মহানবী (সা.)-কে নিয়ে জাবি শিক্ষার্থীর কটুক্তি, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
Published: 29th, June 2025 GMT
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে কটুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৮ জুন) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বটতলা থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিক নাবিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানবী (সা.
আরো পড়ুন:
ঢাবিতে নবীনদের আবাসন সংকট নিরসনে ছাত্রশিবিরের ৪ দাবি
চবি বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবি
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা, ‘রাসূলের অপমান, সইবে নারে মুসলমান’, ‘শাতিমের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘বিচার চাই, শাতিমের বিচার চাই’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
সমাবেশে বাংলা বিভাগের ৫০তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা আজ ব্যথিত হৃদয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। এই কটুক্তি আমাদের মনে শতগুণে বেশি আঘাত করেছে। প্রশাসনের কাছে আমরা দাবি জানাই, রবিবারের মধ্যে তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাবি শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে নিন্দা জানিয়ে তৌফিক নাবিলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিক নাবিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)–কে নিয়ে কটূক্তি করে ইসলাম ধর্মাবলম্বী কোটি মুসলমানের হৃদয়ে গভীর আঘাত হেনেছে। এই জঘন্য আচরণ শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়, বরং এটি বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
তিনি বলেন, “আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে জোর দাবি জানাই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন এই ছাত্রের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আমরা আশা করি, প্রশাসন তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবে, যেন দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করা যায়। ধর্মীয় অনুভূতির অপমান কোনো মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয়, এটি অপরাধ। এই অপরাধের বিচার হতেই হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী কর্তৃক আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক, স্পর্শকাতর এবং আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে গভীরভাবে আঘাত করেছে।”
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে এই ঘটনার সত্যতা নিরূপণে নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক। যদি অভিযোগের ভিত্তিতে সত্যতা প্রমাণিত হয়, তাহলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তৌফিক নাবিল তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি এই পোস্ট করিনি। কেউ আমার নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ. কে. এম. রাশিদুল আলম বলেন, “বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চিঠি দিয়েছে। আমি সেটি উপাচার্য স্যারের কাছে ফরওয়ার্ড করেছি এবং তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, সে মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ৫০তম ব য চ র আম দ র ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
জাবির বাজেটে ফের উপেক্ষিত গবেষণা ও চিকিৎসা খাত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২৫—২৬ অর্থবছরের জন্য ৩২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বাজেটে ৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা বাড়লেও ফের উপেক্ষিত হয়েছে গবেষণা ও চিকিৎসা খাত।
শনিবার বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত ৪২তম বার্ষিক অধিবেশনে উপস্থাপিত বাজেট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব বাজেট উপস্থাপন করেন। সিনেটরদের আলোচনার পর তা পাস করা হয়।
২০২৫-২৬ সালের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং পেনশন ও অবসর সুবিধার পেছনে মোট ব্যয় ২২০ কোটি ৬৩ লাখ, যা মোট বাজেটের ৬৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয় রাখা হয়েছে বেতন-ভাতায়। এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১৮১ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটি বাজেটের ৫৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। পেনশন ও অবসর সুবিধা খাতে এতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ, যা বরাদ্দের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এই খাতে বাজেটের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে। এই দুই খাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও বাজেটের ৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে সেবা খাতে- ৭৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ খাতে বাজেটের ২৪ দশমিক ১৫ শতাংশ খরচ হবে।
ফের উপেক্ষিত চিকিৎসা ও গবেষণা খাত
গত ২২ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসাইন মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যুর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স তিনি যথাসময়ে পাননি এমন অভিযোগ তুলে সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র সংষ্কারের দাবিতে ‘মেডিকেল ঘেরাও’ কর্মসূচি পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের সার্বিক উন্নয়নসহ বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তারা। তবে বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৪৫ লাখ টাকা, যা বাজেটের মাত্র ০.১৪ শতাংশ। গত অর্থবছরেও মাত্র ০.১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়।
গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি বাজেটের আকার। নতুন বাজেটে প্রস্তাবিত বরাদ্দ রয়েছে ৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত বছর এটি ছিল ৭ কোটি ২২ লাখ, যা বরাদ্দের ২ দশমিক ২৬ শতাংশ। এছাড়া যানবাহন ক্রয় বাবদ ২ কোটি ২৮ লাখ, তথ্য ও যোগাযোগ ব্যয় ২ কোটি ২০ লাখ, যন্ত্রপাতি খাতে ব্যয় ৫ কোটি ৭২ লাখ এবং অন্যান্য ব্যয় ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের আয়ের খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বা সরকারি মঞ্জুরি ২৭৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, ছাত্রছাত্রীদের থেকে প্রাপ্ত ফিস বাবদ ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ভর্তি ফর্ম বিক্রি থেকে আয় ২৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন চার্জ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি থেকে আয় ৩৩ লাখ টাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উৎস হতে আয় ১০ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। ইউজিসির বরাদ্দ বাদে সব মিলিয়ে নিজস্ব আয় ৪৪ কোটি টাকা।
পাঁচ দশকে বাজেট ঘাটতি ১০০ কোটি টাকা
প্রতিষ্ঠার পর প্রায় পাঁচ দশকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমপুঞ্জিত বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কোষাধ্যক্ষের বক্তব্য থেকে জানা গেছে- চলতি অর্থবছরে সর্বনিম্ন আনুমানিক ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। সে হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০ জুনের পর বাজেট ঘাটতি পৌঁছাবে ১০০ কোটিতে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ঘাটতি বাজেট ছিল ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ও ২০২১—২২ অর্থবছরে ঘাটতি ৩ কোটি ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।
বাজেটের বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব বলেন, ২০২৪-২০২৫ সনের সংশোধিত বাজেটের জন্য ৪১৫ কোটি ৭৮ লাখ ১ হাজার টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ সনের ৪৩৪ কোটি ৪৬ লাখ ১৯ হাজার টাকার মূল বাজেট ইউজিসিতে পাঠানো হয়। ইউজিসি ২০২৪-২০২৫ সনের সংশোধিত বাজেটে ৩৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ সনের মূল বাজেটে ৩২৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিলে ঘাটতির পরিমাণ ৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরে সর্বনিম্ন আনুমানিক ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। এরূপ আর্থিক চাপের মধ্যে একটি কল্যাণমুখী বাজেট প্রস্তুত করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
আগামী বছরের শুরুতে হতে পারে জাবির সপ্তম সমাবর্তন: উপাচার্য
আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সপ্তম সমাবর্তন। শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের ৪২তম বার্ষিক অধিবেশন এ তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান।
অধিবেশনে লিখিত ভাষণে উপাচার্য বলেন, ২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আগামী বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে সপ্তম সমাবর্তন আয়োজন করতে আগ্রহী। এ বিষয়ে সকলের পরামর্শ ও মতামত প্রত্যাশা করছি।
উপাচার্য আরও জানান, বিগত শিক্ষাবর্ষে ১ হাজার ৬৭ জন শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান), ১ হাজার ১৮২ জন শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর, ৩ জন এমফিল ও ৪৭ জন গবেষক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
আওয়ামী লীগপন্থি সিনেটরদের প্রবেশে বাঁধা
এ দিকে দুপুর আড়াইটার দিকে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আওয়ামী লীগপন্থি সিনেটরদের প্রবেশ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলের প্রবেশপথে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিক-উর-রহমান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক যুগল কৃষ্ণ দাস এবং বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিগার সুলতানা পসিনেট হলে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্দেশে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তারা সিনেট হল ত্যাগ করেন।