বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম বলেছেন, “তারেক জিয়ার সঙ্গে লন্ডন বৈঠকের পর বিএনপির সুর কিছুটা বদলেছে। তারা বলছে, সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিতে চায়-এতে তাদের আপত্তি নেই। তবে, এই তারিখ নিয়েও সরকার ‘ইফ’ এবং ‘বাটস’ দিয়ে রেখেছে। খোলাসা করে এখন পর্যন্ত কিছু বলেনি। আমরা মনে করি, এই গিভ অ্যান্ড টেকের লন্ডন মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েও সঙ্কট দেখা দেবে।”

শনিবার (২১ জুন) বিকেলে কিশোরগঞ্জে জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। শহরের একরামপুরের একটি কনভেনশন সেন্টারে বামপন্থী এ রাজনৈতিক দলটির জেলা শাখার সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলটি তিন শতাধিক সদস্য অংশ নেন।

শাহ আলম বলেন, “দেশকে বিপদমুক্ত এবং মানুষকে ভীতিমুক্ত করতে হলে নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী। জাতি দ্রুত দেশে জাতীয় নির্বাচন চায়। এটা না হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না, জানমালের নিরাপত্তা আসবে না এবং অর্থনীতিতে বিনিয়োগ হবে না। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলতে থাকবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে। যা এখনই আমরা দেখতে পাচ্ছি।”

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই উপদেষ্টা সরকারের একটাই দায়িত্ব; সেটা হলো নির্বাচন দেওয়া। নূন্যতম নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার সংস্কার শেষে অবিলম্বে নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু তারা টার্নিমাল-বন্দর-করিডোরের মতো সংবেদনশীল এজেন্ডা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের এজেন্ডা দেখে সন্দেহ বাড়ছে। নতুন নতুন এজেন্ডা নিয়ে আসছেন তারা। এগুলো চলতে থাকলে দেশের সার্বভৌমত্ব শেষ হয়ে যাবে। দেশটাও শেষ করে দেবে। আমাদের কাঙ্খিত নির্বাচনটাও হবে না। এসব নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।”

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অনেকে বলছে, এটি বিপ্লব, দ্বিতীয় স্বাধীনতা। যে যেভাবে পারছেন নানাভাবে বিশ্লেষণ করছেন, বিভিন্ন নামে ডাকছেন। আমরা মনে করি, এটি বিপ্লবও না বা দ্বিতীয় স্বাধীনতাও না। এটি স্বৈরাচারবিরোধী একটা লড়াই হয়েছে। যার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশে যে স্বৈরাচারী সরকার ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছিল; ছাত্র-শ্রমিক-জনতা তার বিরুদ্ধে লড়াই করে নতুন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন তৈরি করেছে। নির্বাচনের মাধ্যমেই সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব।”

বর্তমান ইউনূস সরকারের মূল্যায়ন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিপিবি সভাপতি বলেন, “তারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মব সন্ত্রাস চলছে। শুধু চলছে না, এগুলো চালাতে দেওয়া হচ্ছে। সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখছে না। এসব কারণে দেশে বিনিয়োগ আসছে না। বারবার নানা বিষয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে। মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যা কোনোভাবে কাম্য নয়।”

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যারা অপরাধী তাদের বিচার হওয়া উচিত। যারা অপরাধে জড়িত, তাদের ন্যায়সঙ্গত বিচার হওয়া দরকার। তবে দল নিষিদ্ধের পক্ষে আমরা নই। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকেও নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। তাদেরকে তো সরকার নানাভাবে সুযোগ ও অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যা সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন করছে।”

এর আগে জেলা সিপিবির সধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা সিপিবির সভাপতি আবদুর রহমান রুমী। বক্তব্য দেন- জেলা কৃষক সমিতির
সভাপতি এনামুল হক ইদ্রিস, জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ সরকার, সিপিবি নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এনামুল হক, আবুল হাশেম, মোস্তফা কামাল নান্দু, সেলিম উদ্দিন খান ও ফরিদ আহমেদ।

ঢাকা/রুমন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ঘূর্ণিঝড় কালমেগির তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড ফিলিপাইন, নিহত ৬৬

ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘কালমেগি’র তাণ্ডবে অন্তত ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন চার লাখের বেশি মানুষ। 

স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বুধবার (৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

আরো পড়ুন:

জ্যামাইকায় আঘাত হানতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়

ঘূর্ণিঝড় মন্থা, বন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কালমেগির প্রভাবে দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় সেবু দ্বীপের সব শহর প্লাবিত হয়েছে। কর্দমাক্ত বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে গাড়ি, ট্রাক এমনকি বিশাল আকারের কনটেইনারও।

