‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির ঐক্য বিনষ্ট হলে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ফেরার শঙ্কা তৈরি হবে’
Published: 7th, November 2025 GMT
গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেছেন, ‘‘ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য বিনষ্ট হলে আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ ফেরার শঙ্কা তৈরি হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনে বিএনপি, জামায়াত, গণধিকার পরিষদসহ যেসব দল অংশ নিয়েছিল; তাদের ঐক্যের বিকল্প নেই। আমরা যারা বিগত ১৬ বছর ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যুগপৎ আন্দোলন করেছি, আমাদের সেই কঠিন দিনগুলো ভুলে গেলে চলবে না।’’
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী বাজারে নির্বাচনী গণসংযোগ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় সরকারের ইঙ্গিত দিয়ে রাশেদ খান বলেন, ‘‘দেশ এখন নির্বাচনি ট্রেনে চলতে শুরু করেছে। বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলনসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা দীর্ঘদিন জেল, জুলুম সহ্য করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন করে গেছেন। আগামী নির্বাচনে যে দলই বিজয়ী হোক, আমরা জাতীয় সরকার গঠনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে বিএনপির চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।’’
ঝিনাইদহ-২ আসনে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এই আসনে যেই নির্বাচন করুক না কেন, তার জন্য আমার শুভ কামনা। প্রত্যেকটি দল তাদের রাজনীতি করুক। কেউ যেন অন্য দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি না করে। এতে সংঘাত তৈরির শঙ্কা দেখা দেবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর পারস্পরিক সংঘাত আওয়ামী লীগের ফেরার পথ সহজ করবে।’’
ঢাকা/শাহরিয়ার/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সংবিধান সংস্কার জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত: ড. কামাল হোসেন
সংবিধান সংস্কার জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল। বিগত ৫৩ বছর যাবৎ এই সংবিধানে নানা পরিবর্তন হয়েছে। সংবিধান সংস্কার একটি সংবেদনশীল বিষয়, এ প্রক্রিয়া অবশ্যই জনগণের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ড. কামাল হোসেন। তিনি অসুস্থ থাকায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
বর্তমান পটভূমিতে সংবিধান পর্যালোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তবে যেকোনো সংস্কারের সময় আমাদের মনে রাখতে হবে, সংবিধান আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি, বাংলাদেশের সব মানুষের ত্যাগ ও একতাবদ্ধ আকাঙ্ক্ষার ফসল। কোনো ব্যক্তিই এককভাবে সংবিধান পরিবর্তন করার অধিকার রাখেন না। সংস্কারের প্রস্তাবগুলোতে অবশ্যই জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হতে হবে এবং সমাজের বর্তমান চাহিদার সঙ্গে আমাদের মৌলিক মূল্যবোধের সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।’
সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ এবং গণতন্ত্রহীনতার জন্য শুধু সংবিধানকে দায়ী করার প্রবণতা থেকে বের হওয়ার আহ্বান জানান ড. কামাল হোসেন। সেখানে সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিগত সময়ে দেশের যেসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয়করণের ফলে জন–আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, সেগুলোর সংস্কার জরুরি বলে উল্লেখ করেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে না পারলে গণতন্ত্র কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে না।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের মধ্য দিয়ে লেখা হয়েছে। সেই সংবিধান অক্ষত থাকবে। এটার ওপর হাত দেওয়ার সাধ্য এই সরকারের নেই।’
সংস্কারের বিষয়গুলো জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান সুব্রত চৌধুরী। সংস্কার নিয়ে ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য এই সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আপনি তাদের (ছাত্রদের) রাজনীতির মাঠে নামিয়ে এবং তাদের আবার তৃতীয় শক্তি বানিয়েছেন। বিএনপি, জামায়াত আবার এনসিপি। বাংলাদেশে যেন আর কোনো রাজনৈতিক দল নেই। মামার বাড়ির আবদার।’
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের বিপথগামী করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘তাদের পরিবার-পরিজনকেও আপনি অসম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছেন। আজকে সব জায়গায় তাদের নিয়ে কথাবার্তা হয়, নানান জায়গায় তারা অপকর্ম করছে। তারা সরকারের বিভিন্ন জায়গায় বসে বসে, সরকারের অংশীদারত্ব তারা উপভোগ করছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় পদ–পদবি নিচ্ছে, নিয়োগ–বাণিজ্য করছে, ট্রান্সফার করছে, ব্যবসা–বাণিজ্য করছে।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, নারীপক্ষের সভাপতি শিরীন হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।