ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দ্রুত ইসিকে জানান, সরকারকে সালাহউদ্দিন আহমদ
Published: 16th, June 2025 GMT
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে হওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে আলোচনা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের ভাবনায় বাজেট ২০২৫-২৬’ শীর্ষক আয়োজিত এক সেমিনারে আলোচনায় তিনি এই আহ্বান জানান। ‘নাগরিক ঐক্য’ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে যেতে পারি, এই ব্যবস্থা এই সরকারকে নিতে হবে। সেই হিসেবে লন্ডনের আলোচনার সূত্র ধরে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়নে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সরকার যোগাযোগ করবে বলে আশা করছি। যাতে নির্বাচন কমিশন জনগণের সামনে বলতে পারে যে, তারা সরকারের কাছ থেকে একটা পরামর্শমূলক বা নির্দেশনামূলক বার্তা পেয়েছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, এই বাজেটে রাজস্ব খরচের পরিমাণ উন্নয়ন খরচের দ্বিগুণ। এই অবস্থায় এই উন্নয়ন বাজেট পরনির্ভরশীল হবে, ঋণ নিতে হয়। অর্থাৎ বাজেট বিদেশি ঋণ ও আর্থিক খাত নির্ভর হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে নিজস্ব অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে বাজেট প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না। এ সময় তিনি করমুক্ত আয় সীমা চার লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেন। একইসঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা জালের আওতায় দেওয়া বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, জ্বালানী ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব খনিজ সম্পদ দেশীয়ভাবে আহরণে মনোযোগ দিতে হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকে এই সরকারের দায়মুক্তির বিষয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। সংবিধানের ধারা ১০৬ এবং সুপ্রিম কোর্টের একটা রুল অনুসারে এই সরকার গঠিত হয়েছে। সংবিধান যেহেতু এখনও বলবৎ, সেহেতু সাংবিধানিকভাবে এই সরকার চলছে। এই সরকারের বৈধতার জন্য একটা নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর মান্নার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) স্থায়ী কমিটির সদস্য মোস্তাক হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম মেম্বার প্রেসিডিয়াম সদস্য মমিনুল ইসলাম প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ এই সরক র সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
জাফলংয়ের পাথর কোয়ারিতে এখনও রাজনৈতিক ছায়া
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের আগে সিলেটের জাফলংয়ের পাথর কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কবজায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পর রাজত্ব বদলেছে। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীর হাতে এখন পাথর কোয়ারির চাবি। ইজারা স্থগিত থাকলেও রাতদিন বোমা মেশিন ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে পাথর তোলা থেমে নেই। গত ৫ আগস্টের পর ৯ মাসে অন্তত ৪০০ কোটি টাকার বালু পাথর লুট হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো জানিয়েছে।
লুটের অভিযোগে একাধিক নেতাকর্মী দলের পদ পদবি হারালেও এ পথ থেকে তারা ফিরছেন না। থানায় মামলা করেও দমানো যাচ্ছে না তাদের। সর্বশেষ শনিবার সরকারের দুই উপদেষ্টা জাফলংয়ে পরিদর্শনে গেলে তাদের গাড়িবহরে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ভিডিও ফুটেজে যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের একাধিক নেতাকেই ঘটনাস্থলে দেখা যায়।
শনিবার দুপুরে জাফলংয়ের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) পরিদর্শনে যান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা শেষে ফেরার পথে স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে একদল মানুষ পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে উপদেষ্টাদের গাড়িবহরের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন, যুবদল নেতা সুমন আহমদ ও শ্রমিক দলের দেলওয়ার হোসেনকে দেখা যায়। এ ছাড়া জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমেদসহ আরও কয়েক নেতাকর্মীকে সেখানে দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
পরিদর্শন শেষে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিলেটের নান্দনিক ও নৈসর্গিক আবেদন আছে। এ রকম জায়গায় আমরা আর পাথর তোলার অনুমতি দেব না। এখানকার শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করছি। পরে বিকেলে সিলেট সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বলেন, অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অবৈধভাবে বালু-পাথর তোলার কারণে পরিবেশের ধ্বংস হচ্ছে। আপাতত পাথর তুলতে দেওয়া হবে না।
গাড়িবহরে বাধার বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ জানান, হঠাৎ কিছু লোক উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকে দেয়। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়ে রাস্তা চলাচলের উপযোগী করে।
শুরুতে জাফলং নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ওঠে সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত গোয়াইনঘাটের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপনসহ যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে গত ১৬ অক্টোবর রফিকুল ইসলামের দলীয় পদ স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। সর্বশেষ ৯ জুন জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় যুবদল। বালু ও পাথর তোলার দায়ে গত ২৫ মার্চ ৩১ জনের বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদ এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, দলের কেউ জড়িত থাকলে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে দলের নাম ভাঙিয়েও অপরাধ করছে।
আজিরের নেতৃত্বে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহরে বাধা প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার বলেন, বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।