কার্লি লয়েড। দু’বার অলিম্পিক গোল্ড মেডেল ও একবার ফিফা ওমেন’স ওয়ার্ল্ড কাপজয়ী যুক্তরাষ্ট্র প্রমীলা জাতীয় ফুটবল দলের মিডফিল্ডার। ২০১৫ সালের ফিফা বর্ষসেরা নির্বাচিত এই নারী ফুটবলারের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন শাকিলা ইসরাত
২০১২ সালের অলিম্পিকের আগ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় সাইড বেঞ্চেই কাটাতে হয়েছে আমাকে। কখন যে মাঠে নামার সুযোগ পাব তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। ধরুন, এক ম্যাচে এক অর্ধ বা ৪৫ মিনিট খারাপ খেললাম, তো পরের ম্যাচে শুরু থেকে নামার সম্ভাবনা বলতে গেলে চলেই গেল। আমি মনে করি, এই পরিস্থিতিকে সামলানোর পথ আছে দুটি। হয় আপনি ক্ষেপে গিয়ে কোচের ওপর বিরক্ত হয়ে ওঠবেন এবং অসন্তোষ নিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকবেন অথবা কোচের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা দেখিয়ে মেনে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে যোগ্য ও অনিবার্য করে তুলবেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় পথটিকেই আমি বেছে নিয়েছি। সাইড বেঞ্চে বসে থাকার যাতনা আমাকে পোড়ায়নি, আমার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়েনি অশ্রু, আমি বিরক্ত হইনি কিংবা ক্ষেপে উঠিনি– তাহলে মিথ্যে বলা হবে। কেননা, এটি তো মানুষের সহজাত প্রবণতা। আমার ক্যারিয়ারে বহুবার আবেগের এমন বিচ্ছুরণ ঠিকই ঘটেছে; তবে দিনে দিনে বয়স ও অভিজ্ঞতা যত বেড়েছে, আমিও শিখে নিয়েছি এমন পরিস্থিতিগুলো সামলানোর কৌশল। তবে ঠিকই জানতাম, ২০১২-এর অলিম্পিকে যাওয়ার আগেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।
প্রথম জাতীয় দলে
প্রথম যখন জাতীয় দলে জায়গা পাই তখন দলে মিয়া হ্যাম, শ্যানন ম্যাকমিলান ও টিফেনি মিলবার্টের মতো খ্যাতিমান ফুটবলাররা খেলতেন। তাদের সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য হয় আমার। নিজের ঘরের দেয়ালে সেঁটে রাখা এই তারকাদের ছবির সঙ্গেই বড় হয়ে উঠেছি; ফলে তাদের পাশে খেলতে পারাটা ছিল দুর্দান্ত রোমাঞ্চের। তাদের খেলার গতি ছিল তেজি ঘোড়ার মতো। তারা আমার কাছ থেকেও একই গতি ও দক্ষতা আশা করতেন। মনে পড়ে, একবার ছোট্ট পরিসরের এক ম্যাচ চলছিল। ব্রায়ানা স্টারি ছিলেন গোল পোস্টে। তিনি চিৎকার করে আমাকে বললেন, তুমি যদি বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে গতিতে পেছনে ফেলে দিতে না পার- তবে সে তোমাকে বল নিয়ে এগোতে দেবে না। তরুণ খেলোয়াড়দের আমিও স্রেফ এ কথাটিই বলতে চাই।
বিকল্প কৌশলের খোঁজে
ফুটবল খেলতে শুরু করি পাঁচ বছর বয়সে। তবে ২০০৮ সালের অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ই ক্যারিয়ারের প্রকৃত শুরু বলা যেতে পারে। জীবনে অনেক ভালো ম্যাচ এবং পাশাপাশি বাজে ম্যাচ খেলেছি। তবে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, একটি বাজে ম্যাচ খেলার পর তা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী ম্যাচে ভালো করার নিশ্চয়তা খোঁজা। প্রতি ম্যাচে ভালো খেলা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ভালো না খেললে ভেঙে না পড়ে বরং সফল হওয়ার বিকল্প কোনো কৌশল আবিষ্কার করা।
