ভারতের ইন্দোরে সম্প্রতি চমকপ্রদ সোনার থিমযুক্ত এক প্রাসাদ ঘুরে এসেছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর প্রিয়ম সরস্বত। এ প্রাসাদের আসবাব থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক সকেট পর্যন্ত সবকিছু তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে খাঁটি সোনা! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ব্যতিক্রম বাড়ির ভিডিও শেয়ার করার পর থেকেই তা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, প্রাসাদের ভেতরটা ঘুরে দেখছেন প্রিয়ম। বাড়ির মালিকের অনুমতি নিয়ে তিনি দর্শকদের বাড়ির ভেতরের নানা অংশ ঘুরে দেখান। বাড়ির ভেতরে বিলাসবহুল গাড়ির একটি সংগ্রহশালাও রয়েছে। সেখানে শোভা পাচ্ছে ১৯৩৬ সালের বিরল একটি মার্সিডিজ গাড়ি। ঘরের অলংকরণে সবচেয়ে চোখে পড়ে যেটা তা হলো, সোনার থিমে মোড়ানো সবকিছু। এমনকি বৈদ্যুতিক সকেটও মোড়ানো ২৪ ক্যারেট সোনা দিয়ে!

বাড়ির মালিক দম্পতি জানান, এই সোনায় মোড়া প্রাসাদে ১০টি শয়নকক্ষ ও একটি নিজস্ব গোশালা রয়েছে। আলাপচারিতায় উঠে আসে মালিকের অনুপ্রেরণাদায়ী জীবনের গল্প। তিনি জানান, কীভাবে কঠিন বাস্তবতা থেকে উঠে এসে আজ এক সফল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি।

স্মৃতি হাতড়ে মালিক বলেন, ‘২৫ জনের পরিবারের কাছে ছিল মাত্র একটি পেট্রলপাম্প। তখনই বুঝেছিলাম, এ অবস্থায় টিকে থাকা সহজ হবে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে পা রাখি সরকারি ঠিকাদারির জগতে। আজ আমরা সরকারকে সড়ক, সেতু আর ভবন নির্মাণ করে দিচ্ছি। এখন তৈরি করছি ৩০০ কক্ষের একটি বিলাসবহুল হোটেল। এটাই আমার বেড়ে ওঠার গল্প।’

ইনস্টাগ্রামে এই ব্যতিক্রমী প্রাসাদের ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘ভারতের ইন্দোরে সোনায় সাজানো বাড়ি’।

ভিডিওটি প্রকাশের পরই তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। কেউ কেউ বলেন, বাড়িটি যেন সরাসরি কোনো সিনেমার সেট থেকে উঠে এসেছে। কেউবা মজা করে বলেন, ‘এমনকি সকেটও সোনার তৈরি!’ তবে এতটা জাঁকজমক দেখে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন অনেকে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

উপহার দেওয়া সম্পর্কে ইসলাম

উপহার দেওয়া এবং গ্রহণ করা ইসলামে অত্যন্ত প্রশংসিত এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহের অংশ। এই নিবন্ধে আমরা ইসলামে উপহার দেওয়ার নীতি, এর তাৎপর্য এবং প্রয়োগের উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

 কোরআনে উপহার দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি

কোরআনে উপহারকে সরাসরি ‘হাদিয়া’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি, তবে আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আমাদের জীবনের সবকিছু—সম্পদ, পরিবার, ইমান—আল্লাহর উপহার। এই উপহারগুলোর বিনিময়ে আল্লাহ কিছু চান না, তবে তাঁর আদেশ ও নিষেধ পালন আমাদের জন্য আরেকটি উপহার, কারণ এগুলো আমাদের জান্নাতের পথে নিয়ে যায়।

নবীজি উপহার গ্রহণ করতেন এবং তার বিনিময়ে কিছু দিতেন।সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩,৫৩৬

কোরআনে বিশেষ করে নবীদের জন্য দেওয়া ‘জ্ঞানের উপহার’ (ইলম) এবং ধার্মিকদের জন্য জান্নাতের নিয়ামতের কথা উল্লেখ আছে। কোরআনে আটটি স্থানে নবী বা জ্ঞানী ব্যক্তিদের জ্ঞান ‘আল্লাহ–প্রদত্ত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৪, সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭৯)

এ ছাড়া জান্নাতের পুরস্কারগুলোকে ‘নিয়ামত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (সুরা সফফাত, আয়াত: ৪০-৪৮)

আরও পড়ুনবিবাহে মহর, যৌতুক ও উপহার০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮হাদিসে উপহার দেওয়ার বিধান

রাসুল (সা.) উপহার গ্রহণ করতেন এবং এর বিনিময়ে কিছু দিতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবীজি উপহার গ্রহণ করতেন এবং তার বিনিময়ে কিছু দিতেন।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩,৫৩৬)

ইসলামে উপহার দেওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন নেই, যেমন জন্মদিন বা বিশেষ উৎসব, যা পশ্চিমা ঐতিহ্য থেকে আলাদা।

প্রস্তাবিত উপহার কী কী?

