২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ কম বলে মনে করছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। প্রস্তাবিত বাজেটে সংস্কৃতি খাতে ৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়লেও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মত প্রকাশ করেছেন তারা। তাছাড়া নতুন বাজেটে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সেবায় ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ নিয়েও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে থিয়েটার আর্টিস্টস এসোসিয়েশন অব ঢাকা (টাড)। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রচার সম্পাদক অভিনেত্রী নাজনীন হাসান চুমকী জানিয়েছেন, এবারের বাজেট হতাশাজনক!
সংগঠনটির সভাপতি আজাদ আবুল কালাম স্বাক্ষরিত একটি লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন, একটি জাতির আত্মপরিচয়, ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ গঠনে সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অথচ বারবার দেখা যাচ্ছে, এই খাতটি অবহেলিত হচ্ছে। এবারের জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ আগের তুলনায় কিঞ্চিৎ বাড়ানো হলেও তা হতাশাজনক।
আরো পড়ুন:
দুই বিভাগে পুরস্কার পেল ‘সাইলেন্স ইন দ্য ক্যাওয়াস’
বিয়ের সহজ সমাধান দিলেন ইমন
এ বক্তব্যে আরো জানানো হয়, নাট্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, চিত্রশিল্পীসহ নানা মাধ্যমের সাংস্কৃতিক কর্মীরা বছরের পর বছর সীমিত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের জন্য টেকসই আর্থিক সহায়তা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও গবেষণাভিত্তিক সংস্কৃতি চর্চার জন্য বাজেটে দাবিকৃত বরাদ্দ থাকা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছি। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, সংস্কৃতিকে বিলাসিতা নয়, বরং জাতি গঠনের একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করুন। বাজেটে সংস্কৃতি খাতে উপযুক্ত ও কার্যকর বরাদ্দ নিশ্চিত করুন, যেন এই খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত না হয়।
এদিকে, বাজেটে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সেবায় ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা প্রসঙ্গে নির্মাতা আশফাক নিপুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছেন। ‘মহানগর’ নির্মাতা লেখেন, “বাংলাদেশে সরাসরি ওটিটি সাবস্ক্রাইবার কতজন সেই ব্যাপারে কোনো ধারণা, তথ্য হালনাগাদ কি আছে অর্থ উপদেষ্টা সাহেবের? দেশে ওটিটির ভোক্তাকূলের একটা বেশ বড় অংশ যে পাইরেসি করে আমাদের কনটেন্ট দেখে সেটা কি উনারা জানেন? পাইরেসির বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার গল্প কি তারা জানেন?”
ব্যাখ্যা করে আশফাক নিপুন বলেন, “বিশ্বের বর্ধনশীল যেকোনো শিল্পকে যেখানে কর রেয়াতের সুযোগ দেয়া হয়, সেখানে মাত্র ৫ বছর হলো যাত্রা শুরু করা এই ওটিটি বলয়ের ওপর বাড়তি ১০% সম্পূরক ট্যাক্সের সরাসরি প্রভাব পড়বে নির্মাতাদের বাজেটে এবং গল্পে, প্রভাব পড়বে বৈধভাবে সাবস্ক্রিপশন নেয়ায়। পাইরেসির প্রকোপ আরো বাড়বে এবং দিনশেষে সবার ব্যবসা হবে সংকুচিত।”
হতাশা ব্যক্ত করে আশফাক নিপুন লেখেন, “পাইরেসির ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নেওয়ার পরিবর্তে বরং পাইরেসিকেই উৎসাহী করবে এই বাড়তি ট্যাক্স। গোটা কাঠামোর সংস্কার না করে বাড়তি ট্যাক্স বসানোর ফলে মাঝেসাঝে যাও একটু আমের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল, সামনে হয়তো আম-ছালা দুটাই যাবে। দুর্ভাগ্যজনক!”
