গতকাল উত্তরায় একটি স্কুলভবনে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ঘন কালো ধোঁয়া, মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা আর প্রিয়জন হারানো পরিবারের কান্না দেখে পুরো দেশ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমন দুঃসময়ে মনে হয় যেন সব থেমে গেছে, অথচ কাজ না করলে বিপদ আরও বাড়ে। পুরো পরিস্থিতি বুঝে উঠতে সময় লাগছে, কিন্তু একটা কথা সঙ্গে সঙ্গেই বোঝা গেল: এমন বিপদে কী বলতে হবে বা কী করতে হবে, তার জন্য আমাদের সংস্থাগুলো তৈরি ছিল না। আমরাও কি নাগরিক হিসেবে তৈরি ছিলাম?

ঘটনার পরের কয়েক ঘণ্টা বোঝা গেল, বাংলাদেশে বিপদ সামলানোর ব্যবস্থায় অনেক ঘাটতি আছে। আমরা এখন এমন এক সময়ে বাস করছি, যেখানে একটা এক্স পোস্ট (টুইট) দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে, অথচ বিপদ নিয়ে কথা বলার আমাদের পদ্ধতি এখনো অনেক পুরোনো।

এই দুঃখজনক ঘটনাটা আমাদের জাগিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশের এখনই দরকার ভালো পরিকল্পনা করে কথা বলা এবং বিপদ কমানোর ব্যবস্থা তৈরি করা—বিপদ হওয়ার পর তা নিয়ে ভাবলে হবে না, বরং এগুলো দেশের পরিচালনার এবং নাগরিকের দায়িত্বের মূল অংশ হতে হবে।

সময়মতো সুনির্দিষ্ট সরকারি তথ্যের আদান-প্রদানে না হওয়ায় ভুল তথ্য ছড়ানোর সুযোগ পেয়েছে। যাচাই না করা ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। বিদেশি ষড়যন্ত্র, পাইলটের আত্মহত্যা, এমনকি অদ্ভুত সব গুজবও মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। সামাজিক মাধ্যমে গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল, ভালো মানুষ আর সুযোগসন্ধানী—সবাই মিলে তা ছড়াচ্ছিল। যখন সত্যি খবর দ্রুত পাওয়ার সুযোগ থাকে না, তখন মানুষ আবেগী হয়ে পড়ে, মানুষ আতঙ্কিত হয়। যখন বিপদ আসে, তখন সবার আগে বিশ্বাস ভেঙে যায় না—তথ্য না থাকলেই বিশ্বাস মরে যায়।

একটা খুবই খারাপ বিষয় ছিল মৃতদের ছবি—যাদের মধ্যে কিছু শিশুও ছিল—ফেসবুক, টিকটক এবং হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়া। কিছু ক্ষেত্রে, দুর্ঘটনার জায়গায় শোকাহত পরিবারের মুখের ওপর জুম করে ছবি তোলা হয়েছিল, যেন তাদের কষ্ট দেখানো একটা খেলা। এটা সাংবাদিকতা নয়। এটা কৌতূহলের আড়ালে নিষ্ঠুরতা।

ইউনিসেফের নিয়ম খুব স্পষ্ট: শিশুদের ছবি কোনো দুঃখজনক ঘটনার প্রতীক হিসেবে খুব সাবধানে, তাদের সম্মান বজায় রেখে এবং তাদের অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। তাদের পরিচয় গোপন রাখতে হবে, তাদের গল্প সাবধানে বলতে হবে। অথচ, টিক-টকারদের ভাইরাল হওয়ার প্রতিযোগিতায় এই সাধারণ নিয়মগুলো মানা হয়নি। পরিবারের মানসিক কষ্ট শুধু তোলা হয়নি; তা সারা দুনিয়াতে দেখানো হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে, মন্তব্য করা হয়েছে এবং টাকা আয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

আমাদের এটা নিয়ে কথা বলতে হবে, রাগ করে নয়, বরং দায়িত্ব নিয়ে। সম্পাদকদের তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, সামাজিক মাধ্যমগুলোকে খারাপ ছবি বা তথ্য সরিয়ে দিতে হবে, আর নাগরিকদের পোস্ট করার আগে ভাবতে হবে। একটা ছবি শেয়ার করা হয়তো সচেতনতা বাড়াচ্ছে মনে হতে পারে, কিন্তু যখন তা কারও সম্মান নষ্ট করে, তখন তা এক ধরনের শোষণ হয়ে যায়।

এখানে সমস্যাটা শুধু একটা প্রতিষ্ঠানের নয়। উত্তরার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, বিশেষ করে যখন সামরিক বিষয় জড়িত থাকে, তখন দ্রুত, স্বচ্ছ এবং মানবিক যোগাযোগ জরুরি। চুপ থাকলে তদন্ত সুরক্ষিত থাকে না; বরং সন্দেহ বাড়ে। সংবাদমাধ্যমগুলো, যদিও কিছু সংবাদমাধ্যম সংযম দেখিয়েছিল, কিন্তু চাঞ্চল্যকর খবরের পেছনে ছুটেছিল। শোকাহত বাড়ি থেকে সরাসরি দেখানো, অনুমানভিত্তিক খবর এবং একে অপরের উল্টো খবর শুধু বিভ্রান্তি বাড়িয়েছিল।

বিপদে সাংবাদিকতার প্রথম কাজ হলো খবর যাচাই করা, ভাইরাল হওয়া নয়। অনেক সংস্থারই আগে থেকে তৈরি যোগাযোগ পরিকল্পনা ছিল না। কী প্রশ্ন আসতে পারে, কী উত্তর দিতে হবে—এমন মৌলিক কোনো প্রস্তুতি ছিল না।