ইসলামে উপহার ব্যবহারিক, উপকারী এবং গ্রহীতার জন্য মূল্যবান হওয়া উচিত। হাদিসে নির্দিষ্ট কোনো উপহারের সুপারিশ নেই, তবে সুগন্ধি এবং খাবার জনপ্রিয় ছিল। নবীজিকে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি কখনো প্রত্যাখ্যান করেননি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৫৮২)

হাদিসে নির্দিষ্ট কোনো উপহারের সুপারিশ নেই, তবে সুগন্ধি এবং খাবার জনপ্রিয় ছিল। নবীজিকে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি কখনো প্রত্যাখ্যান করেননি।

সুগন্ধি জুমার দিন ও নামাজের আগে ব্যবহারকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খাবার উপহার হিসেবে এলে রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করতেন, ‘এটি সদকা না উপহার?’ যদি উপহার হতো, তিনি তা গ্রহণ করতেন; সদকা হলে তা খেতেন না। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৬৫৬)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে মুসলিম নারীরা, তোমরা কেউ যেন প্রতিবেশীকে দেওয়া উপহারকে তুচ্ছ মনে না করো, এমনকি তা যদি ভেড়ার পায়ের মাংসও হয়।’ (রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস: ৩০৪)

বোঝা যায় যে উপহারের মূল্য নয়, নিয়ত ও ভালোবাসাই গুরুত্বপূর্ণ।

উপহার দেওয়ার প্রভাব কী?

উপহার দেওয়া হৃদয়ের মধ্যে মালিন্য দূর করে এবং সম্পর্ককে দৃঢ় করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একজন আরেকজনকে উপহার দাও, উপহার হৃদয়ের মধ্যে মালিন্য দূর করে।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২১৩০)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একজন আরেকজনের সঙ্গে উপহার বিনিময় করো, এটি হৃদয়ের ক্রোধ দূর করে।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২১৩০)

উপহার শান্তি ও বন্ধুত্বের বার্তা বহন করে, এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যেও।

আরও পড়ুনরাসুল (সা.) তাঁকে চাদর উপহার দিলেন০৬ এপ্রিল ২০২৫উপহার দিতে না পারলে কী করবেন?

যদি কেউ আর্থিক বা অন্য কারণে উপহার দিতে না পারেন, তবে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি উপহার পায় এবং তার কাছে কিছু ফেরত দেওয়ার থাকে, তবে তা দিক। যদি কিছু না থাকে, তবে তার প্রশংসা করুক এবং তার পক্ষে ভালো কথা বলুক। যে তা করে, সে কৃতজ্ঞতার দায়িত্ব পালন করে। আর যে কৃতজ্ঞতা গোপন করে, সে অকৃতজ্ঞ। আর যে এমন গুণ প্রকাশ করে যা তার নেই, সে দ্বিমুখী প্রতারণার পোশাক পরিধানকারীর মতো।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২০১৬)

কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে উপহারের মূল উদ্দেশ্য পূরণ করা যায়।

কীভাবে শুরু করবেন

উপহার দেওয়া একটি সুন্নত। এই সুন্নতের চর্চার মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন দূর করতে এগিয়ে আসতে পারি। আসুন দেখা যাক, কীভাবে উপহার দেওয়ার সুন্নতটি অভ্যাসে পরিণত করতে পারি:

হে মুসলিম নারীরা, তোমরা কেউ যেন প্রতিবেশীকে দেওয়া উপহারকে তুচ্ছ মনে না করো, এমনকি তা যদি ভেড়ার পায়ের মাংসও হয়।রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস: ৩০৪

১. ছোট উপহার দিয়ে শুরু করুন: যেমন একটি বই, সুগন্ধি বা খাবার উপহার দিন। এমনকি একটি হাসিও উপহার হতে পারে।

২. নিয়মিত উপহার দিন: বিশেষ দিনের অপেক্ষা না করে প্রতিবেশী, বন্ধু বা আত্মীয়দের ছোট উপহার দিন।

৩. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন: উপহার পেলে ধন্যবাদ জানান এবং গ্রহীতার জন্য দোয়া করুন।

৪. নিয়ত সঠিক রাখুন: উপহার দেওয়ার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সম্পর্ক উন্নতির নিয়ত করুন।

৫. অমুসলিমদের উপহার দেওয়া: অমুসলিম বন্ধুদের উৎসবের সময় উপহার দেওয়া জায়েজ, যদি তা তাদের ধর্মীয় আচারের সমর্থন না করে। এটি সম্পর্ক জোরদার ও দাওয়াহর মাধ্যম হতে পারে।

উপহার দেওয়া ও গ্রহণ করা ভালোবাসা ও ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যম। কোরআন ও হাদিস আমাদের উপহারের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা ও সম্পর্ক গড়ার গুরুত্ব শেখায়। উপহারের মূল্য নয়, বরং নিয়ত ও ভালোবাসাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও কৃতজ্ঞতা ও ভালো কথার মাধ্যমে উপহারের উদ্দেশ্য পূরণ করা যায়। 

আরও পড়ুনপ্রতিবেশীর অধিকার ইমানের মানদণ্ড১৪ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোনারগাঁ অডিটোরিয়াম সংস্কারের নামে অর্থ লোপাটের অভিযোগ
  • উপহার দেওয়া সম্পর্কে ইসলাম