গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে দেশের মানুষের কপালে অনেক দুর্ভোগ আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। আজ শনিবার দুপুরে ভোলার লালমোহন উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা ও পৌর বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছে। প্রফেসর ইউনূস দেশবরেণ্য ব্যক্তি। বিদেশে তাঁর অনেক পরিচিতি আছে। আমরা সব রাজনৈতিক দল তাঁকে সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা তাঁর কাছ থেকে যা আশা করেছিলাম, উপদেষ্টা পরিষদ কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যাঁরা জুলাই–আগস্টে আহত হয়েছেন, হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন, তাঁদেরও উন্নয়ন করতে পারেন নাই। তাঁদেরও দেখতে যাওয়ার সময় তাঁদের নাই।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা লক্ষ করছি, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি, এই উপদেষ্টা পরিষদ আসন্ন নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে। তাদের মনের গোপন ইচ্ছা যে এই সরকার কমছে কম পাঁচ বছর থাকুক। কিন্তু এই সময়ে দেশের অর্থনীতি ক্রমেই নিচের দিকে যাচ্ছে। আহতদের চিকিৎসা পর্যন্ত দিতে পারছে না। রাত তিনটার সময় ঘোষণা দিচ্ছে, আগামীকাল পরীক্ষা স্থগিত। রাত তিনটায় কে শুনবে? কত মানুষের ভোগান্তি হয়। ছাত্রদের অভিভাবকদের কত অসুবিধা হয়, দরিদ্র অভিভাবকদের কত ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’

সরকারের সমালোচনা করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এরা জীবনে গ্রামে থাকে নাই, গ্রামের মানুষকে চেনে না। তাদের দুঃখকষ্ট বোঝে না। রাজনীতি সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। কোনোরকমে বসে আছে, কোনো দায়িত্ববোধ নেই। এভাবে তো একটা দেশ চলে না। নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার আর কোনো উপায় নেই। আশা করি, অতি দ্রুত, অল্প সময়ের মধ্যে, ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দেবেন। জনগণ যাঁদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন, আমরা তাঁদের মাথা পেতে নেব। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে এ দেশের মানুষের কপালে অনেক দুর্ভোগ আছে।’

পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘এখন দেশে সংস্কার প্রস্তাব চলছে। নানা ধরনের আঁতেলরা মনের মাধুরী মিশিয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েই যাচ্ছে। যারা এখনো বাংলাদেশ দেখে নাই, ধানগাছের তক্তা হয় কি না, বলতে পারে না। তারাও এখন একের পর এক সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। এই সংস্কারের একটা হলো পিআর পদ্ধতি বা আনুপাতিক হারে ভোট গ্রহণ।’

লালমোহন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তাহারাত হাফিজের সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের রহমত উল্যাহ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক শফিউর রহমান, সদস্যসচিব রাইসুল আলম প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনীতিও করবেন আবার নির্বাচনেও যাবেন না, এটা হতে পারে না: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘যারা নির্বাচনকে ভয় পায়, তাদের রাজনীতির দরকার নেই। তারা প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করুক। এনজিও হিসেবে কাজ করতে পারে। আপনি রাজনীতিও করবেন, আবার নির্বাচনেও যাবেন না, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবেন, এটা তো হতে পারে না।’

আজ রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় আমীর খসরু এ কথাগুলো বলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর উপলক্ষে এই সভা হয়।

আমীর খসরু বলেন, যেসব দেশে এ ধরনের বিপ্লব হয়েছে এবং সে দেশগুলোর মধ্যে যেখানে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা হয়েছে, সেখানে বিভাজন হয়েছে। গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। যারা দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফিরে যেতে পেরেছে, তারা আর্থিক, সামাজিক ও গণতান্ত্রিকভাবে ভালো করেছে।

সবকিছুতে ঐকমত্য হবে না উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দল; সবকিছুতে ঐকমত্য হবে না। জাতীয় বিষয়ে এক থাকতে হবে। কিন্তু রাজনৈতিক আদর্শ, চিন্তা, দর্শন আলাদা। এই বিভেদ না থাকলে তো গণতন্ত্র হবে না। একদলীয় শাসন, বাকশাল করতে বসিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভিন্নমত থাকতে পারে, কিন্তু একে অপরের প্রতি সহনশীল হতে হবে। সাংঘর্ষিক রাজনীতিতে যাওয়া যাবে না। দ্বিমত থাকবে, কিন্তু শ্রদ্ধা থাকতে হবে।’

শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের মানুষের মনস্তত্ত্বে পরিবর্তন এসেছে বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু। যেসব দল ও ব্যক্তি এই পরিবর্তনকে বুঝতে পারছে না, তাদের কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। পরিবর্তন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আনতে হবে, বলেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমার কথা শুনলে নির্বাচন মানব, না শুনলে নির্বাচনে যাব না। এটা অগণতান্ত্রিক আচরণ। গণতন্ত্রের কথা বলে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া। শেখ হাসিনাও যা বলত, তা–ই মানতে হতো। আমাদের কোনো অধিকার ছিল না।’

আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিতর্কমুক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব‍্যবস্থা না হলে গণতন্ত্র আবার হুমকিতে পড়বে: এবি পার্টি
  • মানুষ ঠিকমতো ইভিএম বোঝে না, পিআর বুঝবে কী করে: মির্জা ফখরুল
  • স্থানীয় শাসনব্যবস্থায় নাগরিকেরা কোথায়
  • রাজনীতিও করবেন আবার নির্বাচনেও যাবেন না, এটা হতে পারে না: আমীর খসরু