চট্টগ্রাম বন্দরে চালু থাকা চারটি কনটেইনার টার্মিনালের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)। ৯৫০ মিটার দীর্ঘ এই টার্মিনালেই গত বছর বন্দরের মোট কনটেইনারের ৪৪ শতাংশ ওঠানামা হয়েছে এককভাবে। একসঙ্গে এতে চারটি সমুদ্রগামী কনটেইনার জাহাজ ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচল উপযোগী একটি ছোট জাহাজ নোঙর করা যায়। বন্দরের অন্য কোনো টার্মিনালে নেই এত সুবিধা।
জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানামার জন্য এ টার্মিনালে বিশ্বের সবচেয়ে অত্যধুনিক যন্ত্র ‘গ্যান্ট্রি ক্রেন’ রয়েছে ১৪টি। অন্যান্য টার্মিনালে এ সংখ্যা অর্ধেকেরও কম। বছরে ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানামার সক্ষমতা থাকা এই টার্মিনাল গত বছরও হ্যান্ডল করেছে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার। এই টার্মিনাল থেকে প্রতি বছর এক হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্বও পাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
‘সোনার হরিণ’ হিসেবে পরিচিত এই টার্মিনাল ঘিরেই এসেছে বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব। এনসিটি ব্যবস্থাপনায় বিদেশি কোম্পানিকে যুক্ত করতে সরকারের পরিকল্পনায় পক্ষে-বিপক্ষে সরব হয়েছে বন্দর ব্যবহারকারীসহ বিভিন্ন মহল। বিদেশি বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনা দেখছে সরকার। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এতে পাচ্ছে ‘ষড়যন্ত্রের গন্ধ’।
বিদেশি কোম্পানিকে বন্দর ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করার উদ্যোগের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ শুরু করেছে বিভিন্ন বাম ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল-সংগঠন। আজ বিকেলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আগামী সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর গেটে বৃহত্তর শ্রমিক সমাবেশের ডাক দিয়েছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।
কোন টার্মিনালের কত অবদান
বন্দরের কনটেইনারের ৪৪ শতাংশ এনসিটিতে ওঠানামা হলেও তার পাশে থাকা চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) গত বছর ১৯ শতাংশ এবং জেনারেল কার্গো বার্থ-জিসিবিতে ৩৬ শতাংশ কনটেইনার ওঠানামা করেছে। সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালের হাতে ছেড়ে দেওয়া পতেঙ্গা টার্মিনাল প্রথম ১০ মাসে তাদের টার্গেটের মাত্র ১২ শতাংশ কনটেইনার হ্যান্ডল করেছে। ২০২৪ সালের জুন থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠান নবনির্মিত এই টার্মিনাল পরিচালনা করলেও পুরোদমে চালু হয়নি এটি।
বন্দরের তত্ত্বাবধানে ২০০৭ সাল থেকে আংশিক চালু ছিল এনসিটি। পরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০১৫ সাল থেকে পুরোদমে এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানামার কাজ শুরু হয়। এর পরে কমতে থাকে জাহাজের অপেক্ষমাণ সময়ও। আগে একটি জাহাজ ১২ থেকে ১৫ দিন পণ্য নিয়ে অপেক্ষায় থাকলেও এখন সেটি নেমে এসেছে দুই থেকে তিন দিনে।
২০০৭ সালে আংশিক চালু হওয়ার প্রথম বছরে এনসিটিতে বাণিজ্যিক জাহাজ আসে ৪৩৬টি। ২০২৪ সালে এনসিটিতে জাহাজ এসেছে ১ হাজার ২৫০টি। ১৭ বছরের ব্যবধানে জাহাজ আসার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। জিসিবি, সিসিটি, এনসিটি এবং বহির্নোঙর মিলিয়ে ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ এসেছে ৪ হাজার ৩০০টি।
সবচেয়ে বেশি আয় এনসিটিতে
চারটি টার্মিনালের মধ্যে এনসিটিতেই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেনের পাশাপাশি ৩৩টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেনও স্থাপন করা হয়েছে এই টার্মিনালে। প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আয় হয় এখান থেকে। এই টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দিলে বন্দরের আয় নির্ভর করবে বিদেশিদের সঙ্গে দরকষাকষির ওপর। এই টার্মিনাল পরিচালনা করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ দুই বছরে কনটেইনারপ্রতি বিল পেয়েছে ৭০০ টাকা বা প্রায় সাড়ে ৬ ডলার। সব খরচ বাদ দিয়ে গত দুই বছরে তাদের প্রকৃত আয় হয়েছে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি। এ হিসাবে কনটেইনারপ্রতি বন্দরের প্রকৃত আয় দাঁড়ায় প্রায় ৪৭ ডলার। সৌদি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়া পতেঙ্গা টার্মিনাল থেকে বন্দর পাচ্ছে কনটেইনারপ্রতি মাত্র ১৮ ডলার। সেখানে অবশ্য বন্দর কর্তৃপক্ষ শুধু জেটি নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে।
