ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস) বিশ্বের সর্বাধিক স্বীকৃত ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষাগুলোর একটি। বিদেশে পড়ার পরিকল্পনা, ইংরেজিভাষী দেশে কাজের পরিকল্পনা বা ইংরেজি ভাষার দক্ষতা মূল্যায়ন করতে চাইলে আইইএলটিএস আপনার জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

আপনার প্রস্তুতি শুরু করার আগে, আইইএলটিএস পরীক্ষার ফরম্যাটটি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্পিকিং (বলা), লিসেনিং (শোনা), রাইটিং (লেখা) ও রিডিং (পড়া)—এ চার অংশ মিলিয়ে নেওয়া হয় আইইএলটিএস পরীক্ষা। পরীক্ষাটি দুই ধরনের—একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং। উচ্চশিক্ষার জন্য একাডেমিক মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়। আর কারিগরি বিষয়, অভিবাসন, প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার জন্য ‘জেনারেল ট্রেনিং মডিউল’। দুই ধরনের মডিউলেই লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং ও স্পিকিং—চারটি অংশ থাকে। ভারতের গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে আইইএলটিএসের প্রস্তুতি কীভাবে নেওয়া যেতে পারে, তার জন্য ১০টি ধাপের কথা বলেছে।

আরও পড়ুনআইইএলটিএস প্রস্তুতি, ইংরেজির স্পষ্ট উচ্চারণের জন্য প্রতিদিন করণীয়১৩ মার্চ ২০২৫স্পিকিং—

স্পিকিং টেস্টের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১১-১৪ মিনিট। তিনটি অংশে ইংরেজিতে কথা বলার পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথম অংশে প্রশ্নকর্তা সাধারণত পরিবার, কাজ, পড়াশোনা, শখ—এ ধরনের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলাপ করেন। দ্বিতীয় অংশে শিক্ষার্থীকে একটি নির্ধারিত বিষয় দেওয়া হয়। সে বিষয়ে প্রায় দুই মিনিট কথা বলতে হবে। প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অবশ্য আগে এক মিনিট সময় পাবেন। তৃতীয় অংশের আলাপ হবে মূলত দ্বিতীয় অংশে আপনি যা বলেছেন, তার ওপর ভিত্তি করে। প্রশ্নকর্তা আপনাকে নানা রকম প্রশ্ন করবেন, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

লিসেনিং—

লিসেনিং অংশে শিক্ষার্থীকে চারটি অডিও শোনানো হয়। কোনো অডিওতে হয়তো একাধিক মানুষের কথোপকথন থাকবে। আবার কোনোটায় একজনের কণ্ঠস্বরই শুনতে পাবেন, যিনি কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় বর্ণনা করবেন। লিসেনিং অংশে বেশ কিছু বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকে। কোথাও কোথাও এক শব্দ বা তিন শব্দে উত্তর দিতে বলা হয়। সব রকম উত্তর দেওয়ার জন্যই আপনাকে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।

আরও পড়ুনআইইএলটিএস রাইটিংয়ে ব্যান্ড ৭ পেতে করণীয়৩১ ডিসেম্বর ২০২৪রিডিং—

৩টি অনুচ্ছেদ পড়ে ৬০ মিনিটের মধ্যে আপনাকে ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এর মধ্যে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন আছে, শূন্যস্থান পূরণ আছে। নির্ধারিত অনুচ্ছেদ পড়ে ‘সত্য, মিথ্যা বা উল্লেখ নেই’—এমন মন্তব্যও করতে হবে। ‘ম্যাচিং সেনটেন্স এন্ডিংস’ ধরনের প্রশ্নে অনুচ্ছেদ পড়ে বাক্য শেষ করতে হবে। ‘সেনটেন্স কমপ্লিশন’ ধরনের প্রশ্নও থাকতে পারে। এ ছাড়া কোনো একটা অনুচ্ছেদ পড়ে আপনাকে টেবিল বা ফ্লোচার্ট পূরণ করতে হতে পারে।

