বাংলাদেশ এমনই এক ভূখণ্ড, যেখানে প্রকৃতি আর রাজনীতি একসঙ্গে হেঁটে চলে। রাজনীতি আমাদের নিত্যজীবনের অজানা এক সুর, যার বাঁশি বাজে কখনও মধুর, কখনও বিষণ্ন। এই দেশের গণতন্ত্রও যেন সেই সুরেরই অন্তর্গত এক সংগীত। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। প্রথম দশকে গণতন্ত্রের কাঠামো হোঁচট খেতে শুরু করে সামরিক শাসন ও একদলীয় নীতির ভারে। কিন্তু এই দেশের মানুষ বারবার প্রমাণ করেছে, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। 

১৯৯০ সালে স্বৈরশাসনের পতন, সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুথান ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আবারও সেই আশা পুনরুজ্জীবিত হয়। তবে এই যাত্রাপথ মসৃণ নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অসহিষ্ণুতা, অবরোধ, হরতাল, সহিংসতা, এসব যেন গণতন্ত্রের মঞ্চে অনাহূত দর্শক। তবুও নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার গঠনের ধারা অব্যাহত আছে, যা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কেবল নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় নয়, বরং কার্যকর গণতান্ত্রিক চর্চায় নিহিত। সংসদে বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকা, আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সুশাসন– এসব উপাদান মিলেই একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলে। কিন্তু এই ক্ষেত্রগুলোতে আজও অনেক প্রশ্ন, অনেক সংশয়। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মতপ্রকাশে প্রতিবন্ধকতা কিংবা প্রশাসনের রাজনৈতিক ব্যবহারের অভিযোগ– এসবই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষীণ করে। আবার বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংসতা, ধ্বংসাত্মক আচরণও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য নষ্ট করে। বড় আশার কথা, দেশের তরুণ প্রজন্ম রাজনৈতিক সচেতন হয়ে উঠছে। সামাজিক মাধ্যমে তাদের অংশগ্রহণ, নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কিংবা দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব, সবই রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে নতুন রূপ দিতে পারে। এই তরুণ শক্তিই হতে পারে ভবিষ্যতের পরিবর্তনের বাহক। 

বাংলাদেশের অর্থনীতি যেমন কৃষকের মাঠ থেকে শিল্পাঞ্চলে গড়ে উঠেছে, ঠিক তেমনি রাজনীতির ক্ষেত্রেও দরকার মাটির ঘ্রাণ, জনগণের সত্যিকারের অংশগ্রহণ। দলীয় আদর্শ ও নীতির ভিত্তিতে রাজনীতি গড়ে উঠলে ব্যক্তি বা পরিবারকেন্দ্রিক নেতৃত্ব নয়, গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব বিকশিত হলে, স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে। বিশ্ব রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রয়োজন স্বচ্ছ নির্বাচন, কার্যকর নির্বাচন কমিশন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আজ রাজনীতির গুণগত মানের দিকে তাকিয়ে আছে, শুধু ভোটের সংখ্যার দিকে নয়।

গণতন্ত্র শুধু নির্বাচন নয়, এটি একটি সংস্কৃতি, যেখানে ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা, সংলাপের প্রতি বিশ্বাস এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা থাকা চাই। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ যেন এক স্নিগ্ধ প্রভাতের দিকে এগিয়ে যায়, যেখানে নদীর মতোই প্রবহমান গণতন্ত্র, মাঠের ফুলের মতোই সহিষ্ণু রাজনীতি, আর আকাশের পাখির মতোই মুক্ত মতপ্রকাশ। 

জুয়েল হাসান: প্রকৌশলী

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত গণতন ত র গণত ন ত র ক গণতন ত র র র জন ত ক স র র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পর নির্বাচনের সময় ঘোষণা হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হতো‌: আখতার

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার পর নির্বাচনের সময় ঘোষণা করা হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হতো।

জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নির্বাচনের সময় ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় আখতার হোসেন এ কথা বলেন।

শুক্রবার রাতে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা এনসিপির কার্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আখতার হোসেন আরও বলেন, ‘সরকার নির্বাচনের জন্য যে সময়সীমার কথা বলেছে, এই সময়সীমার মধ্যে সংস্কার ও বিচারকে দৃশ্যমান করে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদকে বাস্তবায়ন করে নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা যদি নিশ্চিত করতে পারে, সরকার এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের যে কথা বলেছে, তাতে আমাদের তরফ থেকে কোনো আপত্তি নেই।’

নির্বাচন শুধু যেন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে না থাকে, সেটা উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা শুধু নয়, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে গণতন্ত্রকে আমরা প্রত্যাশা করি, তা যেন বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে শক্তিশালীভাবে বহাল হয়। বাংলাদেশের সংবিধান, রাষ্ট্রীয় কাঠামো, বিচার বিভাগ, পুলিশ প্রশাসনসহ প্রত্যেক জায়গায় যেন গণতন্ত্রের ছোঁয়া আসে।’

বর্তমান সংবিধানকে ‘ফ্যাসিবাদী’ উল্লেখ করে নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্তে গণপরিষদ ভোটের দাবি তোলেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না যে ফ্যাসিবাদী সংবিধান বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছে, এই সংবিধানে বাংলাদেশ পরিচালিত হোক। আমরা একটি নতুন সংবিধান প্রত্যাশা করি। সেই প্রত্যাশার জায়গা থেকে সামনের দিনে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই নির্বাচনের প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে এসে যাতে বাংলাদেশকে একটি নতুন সংবিধান উপহার দিতে পারেন, সে নতুন সংবিধান প্রণয়নসহ গণপরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানাসহ রংপুরের জেলা ও উপজেলার নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে করার দাবি পুনর্ব্যক্ত জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের
  • শৈশবের ঈদ ছিল সরল আনন্দময়
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পর নির্বাচনের সময় ঘোষণা হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হতো‌: আখতার
  • প্রত্যেক বাহিনীকেই গুমের কাজে ব্যবহার করেছে আ’লীগ