২০২৫ সালে এটা মানা যায় না। নাগরিক এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা, যদিও তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিল, কিন্তু তারা অনেক ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। খারাপ ছবি, ভুল খবর, ভুয়া উদ্ধারের খবর এবং মনগড়া হতাহতের তালিকা অবাধে ছড়িয়ে পড়েছে । আগুন লাগলে কী করতে হয় বা ভূমিকম্প হলে কী করতে হয়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণের মতোই সংকটকালে কী করে যোগাযোগ করতে হয় সে বিষয়ে মানুষের শিক্ষা দরকার। কখন কিছু শেয়ার করা উচিত নয়, তা জানা, কী শেয়ার করা উচিত তার মতোই জরুরি।

পরিকল্পিত যোগাযোগ (স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন) মানে মিথ্যা বলা বা শুধু প্রচার করা নয়। এটি হলো একটি বিপদের আগে, চলাকালীন এবং পরে তথ্য ব্যবস্থাপনার একটি চিন্তাভাবনা করে করা, স্বচ্ছ এবং মানুষের জন্য তৈরি পদ্ধতি। যদি বাংলাদেশের এমন একটি ব্যবস্থা থাকত, তাহলে আমরা দেখতাম যে ৬০ মিনিটের মধ্যে একজন প্রশিক্ষিত ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমকে বলছেন, যাচাই করা খবর সহ একটি লাইভ তথ্য বোর্ড থাকছে, বাংলা ও ইংরেজিতে নিয়মিত খবর দেওয়া হচ্ছে, সঠিক খবর ছড়ানোর জন্য সবার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে এবং গুজব বন্ধ করার জন্য প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।

ঝুঁকি কমানো শুধু একটি ফাইলে রাখা কাগজপত্রের মতো নয়। এর মানে হলো আবাসিক এলাকার খুব কাছে থাকা প্রশিক্ষণের জায়গাগুলো চিহ্নিত করা, উড়োজাহাজের পথের নিয়মিত নিরাপত্তা পরীক্ষা করা, শুধু উদ্ধারের জন্য নয়, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যও নকল মহড়া দেওয়া এবং বিমান দুর্ঘটনা সম্পর্কে কীভাবে দায়িত্বের সঙ্গে খবর প্রকাশ করতে হয় সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। এর মানে হলো বিপদ মোকাবিলার প্রস্তুতিতে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করা। উত্তরার মানুষ যদি বিমান দুর্ঘটনার সময় কী করতে হবে সে বিষয়ে আগে থেকে প্রশিক্ষণ পেত, তাহলে হয়তো সেখানকার অনেক বিশৃঙ্খলা কমানো যেত।

১৮ কোটি ডিজিটাল নাগরিকের একটি সাধারণ নীতিবোধ থাকা উচিত। ডিজিটাল সহানুভূতির ওপর একটি দেশের নীতি অনেক আগেই দরকার ছিল। স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্র—সব জায়গায় অনলাইনে দায়িত্বশীল আচরণ শেখাতে হবে। শেয়ার করার আগে ভাবুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: এটা কি সত্যি? এটা কি সাহায্য করবে? এটা কি সম্মান বাড়াবে না ক্ষতি করবে? যদি আমার পরিবার কষ্টে থাকত তাহলে কি আমি এটা শেয়ার করতাম? ভুল তথ্য মানুষকে মারে। মিথ্যা তথ্য কষ্ট দেয়। কিন্তু চুপ থাকলে দুটোই বাড়ে। ইন্টারনেট সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছে। এখন সময় এসেছে আমরা যেন বিবেক দিয়ে তা ব্যবহার করতে শিখি।

এই লেখাটা কোনো অভিযোগ নয়; এটা একটা অনুরোধ। আমাদের সম্মিলিত কষ্টকে সংকল্পে পরিণত করার একটা অনুরোধ। উত্তরায় যা ঘটেছে, তা আমরা পাল্টাতে পারব না। কিন্তু আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে পরের বার যখন কোনো বিপদ আসবে, তখন আমরা বিশৃঙ্খলা নয়, বরং স্পষ্টতা দিয়ে তার মোকাবিলা করব।

আমরা সরকারকে বলছি দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য একটি জাতীয় কৌশলগত যোগাযোগ ইউনিট তৈরি করতে, কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষকে বিপদকালে যোগাযোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে, এবং শিশু-কিশোরদের ছবি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে তথ্য সুরক্ষা ও নৈতিক নিয়মকানুন মেনে চলতে। আমরা সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ করছি অনলাইনে মানুষের কষ্টের কথা ভেবে তাদের নৈতিক নিয়মগুলো আবার দেখতে এবং যাচাই না করা খবর বা মানুষের কষ্টকে কাজে লাগানো থেকে বিরত থাকতে। আর আমরা নাগরিকদের বলছি অনলাইনে সম্মান বজায় রাখতে, ভুয়া খবর রিপোর্ট করতে, এবং মনে রাখতে যে প্রতিটি ছবির পেছনে একটি পরিবার আছে যারা বাঁচার চেষ্টা করছে।

একটি জাতিকে কোনো দুঃখজনক ঘটনা দিয়ে চেনা যায় না। এর প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়াই আমাদের পরিচয় তুলে ধরে। কৌশলগত যোগাযোগ এবং বিপদ কমানো শুধু কিছু কাজের অংশ নয়—এগুলো আমাদের সবার দায়িত্ব। আমাদের আকাশ ভরে দেওয়ার জন্য যেন আরেকটা সাইরেনের অপেক্ষা করতে না হয়।

রিজওয়ান-উল-আলম সহযোগী অধ্যাপক, মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম, রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব দম ধ শ য় র কর ব যবস থ ব যবহ র দ র ঘটন আম দ র পর ব র র জন য ঘটন র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