দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রধান সহকারী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব না দিয়ে অফিস সহকারী দিয়ে দাপ্তরিক কাজ পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন প্রধান সহকারী। 

২০১৬ সালে প্রধান সহকারী মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রেষণে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়। তৎকালীন সিভিল সার্জন মো.

সেলিম মিয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী দিলরুবা আক্তারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

গত বছরের ১৮ জুলাই বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের এক চিঠিতে মোস্তাফিজুর রহমানের প্রেষণ আদেশ বাতিল করা হয়। দাপ্তরিক চিঠি অনুযায়ী মোস্তাফিজুর গত বছরের ২৭ জুলাই দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রধান সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। কর্মস্থলে যোগদানের পর তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। 

অভিযোগ উঠেছে, দুমকী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানকালে মোস্তাফিজের কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি মুচলেকা নেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মীর শাহিদুল হাসান শাহীন। ওই মুচলেকার একটি কপি সমকাল প্রতিবেদকের কাছে আছে। মুচলেকাপত্রে লেখা রয়েছে– ‘কর্তৃপক্ষ আমার উপর যে দায়িত্ব দিবে, উহার বাহিরে দায়িত্ব পালন করার জন্য আমার কোন আগ্রহ থাকিবে না। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।’ 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ভাষ্য, মোস্তাফিজ কাজ ভালো বোঝেন না। এ কারণে হিসাবসংক্রান্ত এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাঁকে (দিলরুবা আক্তার) দিয়ে করানো হয়।

ভুক্তভোগী প্রধান সহকারী মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে জানান, প্রেষণ থেকে ফিরে আসার পর তাঁকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তিনি দায়িত্বভার বুঝে পেতে আগের সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করলেও প্রতিকার পাননি। তিনি ২২ বছর ধরে প্রধান সহকারীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রেষণে বদলির আগে একই কার্যালয়ে যথাযথভাবে কাজ করেছেন। তিনি কাজ বোঝেন না– এ অভিযোগ সঠিক নয়। 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী থাকার পরও তাঁর দায়িত্ব পালনের বিষয়ে অফিস সহকারী দিলরুবা আক্তার বলেন, অফিস তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তিনি সেটি পালন করছেন। 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অফিস সহকারী দিলরুবা আক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন অনিয়ম করে যাচ্ছেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পোশাক পরিচ্ছদের বরাদ্দের বিভিন্ন বিল ভাউচারে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। 

অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মীর শহিদুল হাসান শাহীন জানান, প্রধান সহকারী তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। তবে হিসাবসংক্রান্ত কিছু কাজ অফিস সহকারীকে দিয়ে করাচ্ছেন। অফিস সহকারী দিয়ে দাপ্তরিক কাজ করা যায় কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অফিসের প্রধান হিসেবে তিনি তাঁর পছন্দের ব্যক্তিকে দিয়ে কাজ করাতে পারেন। 

দুমকী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি আবুজর মো. ইজাজুল হক বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবেন। 

পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া জানান, অভিযোগের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নেবেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স স ভ ল স র জন কর মকর ত দ প তর ক র রহম ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানের অপেক্ষা শেষ হয় না, অসহায় জুলাই শহীদ জুয়েলের পরিবার

পাঁচ বছরের ছোট্ট মোহাম্মদ জুবায়েত এখনও রাত হলে বাবার জন্য অপেক্ষা করে। ঘুমানোর আগে বাবার বালিশ আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, বাবা কখন আসবে?’ তার মা জুবেদা খাতুন চোখের পানি চেপে রাখেন, উত্তর দিতে পারেন না। কারণ তার বাবা জুয়েল মিয়া আর কোনোদিনই ফিরবেন না।

গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান গার্মেন্টস শ্রমিক জুয়েল মিয়া (৪২)। তিনি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার কাকদা গ্রামের দিনমজুর আবদুল হাইয়ের ছেলে। থাকতেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনায় ভাড়া বাসায়।

সেই দিনের কথা মনে করে কাঁদতে কাঁদতে জুবেদা খাতুন বলেন, ‘‘সেদিন দুপুরে স্বামী কল করে বলেছিল, দেশের অবস্থা খারাপ। বাইরে বের হয়ো না। আমি রাস্তায় আছি। চারদিকেই মানুষ।’’

কয়েক ঘণ্টা পর সন্ধ্যায় খবর আসে  জুয়েল গুলিবিদ্ধ। ছুটে গিয়ে তিনি দেখেন, স্বামী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। কয়েকটি হাসপাতালে নিলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।

‘‘কয়েকটা গুলি শুধু আমার স্বামীকে শেষ করল না, আমার সংসারটাও শেষ করে দিলো।’’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন জুবেদা।

দীর্ঘ দেড় যুগের দাম্পত্যজীবনে এক যুগ পর জুবায়েতের জন্ম হয়। বাবা জুয়েল ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন। আজ সেই ছেলে বাবার স্মৃতি বুকে নিয়ে বড় হচ্ছে। আর সংসারের হাল ধরে একা লড়ছেন জুবেদা।

স্বামীর আয়ে চলত অসুস্থ শ্বশুর-শাশুড়িসহ পুরো সংসার। সেই আয়ে ছেদ পড়েছে। বৃদ্ধ শ্বশুরকে অসুস্থ শরীর নিয়েই অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করতে হয়।

জুয়েলের ভায়রা ভাই আরিফুর ইসলাম সরকার জানান, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিয়মিত মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন জুয়েল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর ভয় করেননি। কিন্তু আজ তার পরিবার নিঃস্ব।

স্বামীর ইচ্ছা ছিল একমাত্র ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়ানোর। সেই ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন জুবেদা।

তিনি বলেন, ‘‘সরকার যেটুকু সাহায্য দিয়েছে, তা দিয়ে তো সংসার চলে না। সন্তান মানুষ করা, চিকিৎসা, সংসারের খরচ সব কিছুতেই এখন অনিশ্চয়তা।’’

জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবারগুলো কেমন আছে, সন্তানদের ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা আদৌ কি বাস্তবায়িত হবে? নাকি কেবলই চোখের জলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পরিবারের সদস্যদের? এখনো জানেন না জুবেদার মতো বহু ভুক্তভোগী।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