চার কারণে বিতর্ক
এনসিটি ঘিরে সরকারের তৎপরতা, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ না করা, বন্দরের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়ার চিন্তা এবং সবচেয়ে বেশি আয় আসা টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা তৈরি হওয়ায় এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন– যে টার্মিনালটি ১৭ বছর ধরে সক্ষমতার চেয়ে বেশি কনটেইনার হ্যান্ডল, সবচেয়ে বেশি আয় এবং কর্মসংস্থান করেছে, সেটি কেন দিতে হবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে। ৭০০ কোটি টাকা দিয়ে ২০ বছর আগে এই টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতিও কেনা হয়েছে এই টার্মিনালের জন্য। বিদেশি প্রতিষ্ঠান নতুন আর কী বিনিয়োগ করবে এই টার্মিনালে– এই প্রশ্ন সামনে এনেছে রাজনৈতিক দলগুলোও। নতুন কোনো স্থানে নতুন করে টার্মিনাল করে বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করলে আপত্তি নেই তাদের।
সম্ভাবনা দেখছে সরকার
তবে সরকার বলছে, এনসিটির বর্তমান সক্ষমতা ও দক্ষতা আমূল পাল্টে দেবে বিদেশি প্রতিষ্ঠান। কীভাবে তারা এটা করবে– সেই পরিকল্পনাই তাদের কাছ থেকে চেয়েছে সরকার। যে প্রতিষ্ঠানকে তারা ভাবছে, তারা বিশ্বের সেরা বন্দরগুলোতে কাজ করছে। তাদের কর্মদক্ষতার কারণেই ওইসব বন্দর আছে বিশ্বসেরার তালিকায়। বিদেশি প্রতিষ্ঠান এলে কারও চাকরি যাবে না। উল্টো কর্মক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা বাড়বে। বাড়বে সুযোগ-সুবিধা। এমনই মত এই সরকারের।
চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে এসে গত ১৪ মে প্রধান উপদেষ্টা ড.
ওই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা জানান, তিনি নৌপরিবহন উপদেষ্টাকে বলেছেন, যারা বন্দরের ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ, পৃথিবীর সেরা, তাদের দিয়ে এই কাজ করাতে হবে; যেভাবেই হোক।
এর আগে বন্দর পরিদর্শনে এসে অভিন্ন ইচ্ছার কথা বলেছেন বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তারা বিশ্বে ৭০-৮০টি বন্দর পরিচালনা করা দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তারা এটি শেষ করতে চান। এমন বক্তব্য ও তৎপরতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি টার্মিনাল ইস্যুটি সবার সামনে চলে আসে।
যে পথে হাঁটছে সরকার
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এনসিটি টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়ার ব্যাপারে কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের মার্চে নিউমুরিং টার্মিনালটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের আওতায় পরিচালনার জন্য অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের জন্য ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার নিয়োগ করা হয় ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনকে (আইএফসি)। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে এটি আর বেশি দূর এগোতে পারেনি।
পরে এ কাজ এগিয়ে নিতে থাকে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছরের ৫ নভেম্বর পিপিপি কর্তৃপক্ষ, আইএফসি ও বন্দর কর্তৃপক্ষের যৌথ সভা ডাকার উদ্যোগ নেয় তারা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, মে মাসের মধ্যে আইএফসি এ প্রকল্পের ট্রানজেকশন স্ট্রাকচারিং রিপোর্ট-টিএসআর প্রদান করবে। এ প্রতিবেদন অনুমোদনের পর দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডকে আরএফপি (রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল) দেওয়া হবে। সেপ্টেম্বরে এ ব্যাপারে কনসেশন চুক্তি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। চুক্তির পর টার্মিনালটি পুরোপুরি ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে চলে যাবে। তারাই মাশুল আদায় করবে, লোকবল নিয়োগ দেবে। চুক্তি অনুযায়ী, বন্দরকে এককালীন, বার্ষিক ও কনটেইনারপ্রতি অর্থ দেবে ডিপি ওয়ার্ল্ড।
যা বলছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা
বন্দরের জেটি পরিচালনাকারী বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বার্থ অপারেটরস, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস ও টার্মিনাল অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে একরাম চৌধুরী বলেন, এনসিটি ভালো করছে; লোকসানেও নেই। বন্দর কর্তৃপক্ষ সবচেয়ে বেশি আয় করছে এই টার্মিনাল দিয়ে। এর মাধ্যমে দক্ষও হয়ে উঠছে তারা। সক্ষমতার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপনার সুযোগ না পেলে ভবিষ্যতে বিদেশিরা ছেড়ে দিলে পরিচালনায় সংকট তৈরি হবে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তাদের মাধ্যমে আমাদের আয়, সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে, সেটি যাতে সত্য হয়। সরকারকে এ ব্যাপারে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, আমাদের অপারেটরদের তুলনায় বাইরের অপারেটররা অনেক বেশি দক্ষ– তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আবার বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও জোরালো হবে। তবে চুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবার সঙ্গে কথা বললে আর বিতর্ক থাকত না।
