খাবারের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে ইসরায়েলের গুলিতে প্রাণ হারালেন মা
Published: 24th, June 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজার বাসিন্দা ৪২ বছর বয়সী রিম জেইদান। তিনি দুই সন্তান মেরভাত ও আহমেদকে নিয়ে খাবারের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে খান ইউনিস থেকে রাফায় যান। শেষমেশ তারা খাবার পাননি। পরিবার বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী রিমকে হত্যা করেছে।
সূর্যাস্তের ঠিক পরে রিম সন্তানদের নিয়ে রাফার ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হন। রুটি তৈরির জন্য এক ব্যাগ নিয়ে আটা পাওয়ার আশায় ছিলেন রিম। ৫ বছর বয়সী মেয়ে রাজান বিস্কুটের আশায় ছিল। এজন্য রিম একটি ব্যাগও সঙ্গে নেন।
আহমেদ ও মেরভাত এনবিসি নিউজকে জানায়, মায়ের সঙ্গে তারা রাফার একটি তাঁবুতে আশ্রয় পায়। ততক্ষণে বিতরণ কেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরি হয়ে গেছে। রিম কেন্দ্রের কাছে গিয়ে শুনতে পেলেন কিছুক্ষণ আগে সেখানে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তখন মা ভয়ে ফিরে আসেন।
তাঁবুতে যখন তারা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, হঠাৎ গুলি করতে শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। গুলিবর্ষণ থামলে তারা তাঁবু থেকে বেরিয়ে হাঁটা শুরু করে। ভোর ৪টার দিকে তারা আধা মাইল দূরের ত্রাণকেন্দ্রে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই মেরভাত তার মায়ের চিৎকার শুনে পেছনে তাকাল। সে দেখতে পেল মা মাটিতে পড়ে আছেন। মুখ রক্তে ভেজা।
মেরভাত জানায়, ‘আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম, কী করব ভাবতে পারছিলাম না, শুধু আমার মাকে রক্তের সাগরে ভাসতে দেখলাম।’
মেরভাত চিৎকার করে বলেছিল, ‘ওরা তোমাকে হত্যা করেছে মা। কারণ তুমি আমাদের খাবার আনতে চেষ্টা করছ।’
অবরুদ্ধ গাজায় মঙ্গলবারও ৭০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তাদের মধ্যে ৫২ জনই খাবারের আশায় বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে ছিলেন। রাফায় ইসরায়েলি সেনারা মঙ্গলবার ২৭ ক্ষুধার্তকে হত্যা করেছে। এছাড়া গাজার মধ্যাঞ্চলে সালাহ আল-দিন স্ট্রিটে কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৫৬ হাজার ৭৭ জন নিহত ও ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৮ জন আহত হয়েছেন।
আলজাজিরা জানায়, গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষ হত্যা চলছেই।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, খাবার নিতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত ও ১,০০০ জন আহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি গতকাল বলেন, ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলো একেকটি মৃত্যুফাঁদ।
অন্যদিকে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি ড্রোন থেকে হামলা হলে একটি গাড়ি ধ্বংস হয়। সেখানে তিনজন মারা যান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ন হত ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: ২১ জুলাইকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ পালনের দাবি
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই দিনটিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ হিসেবে পালন করার দাবি জানিয়েছে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার। এ ছাড়া তারা বলেছে, নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদাসহ প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায়।
হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে—ঘটনার সঠিক তদন্ত করতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের কবর সংরক্ষণ করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে উত্তরায় একটি মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন দুর্ঘটনায় নিহত নাজিয়া ও নাফির বাবা আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর যখন বাচ্চাদের পেয়েছেন, তখন তাঁরা তাদের চিনতে পারেননি। অনেক দিন হলো তাঁরা ঘরে রান্না করতে পারেন না। তাঁর স্ত্রী বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, কারও সঙ্গে দেখা করেন না।
নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবির প্রসঙ্গে আশরাফুল ইসলাম বলেন, শুধু পাইলট আর শিক্ষক শহীদ হতে পারেন না। সবাই শহীদ। সবাই ইউনিফর্ম পরা ছিল। শিক্ষার্থীরা কেন বৈষম্যের শিকার হবে?
নিহত তাসমিয়া হকের বাবা নাজমুল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, সন্তানদের মধ্যে যারা আহত, তাদের অনেকের অবস্থা এতটাই খারাপ যে তারা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কি না তা তাঁরা জানেন না। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা খুবই উদ্বিগ্ন। আবার অনেকে আছে, যাদের দীর্ঘ সময় চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হবে। কয়েকজন আহত শিক্ষক আছেন, যাঁরা আর কখনো কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারবেন না, অথচ তাঁদের ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
আরও পড়ুনমাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: দগ্ধ দুই শিশু চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলে, তারা অবর্ণনীয় ট্রমার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। অনেকের জীবন-জীবিকা থমকে গেছে। বর্তমানে স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউ তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা তিনজন শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।
রেজাউল করিমের ছেলে সামিউল এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়। এই বাবা বলেন, তাঁরা ভালো নেই। দুই মাস ধরে তাঁরা ঘুমাতে পারেন না। এ দেশে এত মানুষ, তবু পাশে কি কাউকে তাঁরা পাবেন না? এই মুহূর্তে তাঁদের স্কুলের বারান্দায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু এখন এখানে। সরকার তাঁদের পাশে আসেনি। চোখের সামনে ছেলেকে লুটিয়ে পড়তে দেখেছেন তিনি, যা ভুলতে পারেন না।
সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, লাশের সঙ্গে একটা কপি পেয়েছেন। এরপর আর কারও কোনো যোগাযোগ নেই।
আরও পড়ুনমাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে১১ আগস্ট ২০২৫সানজিদা বেলায়েতের মেয়ে জায়ানা মাহবুব এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। এই মা বলেন, ‘আমার মেয়েটা পরিপাটি ছিল। হাতে মেহেদি দিত, ব্রেসলেট পরত। ওর হাত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সে বলে, হাত জম্বির মতো হয়ে গেছে। ওর প্রশ্নের উত্তর আমি কী দেব? এই বাচ্চাগুলোকে সমাজ কোন চোখে দেখবে? কারও হাতে কলম উঠবে না।’
সানজিদা বেলায়েত আরও বলেন, আরেক বাচ্চা বসতে পারে না। তার ফিজিওথেরাপি দরকার। সেই বাচ্চার বাবা নেই। সে কার কাছে যাবে? আবিদুর রহিম নামের এক বাচ্চা কী যে কষ্ট পাচ্ছে। তার শরীরে আর কোনো জায়গা নেই যে চামড়া নেবে। একটা বাচ্চা মানসিক সমস্যা নিয়ে আবার ভর্তি হয়েছে। শব্দ শুনলে সে চিৎকার দেয়। অনেকে কানেও শোনে না। কয়েকজন শিক্ষকও আহত। তাঁরা কি কর্মজীবনে ফিরতে পারবেন?
আরও পড়ুনবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যা যা জানা গেল২১ জুলাই ২০২৫আহত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান সানজিদা বেলায়েত। তিনি আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর দাবি জানান।
আহত রায়ান তৌফিকের বাবা সুমন বলেন, তাঁদের কান্না শুকিয়ে গেছে। সরকারের কাউকে তাঁরা পাশে পাননি। তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছেন।
গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের হায়দার আলী ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় যুদ্ধবিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ অন্তত ৩৪ জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৭ জনই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ছিল। আহত হয় অনেকে।
আরও পড়ুনউত্তরায় মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা তদন্তে সরকারের কমিশন গঠন২৭ জুলাই ২০২৫