এক সপ্তাহে কাঁচা মরিচের দাম ৬ গুণ, ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
Published: 11th, July 2025 GMT
এক সময়ের নিত্যসঙ্গী কাঁচা মরিচ যেন এখন বিলাসদ্রব্য। নওগাঁয় মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই ঝালপণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ। যে মরিচ খুচরা বাজারে বিক্রি হতো ৩০-৪০ টাকায়, আজ তার দাম দাঁড়িয়েছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারেও একই অবস্থা—প্রতিকেজি মরিচ কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। হঠাৎ এই দামবৃদ্ধিতে কাঁচা মরিচ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
আজ শুক্রবার সকালে নওগাঁ পৌর এলাকার সিও অফিস বাজার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। বিক্রেতা ও চাষিদের দাবি, টানা বর্ষণের কারণে মাঠে জমে থাকা পানিতে মরিচের গাছ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেইসঙ্গে জমি কাদায় পরিণত হওয়ায় সময়মতো মরিচ তুলতেও পারছেন না কৃষকরা। এতে বাজারে সরবরাহ হঠাৎ করেই কমে যায়, ফল—দামে আগুন।
শহরের সিও অফিস বাজারে এসেছেন ফারুক আহমেদ। হতাশা ঝরছে কণ্ঠে, ‘এক সপ্তাহ আগেও ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে মরিচ কিনেছি। আজ ২৪০ টাকা কেজি দরে কিনতে হলো। কাল নিয়েছিলাম ১২০ টাকা কেজিতে, আজ দ্বিগুণ। এভাবে চলতে থাকলে তো কাল ৩০০ টাকা কেজি হয়ে যাবে।’
একই ক্ষোভ সিয়াম আহমেদের কণ্ঠেও। তিনি বললেন, ‘চাষিরা মরিচ তুলতে না পারায় দাম বাড়ছে—এটা ঠিক আছে। কিন্তু এই হঠাৎ এমন চড়া দাম কি একমাত্র প্রাকৃতিক কারণেই? ব্যবসায়ীরাও সুযোগ নিচ্ছে। বাজারে অভিযান না চালালে এটা চলতেই থাকবে।’
খুচরা বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বললেন, ‘গত সপ্তাহে ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আজ ভোরে ২০০ টাকা কেজি দরে মরিচ কিনে এনেছি। এখন ২৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি। বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতে পারে।’
এদিকে সদর উপজেলার ব্রুজরুক আতিতা গ্রামের মরিচচাষি রাসেল হোসেন জানালেন, ‘বৃষ্টির আগে হাটে ১০-১৫ টাকা কেজিতে মরিচ বিক্রি করেছি। জমি থেকে মরিচ তুলতেই শ্রমিক খরচ উঠতো না। কিন্তু এখন জমিতে পানি, গাছের ক্ষতি। তুলতেও পারছি না। এটাই সমস্যা।’
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে। কিন্তু সময়মতো উত্তোলন এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় চাষিরা প্রায়ই লোকসানে পড়েন। ফলে সরবরাহে সামান্য ছন্দপতনেই দাম বাড়ে কয়েক গুণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা মৌসুমে মরিচসহ অন্যান্য শাকসবজির উৎপাদনে ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজন উন্নত সংরক্ষণ ব্যবস্থা এবং চাষপদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন। অন্যদিকে, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি রোধে প্রয়োজন নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযানের।
ক্রেতারা বলছেন, নিত্যপণ্যের এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। নয়তো কাঁচা মরিচের মতো প্রতিদিনকার রান্নার উপাদানও হয়ে উঠবে হাতের বাইরে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নওগ
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে
নরসিংদীর পলাশের ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের অবস্থা নাজুক। গ্যাস সংকটের কারনে কেন্দ্রের সাতটি ইউনিটের মধ্যে সব ইউনিটেরই উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. এনামুল হক সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরেই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সংকট চলছে। কিন্তু ঈদুল আজহার পর থেকে গ্যাস সংকটের কারনে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪ নম্বর ইউনিট, ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫ নম্বর ইউনিট ও ৩৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৭ নম্বর ইউনিটের উৎপাদন একেবারে বন্ধ রয়েছে। সরকার সারখানায় গ্যাস সরবরাহ করার কারনে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্যাস বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি, বিকল্পভাবে আমাদের গ্যাস সরবরাহ করার জন্য। গ্যাস সরবরাহ করলেই আমরা পুরো দমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হব।
তিনি আরও বলেন, এ তিনটি ইউনিট পুরোপুরি চালু করার মতো রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩ নম্বর ইউনিটটি অনেক দিন ধরে টারবাইনের রোটারের ব্লেডে সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। তবে এটি মেরামত চলছে, এখন তা শেষ পর্যায়ে। গ্যাস সংযোগ দিলে এটাও উৎপাদনে চলে আসবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের জুন মাসে ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৬ নম্বর ইউনিটে আগুন লেগে এর টারবাইন পুড়ে যায়। সেই থেকে এই ইউনিটটি বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরো বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে ১৯৬৭ সালে ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটটি রাশিয়া টেকনোপ্রম এক্সপার্ট নির্মাণ কাজ শেষ করলে ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে মাত্র ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে এর যাত্রা শুরু করা হয়। পরে ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার অপর ২ নম্বর ইউনিটটি ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে উৎপাদনে আসে। এ দুটি ইউনিটে বার বার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এ দুটি ইউনিটেরও উৎপাদন বন্ধ করে দিযেছে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
সূত্রে জানা যায়, ১ ও ২ নম্বর ইউনিট দুটি ভেঙে নতুন করে অপর নতুন ইউনিট স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।