টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্রের সফর বাংলাদেশ শুরু করেছে ড্র করে। ৪ পয়েন্ট বাংলাদেশের নামের পাশে যুক্ত হয়ে গেছে। অথচ সুযোগ ছিল শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে গল টেস্টে ম্যাচ জেতার।

সেজন্য একটু হিসাব কষা, ঝুঁকি নেওয়া ও সাহসিকতা দেখাতে হতো। সেদিকে না গিয়ে বরং নিরাপদ ক্রিকেটকেই বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ। ফলাফল: ম্যাচ ড্র। যা শ্রীলঙ্কার জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও বাংলাদেশের জন্য উল্টো হওয়ার কথা—জয়ের সুযোগ হাতছাড়া! তবুও এই ড্র-টিকেই হাবিবুল বাশার ‘মোরাল ভিক্টরি’ বলছেন। কেন?

উত্তরটা তার মুখ থেকেই শুনুন, ‘‘তৃপ্তি তো ছিলই। আমার মনে হয় সন্তুষ্টির জায়গাও ছিল। আমার সন্তুষ্টির জায়গা হচ্ছে, এরকম উইকেটে আমরা ওদেরকে অলআউট করতে পেরেছি (প্রথম ইনিংসে)। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের পর শ্রীলঙ্কা যেভাবে শুরু করেছিল, ওরা যদি সাড়ে পাঁচশ বা ছয়শ করে ফেলত, উল্টো তখন আমরা চাপে পড়ে যেতাম। এরকম উইকেটে একটা দলকে অলআউট করাও বড় ব্যাপার। আমরা সেটা করতে পেরেছি, যেটা ভালো দিক। শেষের দিকে (দ্বিতীয় ইনিংসে) ৪ উইকেট নেওয়াও আমাদের জন্য মোরাল ভিক্টরি। এজন্য বলব, আমি সন্তুষ্ট এবং এই টেস্ট ম্যাচটা বাংলাদেশ ভালো খেলেছে।’’

আরো পড়ুন:

আগামী বছরে রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ঘোষণা

বিশ্বকাপের টিকিট পেলো কানাডা

তবে শ্রীলঙ্কা ফল হওয়ার মতো উইকেট না বানানোয় অবাক হয়েছেন হাবিবুল, ‘‘আমার প্রত্যাশা ছিল, গলে ওরা স্পোর্টিং উইকেট বানাবে, যেখানে ফল আসতে পারে। যেহেতু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ, আমার মনে হয় সবাই চাইবে ঘরের মাঠে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সুযোগটা নিতে। এই উইকেটে যদি ছয় দিন খেলা হতো, তাহলে হয়তো ফল হতো। পাঁচ দিনে আসলে এরকম উইকেটে ফল আসা কঠিন।’’

শেষ দিনে বাংলাদেশ ১৮৭ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে। আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিংয়ে আক্রমণাত্মক ভাব ছিল না। বরং দেখে শুনে, স্বস্তিতে খেলার মানসিকতা ছিল। মুশফিকুর ৪৯ রানে আউট হলে বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচ বন্ধ থাকে। এরপর শান্তর সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিল দল। অথচ তখনও বাংলাদেশের লিড আড়াই শ’ পেরিয়ে। দেড় সেশন বাকি ছিল খেলা। আগেভাগে ডিক্লেয়ার করলে বোলাররা অন্তত বাড়তি ১৫-২০ ওভার বোলিংয়ের সুযোগ পেতেন। কেন বাংলাদেশ এই সুযোগটি নিল না, সেটাই অবাক করছে অনেককে।

অন্তত ২০ ওভার আগে ডিক্লেয়ার করলে বাংলাদেশের পক্ষেই ফল আসত, জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হতো। হাবিবুলের কাছে এমনটা মনে হচ্ছে না, ‘‘শেষ দিনে ৪ উইকেট পাওয়ার পর আমাদের হয়তো মনে হয়েছে, বাংলাদেশ আগেভাগে ডিক্লেয়ার করলে জেতার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারত। আমার তা মনে হয়। কারণ পঞ্চম দিনে উইকেট ততটা ব্রেক করেনি। উইকেট ফ্ল্যাট ছিল সকাল থেকে—খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত যখন ব্যাটিং করছিল, তখন কিন্তু দেখা গেছে উইকেট একদম ফ্ল্যাট। সেখানে আসলে কত রানে ছেড়ে দেওয়া যায়, সেই ঝুঁকিটা নিলে কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারত।’’

‘‘ওই সময়ে শান্ত কিংবা মুশফিকুর রহিম আউট হয়ে যেত, তাহলে আমরা চাপে পড়ে যেতাম। এখন হয়তো ভাবছি, সুযোগটা নিতে পারতাম। তারা চেষ্টা করেছে, আমার কাছে মনে হয়। আগে ডিক্লেয়ার করলেও খুব বেশি পরিবর্তন হতো বলে মনে হয় না,’’—যোগ করেন হাবিবুল। 

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড ক ল য় র করল র জন য উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

ইশরাকের নামাজের সময়সূচি ও বিধান

ইশরাকের নামাজ ইসলামে একটি নফল নামাজ, যা ফজরের নামাজের পর সূর্যোদয়ের কিছু সময় পরে আদায় করা হয়। এটি সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা (ঐচ্ছিক সুন্নত) হিসেবে বিবেচিত এবং এর ফজিলত অনেক।

মহানবী (সা.) এই নামাজের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর সন্তুষ্টি ও বিশেষ পুরস্কার অর্জন করতে পারেন।

ইশরাকের নামাজের সময়সূচি

ইশরাকের নামাজের সময় ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় এবং সূর্যোদয়ের পর শেষ হয়। নিচে এর সময়সূচি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:

শুরুর সময় : ইশরাকের নামাজ সূর্যোদয়ের প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর থেকে শুরু হয়, যখন সূর্য সম্পূর্ণভাবে দিগন্তের উপরে উঠে যায়। এই সময়টি সাধারণত ফজরের নামাজের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু হয়। (ফিকহুস সুন্নাহ, সাইয়্যিদ সাবিক, পৃষ্ঠা: ১৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)

ধরা যাক, ফজরের সময় ঢাকায় সকাল ৪:৩০ এ শুরু হয় এবং সূর্যোদয় ৫:৪৫ এ। তাহলে ইশরাকের নামাজ সকাল ৬:০০ থেকে শুরু করা যায়।

শেষ সময়: ইশরাকের নামাজ জোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগে পড়তে হয়। সাধারণত সূর্যোদয়ের পর থেকে দুপুরের আগ পর্যন্ত এই নামাজ পড়া যায়। তবে, সর্বোত্তম সময় হলো সূর্যোদয়ের ১৫-৩০ মিনিট পর, যখন সূর্যের আলো পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ে। (আল-লুলু ওয়াল মারজান, পৃষ্ঠা: ১৮৬, দারুল ইফতা প্রকাশনী, ২০০৫)

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫সময় নির্ধারণের নীতি

ইশরাকের সময় স্থানভেদে ভিন্ন হয়, কারণ সূর্যোদয়ের সময় ভৌগোলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য স্থানীয় নামাজের সময়সূচি অনুসরণ করা উচিত। সূর্যোদয়ের ঠিক সময়ে নামাজ পড়া মাকরুহ, তাই সূর্য সম্পূর্ণভাবে ওঠার পর পড়া উচিত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮১)

ইশরাকের নামাজের বিধান

রাকাত সংখ্যা: ইশরাকের নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত পড়া হয়। তবে, ৪ বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়, কারণ এটি নফল নামাজ।

প্রকৃতি: এটি সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা, অর্থাৎ ঐচ্ছিক সুন্নত। তবে নবীজি (সা.) এটি পড়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন।

নিয়ত: ইশরাকের নামাজের নিয়ত করা হয়, যেমন: “আমি ইশরাকের দুই রাকাত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি।” (ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারব, শাইখ ইবনে উসাইমিন, পৃষ্ঠা: ২০৮, দারুল ইফতা প্রকাশনী, ১৯৯৮)

ইশরাকের নামাজের ফজিলত

ইশরাকের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে। আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতে পড়ে, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে বসে থাকে এবং তারপর দুই রাকাত (ইশরাক) নামাজ পড়ে, তার জন্য একটি হজ্জ ও উমরাহর সওয়াব রয়েছে।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস:: ৫৮৬)

আরও পড়ুননামাজ আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির একটি ধাপ১৭ জুলাই ২০২৫ব্যবহারিক পরামর্শ

ফজরের পর প্রস্তুতি: ফজরের নামাজের পর মসজিদে বা বাড়িতে জিকির করে সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা করা। এটি হাদিসে উল্লিখিত ফজিলত অর্জনের সুযোগ দেয়।

সময়ের পরিকল্পনা: সকালের ব্যস্ততার মধ্যে ইশরাকের জন্য ৫-১০ মিনিট সময় রাখা। সকাল ৬:০০-৬:৩০ এর মধ্যে এটি পড়া সুবিধাজনক।

শিশুদের শিক্ষা: পরিবারে শিশুদের ইশরাকের নামাজ শেখানো, যাতে তারা এই সুন্নাহর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে।

মানসিক প্রস্তুতি: ইশরাকের নামাজ পড়ার আগে আয়াতুল কুরসি বা সুরা ইখলাস পড়ে মনকে আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুত করা।

সতর্কতা

মাকরুহ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়ের ঠিক সময়ে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা, কারণ এটি নিষিদ্ধ সময়। সূর্য সম্পূর্ণ উঠে যাওয়ার পর পড়া উচিত।

নিয়তের স্পষ্টতা: ইশরাকের নিয়ত স্পষ্টভাবে করা, যাতে এটি নফল হিসেবে গণ্য হয়।

নিয়মিততা: ইশরাকের নামাজ নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করা উচিত, বিশেষ করে সপ্তাহে কয়েকবার, যাতে সুন্নাহর পুরস্কার পাওয়া যায়। কারণ, আমল ধারাবাহিকভাবে করাও একটি সুন্নাত।

ইশরাকের নামাজের মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেন এবং এটি দিনের শুরুতে আধ্যাত্মিক শক্তি যোগায়। হাদিসে উল্লেখ আছে, ইশরাকের নামাজ একটি হজ্জ ও উমরাহর সমান পুরস্কার বয়ে আনে। এছাড়া, এটি মানসিক শান্তি ও দিনের কাজে বরকত আনে। (আল-ফিকহুল মুয়াসসার, মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, পৃষ্ঠা: ১৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)

আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