Samakal:
2025-09-18@01:25:48 GMT

এক কলেজে তিন অধ্যক্ষ

Published: 10th, July 2025 GMT

এক কলেজে তিন অধ্যক্ষ

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষের চেয়ার একটি। কিন্তু সেখানে অধ্যক্ষ তিনজন। একজন মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত। অপর দু’জন ভারপ্রাপ্ত। এর মধ্যে একজন উচ্চ আদালত থেকে স্বপদে পুনর্বহাল হওয়ার রায় পেয়েছেন। এভাবে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসা নিয়ে টানাহেঁচড়া চলছে তিনজনের মধ্যে।

২০২১ সালের ৮ আগস্ট শিমুলবাড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজ জাতীয়করণ হয়। তখন থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন উপাধ্যক্ষ আবদুল হান্নান। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ শাখা-২-এর আদেশে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান অধ্যাপক এ কে এম সিদ্দিকুর রহমান। তাঁর পদায়নের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন উপাধ্যক্ষ আবদুল হান্নান। এর পর তিন মাসের জন্য উচ্চ আদালত থেকে স্বপদে পুনর্বহাল হওয়ার রায় পেয়েছেন তিনি। সিদ্দিকুর রহমান আদালতের আদেশ অমান্য করে কলেজের সহকারী অধ্যাপক অশোক কুমার রায়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। কিন্তু নিয়মিত কলেজে আসছেন এবং অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন সিদ্দিকুর রহমান। বর্তমানে ওই তিন অধ্যক্ষই কর্মরত আছেন কলেজটিতে।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা শহরের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল হান্নান। তাঁর অভিযোগ, কলেজটি জাতীয়করণের পর থেকে তিনি বিধি অনুযায়ী উপাধ্যক্ষ হিসেবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর পদায়ন যৌক্তিক। এর পরও বিধি ভঙ্গ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘাপটি মেরে থাকা দোসররা চলতি বছরের ৮ এপ্রিল ১৩৫ কলেজের সঙ্গে শিমুলবাড়ি ডিগ্রি কলেজে ক্যাডারভুক্ত এ কে এম সিদ্দিকুর রহমানকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। ওই আদেশ বাতিল চেয়ে গত ২৭ মে আদালতে রিট পিটিশন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ১ জুন অধ্যক্ষ পদায়ন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং তাঁকে অধ্যক্ষ পদোন্নতি দিয়ে রায় দেন। ওই আদেশের পর এ কে এম সিদ্দিকুর রহমান তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে অবৈধভাবে সহকারী অধ্যাপক অশোক কুমার রায়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকারী অশোক কুমার রায়ের মোবাইল ফোনে একাধিকার কল দেওয়া হয়। তিনি সাড়া দেননি।

অধ্যক্ষ এ কে এম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তাঁর পদায়নের আদেশটি তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন আদালত। এ অবস্থায় কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সহকারী অধ্যাপক অশোক কুমার রায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অশোক কুমার রায়কে দায়িত্ব দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপাধ্যক্ষ আবদুল হান্নান অনুপস্থিত থাকায় অশোক কুমারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এম স দ দ ক র রহম ন র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে