যুগোপযোগী করা হচ্ছে মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম, আগামী বছরই চালু
Published: 29th, June 2025 GMT
মাধ্যমিক স্তরের চলমান শিক্ষাক্রম আরও যুগোপযোগী করে আগামী বছর থেকে নতুনভাবে চালু করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন এ শিক্ষাক্রমে অভিজ্ঞতালব্ধ, জ্ঞাননির্ভর ও বাস্তবসম্মত পাঠদান হবে। মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথমে এটি চালু হবে। পরে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কার্যক্রম এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ২৫ জুন এ নিয়ে এনসিটিবিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
এনসিটিবি সূত্র জানায়, শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হবে– এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বা কোন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে, তা নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন কারিকুলাম তৈরি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান। চলতি মাসে কারিকুলাম বিষয়ে কর্মশালা হওয়ার কথা ছিল। সেটি পিছিয়ে আগামী জুলাইয়ে করা হবে বলেও জানান এনসিটিবি কর্মকর্তারা।
এনসিটিবির সচিব সাহতাব উদ্দিন সমকালকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম যাচাই-বাছাই করে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হবে ২০২৬ সাল থেকেই। প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও পরে ক্রম অনুসারে অন্য শ্রেণিতে তা চালু করা হবে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাতবার শিক্ষাক্রম বা শিক্ষাপদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে সরকার। প্রথম পাঁচবার শিক্ষাক্রমের মূল থিম ঠিক রেখে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পরিবর্তন করা হয়েছিল। তবে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে বড়সড়ো পরিবর্তন আনা হয়। সে বারের শিক্ষাক্রমটি ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’ নামে পরিচিত। এ পদ্ধতি প্রণয়নের ৯ বছরের মাথায় ২০২১ সালে আবারও নতুন একটি শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুমোদন করা হয়।
সেই রূপরেখা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তখন বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীদের মুখস্থনির্ভরতা কমিয়ে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শিখনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এ শিক্ষাক্রম। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে হাতে-কলমে শেখানো হবে।
অভিভাবকরা সেই শিক্ষাক্রম স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করতে পারেননি। তাদের অভিযোগ ছিল, এমন শিক্ষাক্রমের কারণে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। শিক্ষাক্রম বাতিলে টানা আন্দোলনও হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতন হলে একই মাসের শেষ দিকে বাতিল করা হয় সেই শিক্ষাক্রম। ফিরিয়ে আনা হয় ২০১২ সালে প্রণীত আলোচিত সৃজনশীল শিক্ষাক্রম।
এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৩ সালের শিক্ষাক্রম নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কিছু বিষয় ছিল, যা ছিল সময়োপযোগী। নতুন যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হবে, সেখানে ২০২৩ ও ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের অনেক বিষয় থাকবে। ২০২৭ সালে চালু হওয়া শিক্ষাক্রম কেমন হবে, তা নির্ভর করবে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত রাজনৈতিক সরকারের প্রত্যাশার ওপর।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস ট ব প রণয়ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগে ২৫ শিক্ষার্থীর সাজা
নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের দায়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য সাজেদুল করিম প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সহ–উপাচার্য সাজেদুল করিম বলেন, বিভিন্ন সময়ে নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের অভিযোগগুলো তদন্ত ও পর্যবেক্ষণের পর অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির জন্য সুপারিশ করেছে প্রক্টরিয়াল বডি। সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। ঘটনাগুলো অনেক আগের। একাধিকবার তদন্তের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনশাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কৃত ১৬ শিক্ষার্থীর শাস্তি প্রত্যাহার করল কর্তৃপক্ষ১৫ জানুয়ারি ২০২৫গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। র্যাগিংয়ের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ২৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের ১২ শিক্ষার্থী ও পরিসংখ্যান বিভাগের ১৩ শিক্ষার্থী আছেন। তাঁদের মধ্যে মেসে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক নিপীড়নের অভিযোগে অর্থনীতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম মুনতাসিরকে আজীবন ও জুনাইদ মোস্তকিমকে চার সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
বাকি ১০ শিক্ষার্থীকে ২ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাঁরা হলেন—প্রীতম সাহা, শরিফুজ্জামান খান, সাবিত আবরার, অনিক আহমেদ, সুয়েল রানা, জুবায়ের হোসেন তালুকদার, নাঈম মিয়া, বিকাশ চন্দ্র ধর, মিঞা মো. সাইয়্যেদুল বাশার ও রাজন সাহা।
আরও পড়ুনশাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের ঘটনায় ৫ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩অন্যদিকে গত বছরের ২৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের ১৫ ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগে একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ৫ জন ছাত্রীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে কাজী তাসমিয়া হককে চার সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বাকি চারজনের মধ্যে ফারজানা মেহেরুন, তাসমিয়াহ আলম, লামিয়া ইসমাইল ও শ্রাবণী দেকে আবাসিক হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ ছাড়া গত বছরের ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্টের পাশে একটি বাসায় পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেন ও সাগর হোসেনকে দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে একই শিক্ষাবর্ষের শিবরাজ ত্রিপুরা, জুবায়ের আবদুল্লাহ, রিয়াদুস সালেহীন, তন্ময় কর্মকার, ইয়াজউদ্দিন পাটোয়ারী ও নাফিজ ইমতিয়াজকে আবাসিক হল থেকে আজীবন বহিষ্কার অথবা হলে ভর্তি না থাকলে ভবিষ্যতে হলে আসন প্রদান না করার জন্য বলা হয়।
আরও পড়ুনশাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজতবা আলী হলে ওই রাতে র্যাগিংয়ে যা ঘটেছিল২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩সাজাপ্রাপ্ত এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ আবাসিক হলে না থাকলে ভবিষ্যতে তাঁদের কোনো আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে র্যাগিংয়ের মতো কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার জন্য তাঁদের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে মুচলেকা দিতে বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘নবীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে র্যাগিংয়ের ফলে মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড হয়ে যায়। এতে অনেকে একাডেমিক জায়গা থেকে বিচ্যুতও হয়ে যায়। এসব র্যাগিংয়ের ঘটনা অনেক আগের। ভালো করে তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী শিক্ষার্থীদের বিচারের আওতায় আনতে আমরা প্রক্টরিয়াল বডি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করেছিলাম।’
আরও পড়ুনশাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগের ঘটনায় বহিষ্কৃত ৫ জন ছাড়া জড়িত আরও ১০২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