবে ১০ শতাংশ। ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত এটি বহাল রাখার প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। তবে ৩০ সাল পর্যন্ত লিফটের উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে আগাম করসহ সমুদয় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকবে।