বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আমাদের আত্মপরিচয় নিয়েও একটা সংকট ছিল। সেই আত্মপরিচয়ের সংকট নিরসন করেছেন জিয়াউর রহমান (বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি)।’

আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন। ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাহাত্তরে যাঁরা ক্ষমতা নিলেন, সেখানে সংকট তৈরি হয়েছিল। তাঁরা যে জাতীয়তার কথা বললেন, সেটাও একটা বিতর্কিত জাতীয়তা। এটা আঞ্চলিক পরিধিতে গণ্য হতে পারে। কিন্তু যে জাতীয়তার মধ্যে ভূখণ্ডের প্রতিনিধিত্ব নেই, যে জাতীয়তার মধ্যে আমার স্বতন্ত্র সত্তা, পতাকার প্রতিনিধিত্ব নেই; সেটা তো একটা জাতীয়তা হতে পারে না। সেটাও নিরসন করলেন জিয়াউর রহমান।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ—এই নামটির মধ্যে আমার ভূগোল, আমার মাটি, আমার পানি, আমার বৃক্ষ, পাখি সবকিছুরই প্রতিনিধিত্ব করল। এই শব্দটি বলার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের আত্মপরিচয়কে সুন্দরভাবে গোটা বিশ্বের কাছে উদ্ভাসিত করতে পারি। অর্থাৎ আমাদের আত্মপরিচয়ের সংকটকে নিরসন করলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এরপর বহুদলীয় গণতন্ত্র, গণতন্ত্রের পথচলা—সবকিছু নিশ্চিত হলো যে মানুষটির মধ্য দিয়ে, তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান।’

অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয়তাবাদ বিনির্মাণে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে তিনি বলেন, চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর যে জন–আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ৫ আগস্টের পর থেকে একটি গোষ্ঠী বিভক্তির কাজে লিপ্ত রয়েছে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আমরা যেমন কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, সে রকম একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। ৭ নভেম্বর আমাদের শিখিয়েছে, সব ষড়যন্ত্রকে রুখে দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে‌।’ তবে তিনি বলেন, চব্বিশের ছাত্র–জনতার বিপ্লবের পর‌ও ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। আগামী দিনে যারা গণতন্ত্র নস্যাৎ করতে চায়, তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উর রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

সংবিধান সংস্কার জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত: ড. কামাল হোসেন

সংবিধান সংস্কার জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল। বিগত ৫৩ বছর যাবৎ এই সংবিধানে নানা পরিবর্তন হয়েছে। সংবিধান সংস্কার একটি সংবেদনশীল বিষয়, এ প্রক্রিয়া অবশ্যই জনগণের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ড. কামাল হোসেন। তিনি অসুস্থ থাকায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।

বর্তমান পটভূমিতে সংবিধান পর্যালোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তবে যেকোনো সংস্কারের সময় আমাদের মনে রাখতে হবে, সংবিধান আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি, বাংলাদেশের সব মানুষের ত্যাগ ও একতাবদ্ধ আকাঙ্ক্ষার ফসল। কোনো ব্যক্তিই এককভাবে সংবিধান পরিবর্তন করার অধিকার রাখেন না। সংস্কারের প্রস্তাবগুলোতে অবশ্যই জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হতে হবে এবং সমাজের বর্তমান চাহিদার সঙ্গে আমাদের মৌলিক মূল্যবোধের সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।’

সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ এবং গণতন্ত্রহীনতার জন্য শুধু সংবিধানকে দায়ী করার প্রবণতা থেকে বের হওয়ার আহ্বান জানান ড. কামাল হোসেন। সেখানে সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিগত সময়ে দেশের যেসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয়করণের ফলে জন–আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, সেগুলোর সংস্কার জরুরি বলে উল্লেখ করেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে না পারলে গণতন্ত্র কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে না।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের মধ্য দিয়ে লেখা হয়েছে। সেই সংবিধান অক্ষত থাকবে। এটার ওপর হাত দেওয়ার সাধ্য এই সরকারের নেই।’

সংস্কারের বিষয়গুলো জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান সুব্রত চৌধুরী। সংস্কার নিয়ে ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য এই সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আপনি তাদের (ছাত্রদের) রাজনীতির মাঠে নামিয়ে এবং তাদের আবার তৃতীয় শক্তি বানিয়েছেন। বিএনপি, জামায়াত আবার এনসিপি। বাংলাদেশে যেন আর কোনো রাজনৈতিক দল নেই। মামার বাড়ির আবদার।’

অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের বিপথগামী করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘তাদের পরিবার-পরিজনকেও আপনি অসম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছেন। আজকে সব জায়গায় তাদের নিয়ে কথাবার্তা হয়, নানান জায়গায় তারা অপকর্ম করছে। তারা সরকারের বিভিন্ন জায়গায় বসে বসে, সরকারের অংশীদারত্ব তারা উপভোগ করছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় পদ–পদবি নিচ্ছে, নিয়োগ–বাণিজ্য করছে, ট্রান্সফার করছে, ব্যবসা–বাণিজ্য করছে।’

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, নারীপক্ষের সভাপতি শিরীন হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির ঐক্য বিনষ্ট হলে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ফেরার শঙ্কা তৈরি হবে’
  • ৭ নভেম্বর: ঐতিহাসিক বাস্তবতা, গণতন্ত্র ও বিএনপির প্রাসঙ্গিকতা
  • আমরা অন্য দলে আত্মগোপন করে গুপ্ত দল করিনি: আহমেদ আযম খান
  • বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আবার ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে: মির্জা ফখরুল
  • ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর আজ
  • সংবিধান ও আইন অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ বিএন‌পি 
  • সংবিধান সংস্কার জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত: ড. কামাল হোসেন
  • তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের পেছনে ছিল রাজনৈতিক বিদ্বেষ: অ্যাটর্নি জেনারেল
  • বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে: নজরুল ইসলাম খান