বুধবার স্থানীয় রেডিও চ্যানেল ডিজেডএমএম-কে এক সাক্ষাৎকারে সেবুর প্রতিরক্ষা অফিসের ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর রাফায়েলিটো আলেজান্দ্রো জানান, কেবল সেবুতেই এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, টাইফুনের প্রভাবে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ জনে। আরো ২৬ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

সরকারি মৃতের সংখ্যায় সেবুর দক্ষিণে মিন্দানাও দ্বীপে একটি সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় সেটির ছয়জন ক্রু সদস্য রয়েছেন, যা ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তা করার জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল।

মঙ্গলবার আগুসান দেল সুরের কাছে সামরিক হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। সাহায্যের জন্য পাঠানো চারটি হেলিকপ্টারের মধ্যে এটি একটি ছিল।

ফিলিপাইনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, হেলিকপ্টারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যার ফলে তাৎক্ষণিকভাবে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যা পাইলট ও ক্রুদের বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয়ভাবে টিনো নামে পরিচিত টাইফুনটি মঙ্গলবার ভোরে ফিলিপাইনের স্থলভাগে আঘাত হানার পর থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছে, তবে ৮০ মাইল প্রতি ঘণ্টা (১৩০ কিমি/ঘন্টা) এরও বেশি বেগে বাতাস বইতে থাকে।

আজ বুধবার এটি ভিসায়াস দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চল পেরিয়ে দক্ষিণ চীন সাগরের উপর দিয়ে চলে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

প্রাদেশিক গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “সেবুর পরিস্থিতি সত্যিই নজিরবিহীন। আমরা ভেবেছিলাম প্রবল বাতাসই বিপদ ডেকে আনবে। কিন্তু... প্রকৃত ঝুঁকির কারণ হচ্ছে পানি। বন্যার পানিতে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ মানুষই পানিতে ডুবে মারা গেছেন।

ত্রাণ প্রচেষ্টা সহজতর করার জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বারিকুয়াত্রো সেবুতে দুর্যোগ পরিস্থিতি ঘোষণা করেছেন। সেবুতে আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, অনেক ছোট ঘর স্রোত ভেসে গেছে এবং বন্যার পানিতে শহর জুড়ে কাদার ঘন স্তুর পড়েছে। উদ্ধারকারী দল ঘরের ভেতরে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে নৌকা ব্যবহার করেছে।

বুধবার জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুসারে, এই দুর্যোগে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ফিলিপাইনে প্রতিবছর গড়ে অন্তত ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। পরপর দুটি টাইফুনে এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং অবকাঠামো ও ফসলের ক্ষতি হওয়ার মাত্র এক মাস পর সর্বশেষ এই ঘটনাটি ঘটল।

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে সুপার টাইফুন রাগাসা, যা স্থানীয়ভাবে নান্দো নামে পরিচিত, আঘাত হানে এবং তার পরেই আঘাত হানে টাইফুন বুয়ালোই, যা স্থানীয়ভাবে ওপং নামে পরিচিত।

; যা প্রায়ই এমন অঞ্চলে তাণ্ডব চালায় যেখানে লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মাঝে বসবাস করে। দেশটির আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ভারিলা বলেন, টাইফুন কালমেগির মধ্য দিয়ে দেশটি ইতোমধ্যে সেই বার্ষিক গড় সংখ্যায় পৌঁছে গেছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে আরও তিন থেকে পাঁচটি ঝড় আসার আশঙ্কা রয়েছে।

ফিলিপাইন গত সেপ্টেম্বরে দুটি শক্তিশালী ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছিল, যার একটি ছিল সুপার টাইফুন রাগাসা। ওই সময় ফিলিপাইনে তাণ্ডব চালিয়ে প্রতিবেশী তাইওয়ানেও আঘাতে রাগাসা। এতে তাইওয়ানে অন্তত ১৪ জন নিহত হন।

প্রতি বছর ফিলিপাইনে গড়ে ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে।

পরপর দুটি টাইফুনে এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং অবকাঠামো ও ফসলের ক্ষতি হওয়ার মাত্র এক মাস পর সর্বশেষ এই ঘটনাটি ঘটল।

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে সুপার টাইফুন রাগাসা, যা স্থানীয়ভাবে নান্দো নামে পরিচিত, আঘাত হানে এবং তার পরেই আসে টাইফুন বুয়ালোই, যা স্থানীয়ভাবে ওপং নামে পরিচিত।

আগের মাসগুলোতে, বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়, যা নিম্নমানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও বিক্ষোভের জন্ম দেয়, যার জন্য দুর্নীতিকে দায়ী করা হয়।

৩০ সেপ্টেম্বর, মধ্য ফিলিপাইনে ৬.৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর কয়েক ডজন মানুষ নিহত ও আহত হয়, যার ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল সেবুতে।

টাইফুন কালমায়েগি ভিয়েতনামে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যেখানে ইতিমধ্যেই রেকর্ড বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