এক সময়ের নিত্যসঙ্গী কাঁচা মরিচ যেন এখন বিলাসদ্রব্য। নওগাঁয় মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই ঝালপণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ। যে মরিচ খুচরা বাজারে বিক্রি হতো ৩০-৪০ টাকায়, আজ তার দাম দাঁড়িয়েছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারেও একই অবস্থা—প্রতিকেজি মরিচ কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। হঠাৎ এই দামবৃদ্ধিতে কাঁচা মরিচ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।

আজ শুক্রবার সকালে নওগাঁ পৌর এলাকার সিও অফিস বাজার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। বিক্রেতা ও চাষিদের দাবি, টানা বর্ষণের কারণে মাঠে জমে থাকা পানিতে মরিচের গাছ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেইসঙ্গে জমি কাদায় পরিণত হওয়ায় সময়মতো মরিচ তুলতেও পারছেন না কৃষকরা। এতে বাজারে সরবরাহ হঠাৎ করেই কমে যায়, ফল—দামে আগুন।

শহরের সিও অফিস বাজারে এসেছেন ফারুক আহমেদ। হতাশা ঝরছে কণ্ঠে, ‘এক সপ্তাহ আগেও ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে মরিচ কিনেছি। আজ ২৪০ টাকা কেজি দরে কিনতে হলো। কাল নিয়েছিলাম ১২০ টাকা কেজিতে, আজ দ্বিগুণ। এভাবে চলতে থাকলে তো কাল ৩০০ টাকা কেজি হয়ে যাবে।’

একই ক্ষোভ সিয়াম আহমেদের কণ্ঠেও। তিনি বললেন, ‘চাষিরা মরিচ তুলতে না পারায় দাম বাড়ছে—এটা ঠিক আছে। কিন্তু এই হঠাৎ এমন চড়া দাম কি একমাত্র প্রাকৃতিক কারণেই? ব্যবসায়ীরাও সুযোগ নিচ্ছে। বাজারে অভিযান না চালালে এটা চলতেই থাকবে।’

খুচরা বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বললেন, ‘গত সপ্তাহে ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আজ ভোরে ২০০ টাকা কেজি দরে মরিচ কিনে এনেছি। এখন ২৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি। বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতে পারে।’

এদিকে সদর উপজেলার ব্রুজরুক আতিতা গ্রামের মরিচচাষি রাসেল হোসেন জানালেন, ‘বৃষ্টির আগে হাটে ১০-১৫ টাকা কেজিতে মরিচ বিক্রি করেছি। জমি থেকে মরিচ তুলতেই শ্রমিক খরচ উঠতো না। কিন্তু এখন জমিতে পানি, গাছের ক্ষতি। তুলতেও পারছি না। এটাই সমস্যা।’

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে। কিন্তু সময়মতো উত্তোলন এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় চাষিরা প্রায়ই লোকসানে পড়েন। ফলে সরবরাহে সামান্য ছন্দপতনেই দাম বাড়ে কয়েক গুণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা মৌসুমে মরিচসহ অন্যান্য শাকসবজির উৎপাদনে ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজন উন্নত সংরক্ষণ ব্যবস্থা এবং চাষপদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন। অন্যদিকে, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি রোধে প্রয়োজন নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযানের।

ক্রেতারা বলছেন, নিত্যপণ্যের এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। নয়তো কাঁচা মরিচের মতো প্রতিদিনকার রান্নার উপাদানও হয়ে উঠবে হাতের বাইরে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নওগ

এছাড়াও পড়ুন:

৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

সিএমএসএমই ঋণ সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা

ব্যাংকের কার্ড থেকে নগদ, বিকাশে টাকা পাঠানোর নতুন সুবিধা

তিনি জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণে রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে বাজার থেকেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। নিলামের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত। আর এই প্রাইসেই ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার ফলে বাজারে তারল্য বাড়ছে, আর রিজার্ভে যোগ হচ্ছে নিলামে কেনা ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট দুই হাজার ১২৬ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। এসব ডলার দেশের ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ দফায় ডলার কিনেছিল। এর মধ্যে গত ৬ অক্টোবর ৮টি ব্যাংক থেকে নিলামে ১৪০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে,  ২ সেপ্টেম্বর একই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ ব্যাংক থেকে ৪৭.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ১৩ জুলাই ১৮টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে,  একই দরে গত ১৫ জুলাই ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া গত ২৩ জুলাই ডলার কিনেছে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। গত ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫  পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় এবং  গত ১০ আগস্ট ১১টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। এ কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমে গেছে। আর ডলারের দাম আরও কমে গেলে রপ্তানিকারকরা একদিকে সমস্যায় পড়বে অপরদিকে রেমিট্যান্স আয় বৈধ পথে আসা কমে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। যা খুবই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তাতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকবে ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।

গত ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই ডলারের দর নির্ধারণ করছে।

ঢাকা/নাজমুল/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলকে আবার যুদ্ধ শুরুর অনুমতি দেওয়া হতে পারে: ট্রাম্প
  • ত্বক সতেজ রাখতে এই ফল খান
  • রাকিবের রঙিন মাছের খামার, মাসে আয় ৪৫ হাজার টাকা
  • যুদ্ধবিরতির পরও শান্তি ফিরছে না গাজায়
  • বিশ্ব অর্থনীতিতে ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব এখনো তেমন একটা পড়েনি: আইএমএফ
  • এক ছাতার নিচে ৪৮ ব্র্যান্ডের ফার্নিচার, ৫-১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়
  • ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক
  • নবম-দশম শ্রেণির সাড়ে পাঁচ কোটি পাঠ্যবই ছাপাবে সরকার
  • কুষ্টিয়ায় দুই দিনে ১৪ কোটি টাকার কারেন্ট জাল জব্দ
  • পুতিন যুদ্ধ না থামালে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেবেন ট্রাম্প