অন্যদিকে নিপুনের পোস্টটি শেয়ার করে নির্মাতা আদনান আল রাজীব লেখেন, “সরকারের উচিত সংস্কৃতি খাতকে আরো সমর্থন দেওয়া। উল্টো চাপিয়ে রাখা হচ্ছে। এটা দুঃখজনক। এ কারণে অনেক শিল্পী দেশত্যাগ করেন, বাইরে গিয়ে স্থায়ী হন।”
গতকাল রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এ প্রস্তাব রেখেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র বর দ দ
এছাড়াও পড়ুন:
‘প্রস্তাবিত বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব’
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কিছু প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ব্রোকারহাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, তালিকাভুক্ত কোম্পানি তথা পুরো পুঁজিবাজারই লাভবান হবে। যদিও এবারের বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রত্যক্ষভাবে কেনো প্রণোদনা রাখা হয়নি। তবে পুরো পুঁজিবাজার লাভবান হলে পরোক্ষভাবে বিনিয়োগকারীরাও উপকৃত হবেন। তাই একবারের প্রস্তাবিত বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজেটে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো হলো- পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান ২.৫০ শতাংশ বাড়ানো, ব্রোকারেজ হাউজগুলোর লেনদেনর ওপর উৎসে কর হার ০.০২ শতাংশ কমানো ও মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ১০ শতাংশ কমানো।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন।এবার তিনি এবার ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন।
আরো পড়ুন:
৫৯ দেশে বাংলাদেশ মিশনে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় অর্থনীতিবিদ-ব্যবসায়ীরা
এবারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান ২.৫০ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তাতে এই ব্যবধান দাঁড়াবে ৭.৫০ শতাংশ। বর্তমানে এই দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান ৫ শতাংশ। এক সময় এটি ১০ শতাংশ ছিল। গত চলতি অর্থবছরের বাজেটে এটি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান বাড়লে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে কিছুটা আগ্রহী হবে।
এবার স্টক ব্রোকারদের দাবির প্রেক্ষিতে বাজেটে লেনদেনর ওপর উৎসে করের হার কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে, আগামী অর্থবছরে ব্রোকারহাউজগুলোকে ০.০৩ হারে এই কর দিতে হবে। বর্তমানে লেনদেনের ওপর ০.০৫ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হতো এসব প্রতিষ্ঠানকে। ফলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর লেনদেনর ওপর উৎসে কর হার ০.০২ শতাংশ কমেছে। এতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সক্ষমতা বাড়বে।
এছাড়া বাজেটে মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো প্রকৃত অর্থে ব্যাংক না হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ব্যাংকের সমান হারে অর্থাৎ ৩৭.৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। আগামী অর্থবছরে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ২৭.৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বাড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যেসব প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। কিন্তু বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো সুখবর নেই। তবে একটা ভালো দিক হলো-এ সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে ভাবছে, যা বাজেট বক্তৃতায় উঠে এসেছে। বিগত সরকারের বাজেটগুলোতে এমন চিত্র দেখা যায়নি। বাজেটে যেসব প্রস্তাব এসেছে তা বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারের স্টকহোল্ডারদের সক্ষমতা বাড়বে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে বর্তমান পরিস্থিতি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক বাজেট বলা যেতে পারে।”
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ব্রোকারদের দাবির প্রেক্ষিতে বাজেটে লেনদেনর ওপর উৎসে করের হার কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ফলে আগামী অর্থবছরে ব্রোকারহাউজগুলোকে ০.০৩ হারে এই কর দিতে হবে। বর্তমানে লেনদেনের ওপর এটা দিতে হতো ০.০৫ শতাংশ হারে।এটা আমাদের দীর্ঘদিনে দাবি ছিল। অবশেষে এ সরকারকে আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।সরকারের এমন সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। এতে হাউজগুলো ব্যবসায় টিকে থাকার সক্ষমতা বা[ড়বে।”
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটে মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব খুবই ইতিবাচক। এতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আয় বাড়বে, আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে। এই অর্থ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের পাশাপাশি ভালো কোম্পানিকে আইপিওর মাধ্যমে বাজারে আনার জন্য কাজ করতে পারব।”
ঢাকা/এনটি/এসবি