রাইটিং—

একাডেমিক রাইটিংয়ে ৬০ মিনিটে ২টি অংশ লিখতে হয়। প্রথম অংশে গ্রাফ, টেবিল, চার্ট বা ডায়াগ্রামসংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ে আপনাকে লিখতে হবে। গ্রাফ বা টেবিলে উল্লেখিত তথ্যের ব্যাখ্যা ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিতে হয় ১৫০ শব্দের মধ্যে। পরীক্ষার দ্বিতীয় অংশে ৪০ মিনিটে ২৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর লিখতে হয়। আপনার ভোকাবুলারি কতটা সমৃদ্ধ, ইংরেজি ভাষা আপনি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন কি না, রাইটিং অংশে তা-ই পরীক্ষা করা হয়।

কার্যকর প্রস্তুতির কৌশলগুলো হলো—

১.

আইইএলটিএস পরীক্ষার ফরম্যাটের সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করতে হবে শিক্ষার্থীদের।

*অফিশিয়াল আইইএলটিএস ওয়েবসাইট থেকে পরীক্ষার ফরম্যাট ও নির্দেশিকাগুলো বিস্তারিত পড়ে নিতে হবে।

*পরীক্ষার কাঠামো এবং সময়ের সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য মক টেস্ট বা অনুশীলন পরীক্ষা দিন।

২. পড়াশোনার সময়সূচি তৈরি করুন

*প্রতিটি বিভাগের জন্য পর্যাপ্ত সময় বরাদ্দ করে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে শিক্ষার্থীদের

*অগ্রগতির হিসাব রাখতে (প্রস্তুতির অগ্রগতি কেমন) দৈনিক বা সাপ্তাহিক লক্ষ্য নির্ধারণ করলে ভালো ফল মেলে।

৩. নিজের ভাষাদক্ষতা উন্নত করুন

*ইংরেজি সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ও একাডেমিক নিবন্ধ পড়ার মাধ্যমে নিজের শব্দভান্ডার ও ব্যাকরণ উন্নত করা যায়। এ চর্চা বেশ কাজের।

*লিসেনিংয়ের জন্য এবং বোঝার দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ইংরেজি ভাষার সিনেমা এবং টিভি শো নিয়মিত দেখার সঙ্গে সঙ্গে পডকাস্টও শুনুন।

আরও পড়ুনডুওলিঙ্গো টেস্ট কী, প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন১৫ এপ্রিল ২০২৪

৪. নিয়মিত চর্চা করুন

*অফিশিয়াল আইইএলটিএস নমুনা পরীক্ষায় (মক টেস্ট) অংশগ্রহণ করুন।

*আইইএলটিএস প্রস্তুতির কোর্সে যোগ দিতে পারেন। আইইএলটিএস প্রস্তুতির অনলাইন অ্যাপও ব্যবহার করতে পারেন শিক্ষার্থীরা।

৫. লেখার দক্ষতা যেভাবে বাড়াবেন

*নিয়মিত প্রবন্ধ এবং রিপোর্ট লেখার অভ্যাস করুন।

*আপনার লেখার দক্ষতা উন্নত করতে শিক্ষক বা সমবয়সীদের কাছ থেকে মতামত নিন।

৬. সময়ের ব্যাপারে সচেতন হোন

*পরীক্ষায় সময় ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বরাদ্দকৃত সময়সীমার মধ্যে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই।

৭. নিজের কথা বলার দক্ষতা বাড়ান

*স্থানীয় ভাষাভাষী বা বিদেশিদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলুন।

*আপনার সাবলীলতা মূল্যায়ন এবং উন্নত করতে আইইএলটিএস স্পিকিং প্রম্পটে আপনার প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করুন।

৮. টেস্ট পরীক্ষা দিন

*প্রকৃত পরীক্ষার আগে নির্দিষ্ট সময়ে টেস্ট পরীক্ষা দিন।

*আপনার কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণ করুন এবং উন্নতি প্রয়োজন এমন ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে কাজ করুন।

