জাতীয় পার্টির (জাপা) দশম জাতীয় সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। ২৮ জুন রাজধানীর চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে এই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। তা স্থগিতের কথা জানিয়ে সোমবার জাপার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থান বরাদ্দ সাপেক্ষে সম্মেলনের তারিখ পরবর্তীতে জানানো হবে। সম্মেলন স্থগিতের তথ্য জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের। 

২৮ জুন চীন মৈত্রীতে প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের বাজেট বিষয়ক সেমিনারে যোগ দেওয়ার কর্মসূচি থাকায় হল বরাদ্দ বাতিলের কারণ দেখিয়ে সম্মেলন স্থগিত করেছে জাপা। যদিও দলটির সূত্রের খবর, চেয়ারম্যান পদে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন বর্তমান সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। মহাসচিব পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। তাঁরা জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন। 

গত চার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে অংশ নিয়ে ‌‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ তকমা পেয়েছে শেখ হাসিনার শাসনামলে ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল হিসেবে পরিচিতি পাওয়া জাপা। ৫ আগস্টের পর দলটি অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতাদের বিরোধিতার পর সরকার জাপাকে কোথাও ডাকছে না। এরপর থেকে জি এম কাদের সরকারের সমালোচকে পরিণত হয়েছেন। 

তাঁর দলের কার্যালয়ে, ইফতার মাহফিলে হামলা হয়েছে। এতে চাপে পড়েছে জাপা। জি এম কাদেরও চাপে রয়েছেন। 

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সম্মেলনে জিএম কাদের তিন বছরের জন্য দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২৪ সালের মার্চে রওশপন্থিরা একই নামে পৃথক দল গঠন করেন। কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা জি এম কাদেরকে ছেড়ে যান। তারাও জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এম ক দ র

এছাড়াও পড়ুন:

একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর

সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।

রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।

সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।

তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’

এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