আওয়ামী লীগের আমলে নির্যাতিতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি
Published: 26th, June 2025 GMT
আওয়ামী লীগের শাসনামলে নির্যাতনের শিকার হওয়া সবাইকে স্বীকৃতি ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। তাঁরা বলেছেন, নির্যাতনমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি নতুন সামাজিক ও রাজনৈতিক চুক্তি প্রয়োজন। সেই চুক্তির মধ্য দিয়ে সবাইকে একমত হতে হবে যে নতুন বাংলাদেশে আর কারও গায়ে হাত তোলা হবে না, পেশিশক্তির ব্যবহার হবে না এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে জনগণের ওপর নির্যাতন করা হবে না।
আজ (২৬ জুন) বৃহস্পতিবার ছিল জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘নির্যাতন থেকে প্রতিরোধ: স্মৃতি, ন্যায়বিচার ও প্রতিবাদের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটির মানবাধিকারবিষয়ক সেল। সেখানে এনসিপির নেতারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে নির্যাতিত ব্যক্তি ও পরিবারের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। যে পরিবার ও মানুষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ হচ্ছে তাঁদের সামাজিকভাবে পুনর্বাসন করা, সুরক্ষা দেওয়া এবং এ রকম ঘটনা যাতে আর কোনো দিন না ঘটে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
সামান্তা শারমিন বলেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কিত ও নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু জনগুরুত্বপূর্ণ (যেমন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন) অনেক বিষয় নিয়ে তেমন আলোচনা হচ্ছে না। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত তৃণমূল পর্যায় থেকে দেশের সরকার ও রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তন করার কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। গুম-খুন ও নির্যাতনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে পুলিশ বাহিনী। পুলিশ ও র্যাবের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার কবে হবে?
আওয়ামী লীগের আমলে শারীরিকভাবে নির্যাতিত মানুষের সংখ্যা নিরূপণ করতে না পারাকে অন্তর্বর্তী সরকারের বড় একটি ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আকরাম হুসাইন। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আমলে নির্যাতিতদের সবাইকে স্বীকৃতি ও ক্ষতিপূরণ দিতে না পারলে নতুন বাংলাদেশ গড়া যাবে না। নির্যাতনমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা নতুন সামাজিক ও রাজনৈতিক চুক্তি লাগবে।’
আলোচনায় অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক খন্দকার রাকিব। তিনি বলেন, আগে রাজনৈতিক কর্মীরা অন্যদের ওপর নির্যাতন করতেন বা অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটত। কিন্তু বিগত শাসনামলে এটাকে একটা রাষ্ট্রীয় রূপ দেওয়া হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় নানা বাহিনী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক নেতারা সরাসরি নির্যাতনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়ে ডিসিশন (সিদ্ধান্ত) তৈরি করে তথাকথিত গোয়েন্দা বা নিজেদের সোর্স কাজে লাগিয়ে কিছু কিছু মানুষের ‘বডি প্রোফাইল’ করতেন। চিহ্নিত করার পর বাহিনীগুলো তাদের উঠিয়ে নিয়ে নানা ধরনের নির্যাতন করত।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সাইফ মোস্তাফিজ ও যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক এনস প র নত ন ব আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সন্ত্রাসীর পা কেটে আনলে লাখ টাকার পুরস্কার
যশোরের চৌগাছা উপজেলার ফুলসারা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদে এলাকাবাসী বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। সেখানে এক বক্তা হামলায় জড়িত সন্ত্রাসী লিটনের পা কেটে আনলে ১ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন। বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে যশোর-চৌগাছা সড়কের ফুলসারা নিমতলা বাজারে শুরু হয় এলাকাবাসীর বিক্ষোভ। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে এই বিক্ষোভ। শুরুতে সড়ক অবরোধ করা হলেও পরে রাস্তার পাশেই সমাবেশ করেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, বিক্ষোভ চলাকালে মাইকে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নানা স্লোগান ও বক্তব্য দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ইকবাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসী লিটনের পা কেটে আনতে পারলে ১ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন। এ সময় উপস্থিত জনতা করতালি দিয়ে বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানায়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ফুলসারা গ্রামের আবদুল লতিফ বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ঢালি এলাকায় সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। চাঁদা না পেয়ে পিটিয়ে তাঁর হাত-পা ভেঙে দিয়েছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী লিটন, মামুন, টিটো ও তাদের সহযোগীরা। এদের শাস্তির দাবিতে দলমত নির্বিশেষে মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইকবাল হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দিয়েও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ক্ষোভে পড়ে হয়তো উনি (ইকবাল) পায়ের মূল্য ঘোষণা করেছেন। তবে এলাকার সব মানুষ সন্ত্রাসী লিটন ও তার লোকজনের ওপর চরম ক্ষুব্ধ। চেয়ারম্যানের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারছেন না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী। ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে যান তিনি। চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি জিয়াউর রহমান ঢালি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান।
জিয়াউর রহমান ঢালির স্বজনের ভাষ্য, দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক মামলার আসামি লিটনসহ পাঁচ-ছয়জন জিয়াউর রহমানের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তিনি এতে রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন লিটন। বুধবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন জিয়াউর। পথে লিটন সহযোগীদের নিয়ে গতিরোধ করে। পরে অস্ত্র ঠেকিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। হকিস্টিক দিয়ে জিয়াউরের দুই পা ও হাত ভেঙে তারা পালিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাসিবুর রহমান বলেন, আশঙ্কাজনক অবস্থায় আনা হলেও এখন জিয়াউর রহমান শঙ্কামুক্ত।
চিকিৎসাধীন জিয়াউর ঢালি জানান, ‘চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে একটি পক্ষ আমাকে মেনে নিতে পারছে না। তারা আমাকে হত্যার চেষ্টা শুরু করে। সন্ত্রাসী লিটন ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ওই টাকা না দেওয়ায় হামলা চালিয়েছে। মারধরের এক পর্যায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলির চেষ্টা করছিল; কিন্তু লোকজন চলে আসায় তারা পালিয়ে যায়।’
চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের আটকে পুলিশি অভিযান চলছে। এখনও কেউ মামলা করেননি।