রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া
Published: 7th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ এমনই এক ভূখণ্ড, যেখানে প্রকৃতি আর রাজনীতি একসঙ্গে হেঁটে চলে। রাজনীতি আমাদের নিত্যজীবনের অজানা এক সুর, যার বাঁশি বাজে কখনও মধুর, কখনও বিষণ্ন। এই দেশের গণতন্ত্রও যেন সেই সুরেরই অন্তর্গত এক সংগীত। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। প্রথম দশকে গণতন্ত্রের কাঠামো হোঁচট খেতে শুরু করে সামরিক শাসন ও একদলীয় নীতির ভারে। কিন্তু এই দেশের মানুষ বারবার প্রমাণ করেছে, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।
১৯৯০ সালে স্বৈরশাসনের পতন, সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুথান ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আবারও সেই আশা পুনরুজ্জীবিত হয়। তবে এই যাত্রাপথ মসৃণ নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অসহিষ্ণুতা, অবরোধ, হরতাল, সহিংসতা, এসব যেন গণতন্ত্রের মঞ্চে অনাহূত দর্শক। তবুও নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার গঠনের ধারা অব্যাহত আছে, যা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কেবল নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় নয়, বরং কার্যকর গণতান্ত্রিক চর্চায় নিহিত। সংসদে বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকা, আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সুশাসন– এসব উপাদান মিলেই একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলে। কিন্তু এই ক্ষেত্রগুলোতে আজও অনেক প্রশ্ন, অনেক সংশয়। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মতপ্রকাশে প্রতিবন্ধকতা কিংবা প্রশাসনের রাজনৈতিক ব্যবহারের অভিযোগ– এসবই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষীণ করে। আবার বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংসতা, ধ্বংসাত্মক আচরণও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য নষ্ট করে। বড় আশার কথা, দেশের তরুণ প্রজন্ম রাজনৈতিক সচেতন হয়ে উঠছে। সামাজিক মাধ্যমে তাদের অংশগ্রহণ, নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কিংবা দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব, সবই রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে নতুন রূপ দিতে পারে। এই তরুণ শক্তিই হতে পারে ভবিষ্যতের পরিবর্তনের বাহক।
বাংলাদেশের অর্থনীতি যেমন কৃষকের মাঠ থেকে শিল্পাঞ্চলে গড়ে উঠেছে, ঠিক তেমনি রাজনীতির ক্ষেত্রেও দরকার মাটির ঘ্রাণ, জনগণের সত্যিকারের অংশগ্রহণ। দলীয় আদর্শ ও নীতির ভিত্তিতে রাজনীতি গড়ে উঠলে ব্যক্তি বা পরিবারকেন্দ্রিক নেতৃত্ব নয়, গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব বিকশিত হলে, স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে। বিশ্ব রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রয়োজন স্বচ্ছ নির্বাচন, কার্যকর নির্বাচন কমিশন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আজ রাজনীতির গুণগত মানের দিকে তাকিয়ে আছে, শুধু ভোটের সংখ্যার দিকে নয়।
গণতন্ত্র শুধু নির্বাচন নয়, এটি একটি সংস্কৃতি, যেখানে ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা, সংলাপের প্রতি বিশ্বাস এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা থাকা চাই। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ যেন এক স্নিগ্ধ প্রভাতের দিকে এগিয়ে যায়, যেখানে নদীর মতোই প্রবহমান গণতন্ত্র, মাঠের ফুলের মতোই সহিষ্ণু রাজনীতি, আর আকাশের পাখির মতোই মুক্ত মতপ্রকাশ।
জুয়েল হাসান: প্রকৌশলী
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত গণতন ত র গণত ন ত র ক গণতন ত র র র জন ত ক স র র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
দ্রুত নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন: আকবর খান
ঢাকা-৮ আসনে দ্রুত নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান। তিনি বলেন, “ভোটের অধিকার জনগণের পবিত্র আমানত, এটি সচেতনভাবে প্রয়োগ করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা জননেতা সাইফুল হক-এর ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচিতে তিনি একথা বলেন।
গণসংযোগের শুরুতে ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাকের সভাপতিত্বে এক সংক্ষিপ্ত পথসভা হয়।
সেখানে আকবর খান বলেন, “নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে অবিলম্বে ভোটের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে—২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে—ঢাকা-৮ আসনের বহু নাগরিক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যে তরুণের এখন বয়স ২৫ বা ২৬, তারা কখনো ভোট দিতে পারেনি, ভোট কী তা জানে না- এটি গণতন্ত্রের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।”
তিনি আরো বলেন, “গত ১৬-১৭ বছর ধরে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং আমাদের নেতা সাইফুল হক জনগণের ভোটাধিকারের আন্দোলনে রাজপথে সংগ্রাম করে আসছেন। এর জন্য জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেও তিনি থেমে থাকেননি। ভোটাধিকার গণমানুষের দীর্ঘ লড়াই ও ত্যাগের ফসল। এই অধিকার ভুল ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।”
আকবর খান বলেন, “জননেতা সাইফুল হক গণমানুষের পরীক্ষিত নেতা। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের জনগণ যেন তাকে ভোট দিয়ে নিজেদের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়ার কথা ও দীর্ঘ বঞ্চনার ইতিহাস সংসদে তুলে ধরার সুযোগ করে দেন- এটাই আমাদের আহ্বান।”
গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচি বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকা থেকে শুরু হয়ে মতিঝিল, কমলাপুর, ফকিরাপুল, কালভার্ট রোড হয়ে বিজয়নগরে এসে শেষ হয়। এতে শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সিকদার হারুন মাহমুদ, মীর রেজাউল আলম, কবি জামাল সিকদার, ফাইজুর রহমান মুনির, বাবর চৌধুরী, মহানগর নেতা যুবরান আলী জুয়েল, সালাউদ্দিন, রিয়েল মাতবর, আরিফুল ইসলাম, মুজিবুল হক চুন্নু, গোলাম রাজিব, মাহমুদুল হাসান খান, ফয়েজ ইবনে জাফর, নান্টু দাস, শিবু মহন্ত ও হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
ঢাকা/এএএম/এস