৯. পর্যালোচনা এবং সংশোধন করুন

*নিয়মিত আপনার নোট, অনুশীলন পরীক্ষা এবং দুর্বলতার ক্ষেত্র পর্যালোচনা করুন।

*ব্যাকরণের নিয়ম, শব্দভাণ্ডার এবং লেখার কৌশলগুলো বারবার পড়ুন।

১০. আত্মবিশ্বাসী থাকুন

*পরীক্ষার দিন শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে। আত্মবিশ্বাস স্পিকিং বিভাগে আপনাকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। প্রস্তুতিই আইইএলটিএস পরীক্ষায় সাফল্যের চাবিকাঠি।

*এ কৌশলগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বাড়াতে পারেন এবং উচ্চ স্কোর অর্জনের সম্ভাবনা বাড়াতে পারবেন।

কোথায় ও কীভাবে পরীক্ষা দেবেন

বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ ও আইডিপি এডুকেশন থেকে আইইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আছে। প্রতি মাসেই নির্ধারিত বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্দিষ্ট তারিখে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কম্পিউটারনির্ভর (কম্পিউটার বেজড) বা কাগজনির্ভর (পেপার বেজড)—দুই ধরনের পরীক্ষা দিতে পারেন।

আরও পড়ুনআইইএলটিএস রিডিং পরীক্ষায় এক ঘণ্টায় সব প্রশ্নের উত্তর করার উপায় ০৯ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রস ত ত প রস ত ত র এক ড ম ক পর ক ষ র ন পর ক ষ য় র জন য র পর ক আপন ক ত করত ধরন র আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ প্রস্তাব

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরও কার্যকর অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “চলুন আমরা এমন একটি মর্যাদা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়ে তুলি, যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।”

এ বিষয়ে তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরে বলেন, এগুলো কার্যকর করলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য, বৈষম্য ও আর্থিক অস্থিরতার সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, “আমাদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”

বাসস লিখেছে, প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রথম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া তার জন্য গর্বের বিষয়, যেখানে সম্ভাবনা ও দায়িত্ব একসাথে রয়েছে। তিনি বলেন, চতুর্থ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সম্মেলনে নেওয়া অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বছরে চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অপরিহার্য।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "আমরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের কণ্ঠস্বর শোনার দায়িত্ব নিচ্ছি। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”

তিনি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সম্পদের ন্যায্য প্রবেশাধিকার হলো ন্যায়বিচারের মূল। একজন নারী যখন ব্যবসা শুরু করে, যুবসমাজ যখন সৌর শক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি পায়, বস্তিবাসী শিশু যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় এবং পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা পায়, তখন পরিবর্তন বাস্তব ও টেকসই হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেভিলে অঙ্গীকার একটি নতুন কাঠামো প্রদান করে, যা জোরদার করে দেশীয় সম্পদ উত্তোলন, অবৈধ অর্থ প্রবাহ প্রতিরোধ, উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ক্ষমতায়ন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করে।

তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরেন, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্থায়নকে শক্তিশালী করবে:

১. ন্যায্যভাবে দেশীয় সম্পদ উত্তোলনে আন্তর্জাতিক সহায়তার সমর্থন থাকা প্রয়োজন। কর ব্যবস্থা প্রগতিশীল, স্বচ্ছ ও বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর ন্যায্য অংশ নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতা কাঠামোর আলোচনায় এই বৈষম্য দূর করতে হবে।

২. নবীন অর্থায়ন ও সামাজিক ব্যবসা যৌক্তিক অর্থায়ন এবং এমন উদ্যোগ যারা লাভ পুনরায় সমস্যার সমাধানে বিনিয়োগ করে, চাকরি, অন্তর্ভুক্তি ও মর্যাদা নিশ্চিত করে।

৩. বিশ্ব আর্থিক কাঠামো ও ঋণ শাসন সংস্কার; উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো শক্তিশালী কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে হবে। ঋণকে কঠোরতা নয়, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের হাতিয়ারে রূপান্তর করতে হবে।

৪. স্বচ্ছতা, অবৈধ অর্থায়ন প্রতিরোধ ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, জানতে হবে কীভাবে সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. সবচেয়ে দুর্বলদের জন্য বিনিয়োগের ত্বরান্বিতকরণ; স্থিতিশীল বাসস্থান, জলবায়ু-বান্ধব কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