আইনের সংস্কার দূরে থাকুক, এ পর্যন্ত তথ্য ও মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়নি: ইফতেখারুজ্জামান
Published: 4th, August 2025 GMT
তথ্য এবং মানবাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিশন গঠন অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের তালিকায় কেন প্রাধান্য পায়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
আজ সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করে টিআইবি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘একধরনের বিশ্ব রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে যে এক বছর পার হয়ে গেছে, অথচ এখনো সেটি (তথ্য ও মানবাধিকার কমিশন) গঠিত হয়নি।এসব আইন সংস্কার দূরে থাকুক, এ দুটি কমিশন এখন পর্যন্ত নেই।’ এ দুটি কমিশন গঠনে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
নাগরিক সমাজের অধিকার ও বাক্স্বাধীনতার ক্ষেত্রগুলোতে যে ধরনের আইনি প্রতিবন্ধকতা আছে, তা দূর করতে হবে বলে জানান ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় নতুন সাইবার সুরক্ষা আইনের কিছু ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এই আইন বাস্তবায়নে যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। আইনে বেশ কিছু দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র রয়ে গেছে বলে জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইনের ১৪ নম্বর ধারা বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্য সরাসরি হুমকি বলে উল্লেখ করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটানো হলেও কর্তৃত্ববাদী চর্চার পতন চাওয়া হচ্ছে না। এর দৃষ্টান্ত হলো, এ ধরনের আইনে সংস্কার আনতে সরকারের ব্যর্থতা।
সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ৫ আগস্ট–পরবর্তী রাজনৈতিক যাত্রা অশুভ ছিল। ওই দিন বিকেল থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের একাংশ দলবাজি, চাঁদাবাজি, মামলা, বাণিজ্য শুরু করে। গত এক বছর ধরে তা আরও বেড়েছে। এমনকি দলের উচ্চপর্যায় থেকে ব্যবস্থা নিয়েও এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এর ফলে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের জন্মলগ্ন থেকে একই রোল মডেল অনুসরণ করেছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংস্কারের কথা নিয়ে আলোচনা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয় না বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান।
গবেষণা প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য সত্ত্বেও যেসব সংস্কারে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর সাংবিধানিক ও আইনি বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে প্রশ্ন এখনো অনিশ্চিত। ফলে সংস্কারের আশায় ধাক্কা লাগতে পারে, রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম ও মো.                
      
				
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইফত খ র জ জ ম ন ট আইব র এক বছর র পতন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক