বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেছেন, ২০২৪ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিমানবাহিনী শুরু থেকেই ফেনীবাসীর পাশে ছিল। হেলিকপ্টারে উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ, পুনর্বাসনসহ ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পুনর্নির্মাণে কাজ করেছে। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও যেকোনো দুর্যোগে ফেনীবাসীর পাশে থাকবে বিমানবাহিনী।

সোমবার সকালে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুরে হাবিব উল্যাহ খান উচ্চবিদ্যালয়ে নবনির্মিত ‘শাহীন ভবন’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনী প্রধান এ কথা বলেন। একই অনুষ্ঠানে ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়।

বিমানবাহিনী প্রধান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থীসংখ্যা ও স্থানীয় মানুষের চাহিদা বিবেচনায় চারতলা ভিত্তির ওপর দুই তলাবিশিষ্ট ‘শাহীন ভবন’ নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটি দুর্যোগকালীন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করেছে বিমানবাহিনী ঘাঁটি বাশার ও ঘাঁটি এ কে খন্দকার।

বন্যাকালে বিমানবাহিনীর কার্যক্রম প্রসঙ্গে এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেন, ‘পানিবন্দী গর্ভবতী নারীদের উদ্ধার করে নিরাপদে সন্তান প্রসব, নবজাতকদের হেলিকপ্টারে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া, শিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা—সবকিছুতেই বিমানবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।’

হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুল, মাদ্রাসা, এতিমখানা, ধর্মীয় উপাসনালয়, সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণ ও সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী বিমানবাহিনী প্রধান (প্রশাসন) এয়ার ভাইস মার্শাল রুসাদ দীন আছাদ ও বিমানবাহিনী ঘাঁটি বাশারের এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ খায়ের উল আফসার।

স্বাগত বক্তব্য দেন বিমানবাহিনী ঘাঁটি বাশারের প্রশাসনিক শাখার অধিনায়ক গ্রুপ ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মোহাম্মদ রাফি। বক্তব্য দেন ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম এবং হাবিব উল্যাহ খান উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাফর উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে নবনির্মিত ভবনসহ ১২টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আর্থিক সহায়তা হিসেবে চেক হস্তান্তর করেন বিমানবাহিনী প্রধান। পরে তিনি দুর্গাপুর সিংহনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নুরুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসার উন্নয়নকাজ পরিদর্শন করেন।

অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, সেনা ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ফেনী জেলার পাশাপাশি প্রতিবেশী নোয়াখালী জেলায়ও বিমানবাহিনী বন্যা-পরবর্তী বিভিন্ন উন্নয়নকাজ পরিচালনা করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

হজরত আদম (আ.) এবং পৃথিবীতে তাঁর প্রথম আবাস

আমাদের এই পৃথিবীতে মানবজাতির ইতিহাস শুরু হয়েছিল নবী হজরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালা যখন ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করলেন, ‘আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে যাচ্ছি,’ তখনই মূলত সূচনা ঘটে মানব ইতিহাসের। ফেরেশতারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আপনি কি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে সেখানে ঝগড়া-ফাসাদ ও রক্তপাত ঘটাবে?’

আল্লাহ তায়ালা তখন বলেন, ‘আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।’ (সুরা বাকারা, ৩০-৩৪)

কোরআনে উল্লেখ আছে, আল্লাহ তাঁকে সৃষ্টি করেছেন ‘শুষ্ক কাদামাটি থেকে, যা রূপান্তরিত হয়েছিল কালচে শুকনো মাটিতে।’ (সুরা হিজর, ২৬)

আল্লাহ নিজ হাতে আদম (আ.)-এর অবয়ব তৈরি করেন, তাতে প্রাণ ফুঁকে দেন এবং ফেরেশতাদের আদেশ করেন তাকে সেজদা করতে।

আল্লাহ নিজ হাতে আদম (আ.)-এর অবয়ব তৈরি করেন, তাতে প্রাণ ফুঁকে দেন এবং ফেরেশতাদের আদেশ করেন তাকে সেজদা করতে। সকল ফেরেশতা তাকে সেজদা করলেও শয়তান অহংকারের কারণে তা অস্বীকার করে এবং চিরকালীন অভিশপ্ত হয়ে যায়। এই অহংকার-অবাধ্যতার প্রতিচ্ছবি পরবর্তীকালে মানবজীবনের পরীক্ষার অংশ হয়ে যায়। (সুরা হিজর-এর ব্যাখ্যা, তাফসিরে তাবারি)

জান্নাতে আদম (আ.) শান্তি ও আনন্দে জীবনযাপন করছিলেন। আল্লাহ তাঁর জন্য সঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করলেন হাওয়া (আ.)-কে। উভয়েই জান্নাতের ফলভরা বাগানে নির্ভাবনায় ছিলেন, যতক্ষণ না শয়তান তাঁদের প্রতারণায় ফেলে দেয়। শয়তান আল্লাহর নিষেধ করা গাছের ফল খেতে প্রলুব্ধ করে। ফলে তাদের জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়।

আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সবাই নামো পৃথিবীতে, একে অপরের শত্রু হিসেবে। সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে বাসস্থান ও জীবিকা কিছু সময়ের জন্য।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ২৪)

আরও পড়ুনআদম (আ.)–কে যে দোয়া শিখিয়ে দেন আল্লাহ ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থের ভাষ্যমতে, আদম (আ.) অবতরণ করেন পৃথিবীর দক্ষিণ প্রান্তে, বর্তমান শ্রীলঙ্কার সেরেন্দিব বা আদম ’স পিক নামক এক পাহাড়ে। ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে ইমাম তাবারি ও ইবনে কাসিরের বর্ণনা অনুযায়ী, আদম (আ.)-এর পায়ের ছাপ সেই পাহাড়ের চূড়ায় দীর্ঘকাল ধরে মুসলিম, বৌদ্ধ ও হিন্দু ঐতিহ্যে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে হাওয়া (আ.) অবতরণ করেন আরবের জেদ্দা শহরে, যার নামের অর্থই ‘দাদি’। ইসলামি ইতিহাসবিদ ইমাম সুয়ুতি উল্লেখ করেন, বহুদিন পর তাঁদের পুনর্মিলন ঘটে মক্কার নিকটে আরাফাতের ময়দানে। সে কারণেই এ স্থানটির নাম ‘আরাফাত’, যার অর্থ ‘পরিচিত হওয়া’। (ইমাম তাবারি, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক; ইমাম ইবনে কাসির, কাসাসুল আম্বিয়া; ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানসুর)

পৃথিবীতে এসে আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) মানবজীবনের প্রথম অধ্যায় রচনা করেন। আল্লাহ তাদের কৃষিকাজ, পোশাক তৈরির জ্ঞান এবং পারস্পরিক সহাবস্থানের শিক্ষা দেন। ইবনে কাসির (রহ.) বর্ণনা করেন, আদম (আ.) ছিলেন প্রথম নবী ও প্রথম শিক্ষক যিনি তার সন্তানদের আল্লাহর একত্ববাদ ও ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা দিতেন।

মানবজাতির প্রথম সংঘাতও ঘটে তাদের সন্তান কাবিল ও হাবিলের মাধ্যমে। এই ঘটনাই মানবসমাজে ন্যায়বিচার ও অনুশোচনার প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে গৃহীত হয়। (সুরা মায়িদাহ, ২৭–৩১; তাফসিরে ইবনে কাসির; ইমাম নববি, শারহে মুসলিম)

আরও পড়ুনআদম-হাওয়া (আ.)-এর বিয়ে ও সন্তান১৭ নভেম্বর ২০২৪মানবজাতির প্রথম সংঘাতও ঘটে তাদের সন্তান কাবিল ও হাবিলের মাধ্যমে। এই ঘটনাই মানবসমাজে ন্যায়বিচার ও অনুশোচনার প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে গৃহীত হয়।

কোনো কোনো তাফসিরকার উল্লেখ করেছেন, আদম (আ.) পরবর্তীতে মক্কা অঞ্চলে চলে আসেন এবং সেখানে প্রথম ইবাদতের ঘর বাইতুল্লাহ নির্মাণ করেন। ইমাম ইবনে কাসির ও ইমাম কুরতুবির মতে, এই ঘরটি পৃথিবীর প্রথম ইবাদত কেন্দ্র, যা পরে নবী ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) পুননির্মাণ করেন। (ইবনে কাসির, কিসাসুল আম্বিয়া; কুরতুবি, তাফসিরে সুরা আল-বাকারা)

ইসলামি বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী যদিও পৃথিবীতে আদম (আ.)-এর পদচিহ্ন সম্পর্কিত স্থানগুলোর নির্দিষ্ট কোনো ভিত্তি নেই, তবু শ্রীলঙ্কার আদম’স পিক এখনো বহু মুসলমানের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত। অন্যান্য ধর্মের মানুষও এ স্থানকে পবিত্রজ্ঞান করে থাকে।

জেদ্দায় হাওয়া (আ.)-এর সমাধিস্থল হিসেবে পরিচিত স্থানের ঐতিহ্য ইসলামি ঐতিহাসিক সূত্রে বিদ্যমান, যদিও আধুনিক কালে তা চিহ্নিত নয়। আরাফাত ময়দান আজও হজের অন্যতম কেন্দ্র; যেখানে লক্ষ লক্ষ মুসলমান আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর পুনর্মিলনের স্মৃতিতে দাঁড়িয়ে তাওবা করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে।

আরও পড়ুনহজরত আদম (আ.) বিশ্বের প্রথম নবী০৭ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা
  • হাইকোর্টের বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার অপসারিত
  • হজরত আদম (আ.) এবং পৃথিবীতে তাঁর প্রথম আবাস
  • ডেমোক্র্যাটদের জয়, অর্থনৈতিক সমস্যা—ট্রাম্পের রিপাবলিকানদের জন্য বড় ধাক্কা
  • সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি, পদ ১০ হাজার ২১৯, প্রথম ধাপে ৬ বিভাগে
  • হাসিনার বিচারের রায় হচ্ছে আগামী সপ্তাহে: মাহফুজ 
  • দেশভাগ ত্রয়ী: শেকড়চ্যুত, ঠিকানাশূন্য মানুষের গল্প