নাইক্ষ্যংছড়িতে অপহরণের পর হত্যা, গ্রেপ্তার ৩
Published: 22nd, July 2025 GMT
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় সৈয়দ নূর (৩১) নামে যুবককে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পর হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে দুইজন রোহিঙ্গা নাগরিক বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় বান্দরবান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল করিমের স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের আমতলী এলাকার ইটভাটার পাশ থেকে সৈয়দ নূরকে অপহরণ করা হয়। পরে ২১ জুলাই ডুলুবুনিয়া এলাকার গহীন পাহাড়ের খাদ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আরো পড়ুন:
যশোরে পাওনা টাকা চাওয়ায় ১ ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা
মামলার হুমকি দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেন জামাল: পুলিশ সুপার
নিহত সৈয়দ নূর ও অভিযুক্ত মোহাম্মদ ইছমাইল (২৭) পরস্পরের পরিচিত ছিলেন। নিহত সৈয়দ নূরের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন মোহাম্মদ ইছমাইল। ধার শোধ না করায় তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। স্থানীয়ভাবে সালিশে বসে টাকা ফেরতের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ইছমাইল টাকা ফেরত না দিয়ে বরং ক্ষিপ্ত হয়ে সৈয়দ নূরকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ইছমাইল পূর্বপরিকল্পিতভাবে দুই সহযোগী রোহিঙ্গা নাগরিক রহমত উল্লাহ (৩২) এবং আলী হোসেন ওরফে মুনিয়াকে ভাড়া করে। এরপর ভিকটিমকে টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে ডেকে এনে অপহরণ করা হয়। পরে ভিকটিমের মোবাইল দিয়ে তার স্ত্রীকে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা পেয়েও তাকে মুক্তি না দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়।
পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রথমে ঘুমধুম থেকে ইছমাইলকে এবং তার তথ্য অনুযায়ী রহমত উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে। পরে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আলী হোসেনকে। তাদের দেখানো মতে, ভিকটিমের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ১৯ জুলাই একটি হত্যা মামলা রুজু হয়েছে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকা/চাইমং/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ন হত
এছাড়াও পড়ুন:
‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশের স্মরণে শাহবাগে সমাবেশ, ৩ দফা দাবি
‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশ’–এর এক বছর পূর্তিতে প্রগতিশীল নারী সংগঠন, স্বতন্ত্র অধিকারকর্মী এবং নারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আজ সোমবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সমাবেশের প্রতিপাদ্য ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম চলবেই।
গত বছরের ২৭ জুলাই কারফিউ ভেঙে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নারীরা পল্টন মোড়ে ‘হামার বেটাক মারলু ক্যানে’ শীর্ষক একটি সমাবেশ করেছিলেন।
সমাবেশে নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলের অবসান ঘটলেও এখনো ফ্যাসিবাদী কাঠামোর অবসান হয়নি। বরং দিন দিন নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে। যেখানে পাহাড়–সমতলের একের পর এক নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও মব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে নিপীড়ককে আশ্রয় ও দায়মুক্তি দিচ্ছে রাষ্ট্র।
তথ্য আপা রাজস্বকরণ আন্দোলনের প্রতিনিধি রোমানা ইসলাম বলেন, তথ্য আপারা দুই মাস ধরে প্রেসক্লাবে তাঁদের চাকরি রাজস্বকরণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন, বসে আছেন। অথচ তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। তাঁদের ৭ বছর কর্মজীবনে বেতন থেকে কেটে নেওয়া ২০ কোটি টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।
হিল উইমেনস ফেডারেশনের সদস্য রুপসী চাকমা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার সুষ্ঠু বিচার হবে, তাই ভেবেছিল বাংলাদেশের নারী সমাজ। কিন্তু চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস নিরাপদে ঘুরে বেড়ালেও কল্পনা চাকমার যে মামলাটি আওয়ামী সরকার খারিজ করেছে, তা একইভাবে বলবৎ আছে এবং মামলা পুনরায় শুরুর জন্য শুনানির তারিখ বারবার পেছাচ্ছে।
বম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লালরিথাং বম অভিযোগ করেন, আওয়ামী সরকার বম জাতির ওপর ‘কালেক্টিভ পানিশমেন্ট’–এর নামে যত্রতত্র থেকে নিরীহ বমদের আটক শুরু করেছিল। আজও কারাগারে বমরা আটকে আছে। তিনজন বম ব্যক্তিকে কারাগারে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আজ সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, দুই মাস ধরে আন্দোলনরত তথ্য আপাদের চাকরি রাজস্বভুক্ত করতে হবে; নিম্ন আদালতে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের আদেশ বাতিল করে পুনঃ তদন্ত ও চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচারের আওতায় আনা এবং পাহাড় ও সমতলে নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং মব সন্ত্রাসের বিচার করতে হবে এবং কারাগারে আটক সব বমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন শহীদ শেখ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলু মাখামিন শিল্পী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অর্ণি আনজুম প্রমুখ।
পাশাপাশি সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন অ্যাকটিভিস্ট ও কবি ফেরদৌস আরা রুমী, আইনজীবী সাদিয়া আরমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য জাকিয়া শিশির, অ্যাকটিভিস্ট প্রাপ্তি তাপসী, চিকিৎসক সুরাইয়া ইয়াসমিনসহ আরও অনেকে।
সমাবেশে সূচনা ও সমাপনী সংগীত পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।