রাজনৈতিক দলগুলোর অভিমত
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যৌথ উদ্যোগে গঠিত ‘দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও’ কমিটির সদস্য এবং ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম সমকালকে বলেন, এনসিটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হলে সরকারকে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগে আলোচনা করতে হবে। সেটি না করাতে এখানে বিতর্ক হচ্ছে; সন্দেহ বাড়ছে। এই বন্দরই আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। ইচ্ছা হলেই কেউ এটা বিদেশিদের দিয়ে দিতে পারে না। এনসিটি না দিয়ে অন্য যেখানে বিদেশিদের বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে, সেই টার্মিনাল দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
সরকারের পদক্ষেপের প্রতিবাদে সম্প্রতি ঢাকায় সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তারা বলেছে, দেশের টাকায় সবকিছু করে এখন বিদেশিদের হাতে টার্মিনাল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত রহস্যজনক ও চক্রান্তমূলক।
বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করে এনসিটি টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার সমালোচনা করেন।
এনসিটি বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার পরিকল্পনার প্রতিবাদে গত ২০ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও। সংগঠনটির চট্টগ্রাম নগর শাখার আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগ চাই। দেশের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ অপরিহার্য। কিন্তু সেই বিনিয়োগ হোক তাদের নিজেদের তৈরি করা টার্মিনালে; আমাদের তৈরি টার্মিনালে নয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এই ট র ম ন ল ব ন য় গ কর ন উপদ ষ ট এনস ট ত সরক র র গত বছর রক র র ব তর ক র জন য আম দ র সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
মুন্সিগঞ্জে এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কায় নিহত ৪
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৪-১৫ জন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- বাসের যাত্রী যশোর সদর উপজেলার মধুগ্রামের জিল্লুর রহমান (৬৫), একই উপজেলার পাগলাদাহ গ্রামের মো. জালাল (৬৫), চিকিৎসক আব্দুল হালিম (৫৫) ও বাসটির চালকের সরকারী হাসিব (৩২)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাতে হামদান এক্সপ্রেসের একটি নৈশকোচ যাত্রী নিয়ে যশোরের নোয়াপাড়া থেকে রাজধানীর ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। একই পথে মালবোঝাই একটি মিনিট্রাকও যাচ্ছিল। এক্সপ্রেসওয়ের সিংপাড়া-নওয়াপাড়া ও হাঁসাড়া ব্রিজ-২–এর মাঝামাঝি লন্ডন স্কুলের সামনে এলে বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। বাসটি সামনে থাকা চলন্ত ট্রাকের পেছনের বাঁ পাশে সজোরে ধাক্কা দেয়। পরে বাস ও ট্রাক দুটোই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের মাঝামাঝি সড়কদ্বীপের রেলিংয়ে আলাদাভাবে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলে জিল্লুর রহমান ও মো. জালাল নিহত হন।
উপজেলার সিংপাড়া-নওয়াপাড়া ও হাঁসাড়া ব্রিজ-২–এর মাঝামাঝি লন্ডন স্কুলের সামনে ট্রাকের পেছনে যাত্রীবাহী একটি বাস সজোরে ধাক্কা দেয়। বাস ও ট্রাকের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের সড়কদ্বীপের রেলিংয়ে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে বাসের দুই যাত্রী নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরও দুজন। বাসের আরও ১৪ থেকে ১৫ জন যাত্রী আহত হয়েছেন।
পুলিশ ও শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক আ. হালিম ও বাসটির চালকের সহকারী হাসিব মারা যান।
হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদের জিলানী গণমাধ্যমকে জানান, দুর্ঘটনার পর বাস ও ট্রাকের চালকেরা পালিয়ে গেছেন। দুর্ঘটনার পর হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।