প্রিয় জার্সি
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ১০ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড়দের খুব মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতাম আমি। আমারই জন্মশহর ডেলরানে বেড়ে ওঠা পিটার ভার্মসও ১০ নম্বর জার্সি পরতেন। পরতেন মিশেল অ্যাকার্স, পেলে, ম্যারাডোনা। বাচ্চা বয়সে তারা আমার কাছে ছিলেন একেকজন মহানায়ক। সেন্টার-মিড পজেশনে খেলতাম আমি; ছিলাম অ্যাটাকিং প্লেয়ার। ক্লাবে ১০ নম্বর জার্সি পরেই খেলতাম আমি। তারপর জাতীয় দলে যখন জায়গা পেলাম, ১০ নম্বর জার্সিটির মালিকানা তখন অ্যালি ওয়াগনারের। তিনি অবসরে যাওয়ার পরই জার্সিটি কাঁধে চাপানোর দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত সুযোগ পেয়ে যাই আমি। এটি আমার প্রিয় একটি নম্বর। এটি পরে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা আমার জন্য সম্মানের ব্যাপার।
দিন শেষে.
তবে দিনের শেষে, এটি স্রেফ একটি সংখ্যার চেয়ে বেশি কিছু নয়! কখনোই ‘নোংরা’ ফুটবল খেলার চেষ্টা থাকে না আমার। বরং দলে নিজের জায়গাটির মর্যাদা রাখার চেষ্টা করে যাই। এ কাজটি ঠিকঠাক করতে পারলে মাঠে আমার জায়গায় থাকে আমারই রাজত্ব। এটিই আমার কাজ। আপনার কাজ যেটি সেটির জন্যও এমন অপেক্ষায় থাকুন। আর সুযোগ পেলেই কাজে লাগিয়ে দিন! ব্যস, আপনাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না কেউই!
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র অল ম প ক জ ত য় দল আম র ক ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
ভেঙে না পড়ে বিকল্প কৌশল খুঁজুন
কার্লি লয়েড। দু’বার অলিম্পিক গোল্ড মেডেল ও একবার ফিফা ওমেন’স ওয়ার্ল্ড কাপজয়ী যুক্তরাষ্ট্র প্রমীলা জাতীয় ফুটবল দলের মিডফিল্ডার। ২০১৫ সালের ফিফা বর্ষসেরা নির্বাচিত এই নারী ফুটবলারের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন শাকিলা ইসরাত
২০১২ সালের অলিম্পিকের আগ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় সাইড বেঞ্চেই কাটাতে হয়েছে আমাকে। কখন যে মাঠে নামার সুযোগ পাব তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। ধরুন, এক ম্যাচে এক অর্ধ বা ৪৫ মিনিট খারাপ খেললাম, তো পরের ম্যাচে শুরু থেকে নামার সম্ভাবনা বলতে গেলে চলেই গেল। আমি মনে করি, এই পরিস্থিতিকে সামলানোর পথ আছে দুটি। হয় আপনি ক্ষেপে গিয়ে কোচের ওপর বিরক্ত হয়ে ওঠবেন এবং অসন্তোষ নিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকবেন অথবা কোচের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা দেখিয়ে মেনে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে যোগ্য ও অনিবার্য করে তুলবেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় পথটিকেই আমি বেছে নিয়েছি। সাইড বেঞ্চে বসে থাকার যাতনা আমাকে পোড়ায়নি, আমার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়েনি অশ্রু, আমি বিরক্ত হইনি কিংবা ক্ষেপে উঠিনি– তাহলে মিথ্যে বলা হবে। কেননা, এটি তো মানুষের সহজাত প্রবণতা। আমার ক্যারিয়ারে বহুবার আবেগের এমন বিচ্ছুরণ ঠিকই ঘটেছে; তবে দিনে দিনে বয়স ও অভিজ্ঞতা যত বেড়েছে, আমিও শিখে নিয়েছি এমন পরিস্থিতিগুলো সামলানোর কৌশল। তবে ঠিকই জানতাম, ২০১২-এর অলিম্পিকে যাওয়ার আগেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।
প্রথম জাতীয় দলে
প্রথম যখন জাতীয় দলে জায়গা পাই তখন দলে মিয়া হ্যাম, শ্যানন ম্যাকমিলান ও টিফেনি মিলবার্টের মতো খ্যাতিমান ফুটবলাররা খেলতেন। তাদের সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য হয় আমার। নিজের ঘরের দেয়ালে সেঁটে রাখা এই তারকাদের ছবির সঙ্গেই বড় হয়ে উঠেছি; ফলে তাদের পাশে খেলতে পারাটা ছিল দুর্দান্ত রোমাঞ্চের। তাদের খেলার গতি ছিল তেজি ঘোড়ার মতো। তারা আমার কাছ থেকেও একই গতি ও দক্ষতা আশা করতেন। মনে পড়ে, একবার ছোট্ট পরিসরের এক ম্যাচ চলছিল। ব্রায়ানা স্টারি ছিলেন গোল পোস্টে। তিনি চিৎকার করে আমাকে বললেন, তুমি যদি বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে গতিতে পেছনে ফেলে দিতে না পার- তবে সে তোমাকে বল নিয়ে এগোতে দেবে না। তরুণ খেলোয়াড়দের আমিও স্রেফ এ কথাটিই বলতে চাই।
বিকল্প কৌশলের খোঁজে
ফুটবল খেলতে শুরু করি পাঁচ বছর বয়সে। তবে ২০০৮ সালের অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ই ক্যারিয়ারের প্রকৃত শুরু বলা যেতে পারে। জীবনে অনেক ভালো ম্যাচ এবং পাশাপাশি বাজে ম্যাচ খেলেছি। তবে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, একটি বাজে ম্যাচ খেলার পর তা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী ম্যাচে ভালো করার নিশ্চয়তা খোঁজা। প্রতি ম্যাচে ভালো খেলা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ভালো না খেললে ভেঙে না পড়ে বরং সফল হওয়ার বিকল্প কোনো কৌশল আবিষ্কার করা।
প্রিয় জার্সি
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ১০ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড়দের খুব মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতাম আমি। আমারই জন্মশহর ডেলরানে বেড়ে ওঠা পিটার ভার্মসও ১০ নম্বর জার্সি পরতেন। পরতেন মিশেল অ্যাকার্স, পেলে, ম্যারাডোনা। বাচ্চা বয়সে তারা আমার কাছে ছিলেন একেকজন মহানায়ক। সেন্টার-মিড পজেশনে খেলতাম আমি; ছিলাম অ্যাটাকিং প্লেয়ার। ক্লাবে ১০ নম্বর জার্সি পরেই খেলতাম আমি। তারপর জাতীয় দলে যখন জায়গা পেলাম, ১০ নম্বর জার্সিটির মালিকানা তখন অ্যালি ওয়াগনারের। তিনি অবসরে যাওয়ার পরই জার্সিটি কাঁধে চাপানোর দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত সুযোগ পেয়ে যাই আমি। এটি আমার প্রিয় একটি নম্বর। এটি পরে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা আমার জন্য সম্মানের ব্যাপার।
দিন শেষে...
তবে দিনের শেষে, এটি স্রেফ একটি সংখ্যার চেয়ে বেশি কিছু নয়! কখনোই ‘নোংরা’ ফুটবল খেলার চেষ্টা থাকে না আমার। বরং দলে নিজের জায়গাটির মর্যাদা রাখার চেষ্টা করে যাই। এ কাজটি ঠিকঠাক করতে পারলে মাঠে আমার জায়গায় থাকে আমারই রাজত্ব। এটিই আমার কাজ। আপনার কাজ যেটি সেটির জন্যও এমন অপেক্ষায় থাকুন। আর সুযোগ পেলেই কাজে লাগিয়ে দিন! ব্যস, আপনাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না কেউই!