সরু ধাতব পদার্থের ১০ ইঞ্চি মাপের একটি রিং। সেটি রঙিন ফিতা দিয়ে মোড়ানো। এরপর সুই, কুশিকাঁটা, সাধারণ সুতা, দড়ি সুতা দিয়ে মাঝের ফাঁকা অংশে মাকড়সার জালের মতো নকশা আঁকা হলো। বিভিন্ন জায়গায় বসানো হলো নানা আকৃতির রঙিন পুঁতি। গোলাকার রিংয়ের এক–দ্বিতীয়াংশ জায়গা জুড়ে স্থাপন করা হলো রঙিন পালক। যে পণ্যটি তৈরি হলো, সেটির নাম ‘ড্রিমক্যাচার’।

ড্রিমক্যাচার মূলত ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারী পণ্য হিসেবে পরিচিত। সাধারণত শোবার ঘর, করিডর, বারান্দা, কিংবা ড্রয়িং-ডাইনিংয়ের দেয়ালের নান্দনিকতা বাড়াতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এটি মূলত নেটিভ আমেরিকানদের (যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসী) সংস্কৃতির প্রতীক। সেখানে ‘ওজিবওয়ে’ নামের গোত্রের লোকেরা ড্রিমক্যাচারগুলোকে জাদুকরী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেন। তাঁদের ধারণা, ড্রিমক্যাচার বাড়িতে থাকলে নেতিবাচক আত্মাকে সরিয়ে সুখী স্বপ্নগুলো ঘুমন্ত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে যায়।

দিনাজপুর শহরের পশ্চিম রামনগর এলাকায় ২০২০ সালে বিভিন্ন আকৃতি ও রঙের এই ড্রিমক্যাচার তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন শামীমা নাছরিন (৩২)। প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন ‘চতুর্ভুজ’। একটি ভবনের নিচতলায় আড়াই হাজার স্কয়ার ফুট মাপের বাসা ভাড়া নিয়ে চলছে চতুর্ভুজের কার্যক্রম। শুধু ড্রিমক্যাচারই নয়, কারখানায় তৈরি হচ্ছে দড়ি সুতার পর্দা, জায়নামাজ হ্যাঙ্গার, বুকশেলফ, ঝুড়ি, কলমদানি, চাবির রিং, ডোরবেল, আয়না, টেবিল ল্যাম্প, টেবিলমেট, কুশিকাঁটার ওয়ালমেট, কুশন কভার, ফ্লাওয়ার হ্যাঙ্গার, শতরঞ্জি, বিভিন্ন ধরনের শোপিসসহ শতাধিক পণ্য। এসব পণ্য তৈরি হচ্ছে মালাই কড, সামারিয়ান (একধরনের সুতা), উলের সুতা, দড়ি সুতা, মিল্ক বাটন, পুঁতি, রঙিন পালক, লোহা কিংবা বেতের রিং, কাঠ ও মজবুত আঠার সমন্বয়ে। প্রতি মাসে অনলাইন-অফলাইন দুই মাধ্যমে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে মাসে গড়ে ১৫-১৭ শতাংশ লাভ থাকে চতুর্ভুজের।

সম্প্রতি চতুর্ভুজের কারখানা ও অফিস ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী ২১ জন নারী এসব পণ্য তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যাঁদের অধিকাংশই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। কেউ ফ্লোরে বসে ড্রিমক্যাচার বুনছেন, কেউ জানালার রেলিংয়ে সুতা আটকিয়ে গিঁট মেরে মেরে পর্দা তৈরি করছেন, কেউ–বা আঠা দিয়ে পালক লাগানোর কাজ করছেন। চতুর্ভুজের পরিচালক শামীমা নাছরিন ঘুরে ঘুরে দেখছেন, ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন। কখনো নিজে কুশিকাঁটা হাতে বসে কাজ করছেন। গ্রাহকের সঙ্গে পণ্য নিয়ে কথা বলছেন।

দিনাজপুর শহরের পশ্চিম রামনগর এলাকায় নিজ প্রতিষ্ঠান চতুর্ভুজের অফিসে পরিচালক শামীমা নাছরিন। সম্প্রতি তোলা ছবি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নেত্রকোনায় ঐতিহ্যবাহী দেউলি উৎসবে হাজংদের মিলনমেলা

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী দেউলি উৎসব। গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী উপজেলার শ্যামনগর গ্রামে বিরিশিরির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির আয়োজনে এই উৎসব হয়।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে বসবাসরত হাজং, গারো, কোচ, বানাই, ডালু, হদি সম্প্রদায়ের সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।

উৎসবের উদ্বোধন করেন হাজং মাতা রাশিমণি কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি ও আদিবাসী গবেষক মতিলাল হাজং। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিরিশিরির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক কবি পরাগ রিছিল। সঞ্চালনা করেন কবি দোলন হাজং।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনে বিএনপি–মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মিজানুর রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এম এ জিন্নাহ, সংস্কৃতিকর্মী আবদুল্লাহ আল মামুন, বিরিশিরির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য সন্ধ্যা রানী হাজং, জাতীয় হাজং সংগঠনের সভাপতি পল্টন হাজং, শ্যামনগর হাজং গ্রাম প্রতিনিধি সজল হাজং প্রমুখ।

আলোচনা শেষে শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালন, পূজা–অর্চনা এবং রাতে ‘মহিষাসুর বধ’ পালার মাধ্যমে উৎসবের সমাপ্তি হয়।

কবি পরাগ রিছিল বলেন, ‘হাজংরা উৎসবমুখর জাতি। কিন্তু এই সম্প্রদায়ের অধিকাংশ উৎসব আজ বিলুপ্তির পথে। তাদের ধর্মীয় ও কৃষিভিত্তিক উৎসবগুলোর মধ্যে দেউলি উৎসব অন্যতম বর্ণিল আয়োজন। আত্মপরিচয়, সংস্কৃতিচর্চা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে যেন তারা আরও যত্নশীল হয় এবং সোনালি ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করতে পারে—এ লক্ষ্যেই আমাদের এই আয়োজন।’

কায়সার কামাল বলেন, ‘ভারতীয় ইতিহাসের প্রথম উপনিবেশবিরোধী গণবিদ্রোহ ও তৎপরবর্তী সব স্বাধিকার আন্দোলনে নেত্রকোনার আদিবাসী জনগোষ্ঠী অপরিসীম ত্যাগ ও বীরত্বের সাক্ষ্য রেখেছে। হাতিখেদাবিরোধী বিদ্রোহ, গারো বিদ্রোহ, হাজং বিদ্রোহ, পাগলপন্থী বিদ্রোহ, টংক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন, কৃষক-প্রজা আন্দোলনসহ নানা আন্দোলনে তাঁরা অকাতরে জীবন দিয়েছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেত্রকোনায় ঐতিহ্যবাহী দেউলি উৎসবে হাজংদের মিলনমেলা
  • বন্দরে চোর সন্দেহে ২ যুবক আটক
  • নাটোর–১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পরিবর্তন চেয়ে রেললাইনে শুয়ে পড়লেন বঞ্চিত নেতার সমর্থকেরা