শামীমার কারখানায় ড্রিমক্যাচারসহ শতাধিক পণ্য, মাসে বিক্রি সাড়ে তিন লাখ টাকা
Published: 7th, August 2025 GMT
সরু ধাতব পদার্থের ১০ ইঞ্চি মাপের একটি রিং। সেটি রঙিন ফিতা দিয়ে মোড়ানো। এরপর সুই, কুশিকাঁটা, সাধারণ সুতা, দড়ি সুতা দিয়ে মাঝের ফাঁকা অংশে মাকড়সার জালের মতো নকশা আঁকা হলো। বিভিন্ন জায়গায় বসানো হলো নানা আকৃতির রঙিন পুঁতি। গোলাকার রিংয়ের এক–দ্বিতীয়াংশ জায়গা জুড়ে স্থাপন করা হলো রঙিন পালক। যে পণ্যটি তৈরি হলো, সেটির নাম ‘ড্রিমক্যাচার’।
ড্রিমক্যাচার মূলত ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারী পণ্য হিসেবে পরিচিত। সাধারণত শোবার ঘর, করিডর, বারান্দা, কিংবা ড্রয়িং-ডাইনিংয়ের দেয়ালের নান্দনিকতা বাড়াতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এটি মূলত নেটিভ আমেরিকানদের (যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসী) সংস্কৃতির প্রতীক। সেখানে ‘ওজিবওয়ে’ নামের গোত্রের লোকেরা ড্রিমক্যাচারগুলোকে জাদুকরী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেন। তাঁদের ধারণা, ড্রিমক্যাচার বাড়িতে থাকলে নেতিবাচক আত্মাকে সরিয়ে সুখী স্বপ্নগুলো ঘুমন্ত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে যায়।
দিনাজপুর শহরের পশ্চিম রামনগর এলাকায় ২০২০ সালে বিভিন্ন আকৃতি ও রঙের এই ড্রিমক্যাচার তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন শামীমা নাছরিন (৩২)। প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন ‘চতুর্ভুজ’। একটি ভবনের নিচতলায় আড়াই হাজার স্কয়ার ফুট মাপের বাসা ভাড়া নিয়ে চলছে চতুর্ভুজের কার্যক্রম। শুধু ড্রিমক্যাচারই নয়, কারখানায় তৈরি হচ্ছে দড়ি সুতার পর্দা, জায়নামাজ হ্যাঙ্গার, বুকশেলফ, ঝুড়ি, কলমদানি, চাবির রিং, ডোরবেল, আয়না, টেবিল ল্যাম্প, টেবিলমেট, কুশিকাঁটার ওয়ালমেট, কুশন কভার, ফ্লাওয়ার হ্যাঙ্গার, শতরঞ্জি, বিভিন্ন ধরনের শোপিসসহ শতাধিক পণ্য। এসব পণ্য তৈরি হচ্ছে মালাই কড, সামারিয়ান (একধরনের সুতা), উলের সুতা, দড়ি সুতা, মিল্ক বাটন, পুঁতি, রঙিন পালক, লোহা কিংবা বেতের রিং, কাঠ ও মজবুত আঠার সমন্বয়ে। প্রতি মাসে অনলাইন-অফলাইন দুই মাধ্যমে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে মাসে গড়ে ১৫-১৭ শতাংশ লাভ থাকে চতুর্ভুজের।
সম্প্রতি চতুর্ভুজের কারখানা ও অফিস ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী ২১ জন নারী এসব পণ্য তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যাঁদের অধিকাংশই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। কেউ ফ্লোরে বসে ড্রিমক্যাচার বুনছেন, কেউ জানালার রেলিংয়ে সুতা আটকিয়ে গিঁট মেরে মেরে পর্দা তৈরি করছেন, কেউ–বা আঠা দিয়ে পালক লাগানোর কাজ করছেন। চতুর্ভুজের পরিচালক শামীমা নাছরিন ঘুরে ঘুরে দেখছেন, ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন। কখনো নিজে কুশিকাঁটা হাতে বসে কাজ করছেন। গ্রাহকের সঙ্গে পণ্য নিয়ে কথা বলছেন।
দিনাজপুর শহরের পশ্চিম রামনগর এলাকায় নিজ প্রতিষ্ঠান চতুর্ভুজের অফিসে পরিচালক শামীমা নাছরিন। সম্প্রতি তোলা ছবি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইসির প্রস্তাব বাতিল করে আশাশুনিকে স্বতন্ত্র নির্বাচনী আসন করার দাবিতে মানববন্ধন
আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলাকে একীভূত করে সংসদীয় সাতক্ষীরা-৪ আসন করার প্রস্তাব বাতিল ও আশাশুনি উপজেলাকে স্বতন্ত্র আসন করার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে আশাশুনি উপজেলা পরিষদ সড়কে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাতক্ষীরার দুটি আসনসহ দেশের ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৩০ জুলাই এ খসড়া প্রকাশ করা হয়। পুনর্বিন্যাস করার আগে আশাশুনি ছিল সংসদীয় আসন সাতক্ষীরা-৩ এর মধ্যে। আশাশুনির ১১টি ইউনিয়ন, দেবহাটা উপজেলার পাঁচটি ও কালীগঞ্জ উপজেলার চারটিসহ মোট ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে ছিল সাতক্ষীরা-৩ আসন। পুনর্বিন্যাসের পর শ্যামনগর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও আশাশুনির ১১টি আসন নিয়ে সংসদীয় আসন সাতক্ষীরা-৪ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এতে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুস সোবহান, শোভনালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির নুরুল আবছার মুরতাজা, আশাশুনি বাজার বণিক সমিতির সভাপতি এ বি এম আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, আশাশুনি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জি এম মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আশাশুনি চারটি ও শ্যামনগর তিনটি দ্বীপে বিভক্ত। যোগাযোগব্যবস্থা খুবই নাজুক। আশাশুনির সঙ্গে শ্যামনগরের সড়কপথে সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। আশাশুনি থেকে শ্যামনগর যেতে হলে কালীগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে যেতে হয়। না হলে নদী পার হয়ে যাতায়াত করতে হয়। নদীর ওপর নেই কোনো সেতু। বিচ্ছিন্ন ও দূরবর্তী দুটি উপজেলা নিয়ে আসনবিন্যাস অকল্পনীয়। জনকল্যাণের কথা বিবেচনা করলে আশাশুনিকে কখনো শ্যামনগরের সঙ্গে একীভূত করা যায় না। আশাশুনিকে স্বতন্ত্র আসন না করা হলে আশাশুনির ভোটাররা ভোট বর্জন করবেন এমন প্রচার পাড়া–মহল্লায় শোনা যাচ্ছে দাবি করে ন্যায্য জনদাবির প্রতি সমর্থনের জোর আবেদন জানানো হয়।
বক্তারা অবিলম্বে আশাশুনিকে সাতক্ষীরা-৪ আসনে একীভূত করার প্রস্তাব বাতিল করার দাবির পাশাপাশি আশাশুনি ২০০৮ সালের আগে যে স্বতন্ত্র আসন ছিল, তা বহাল করার দাবি জানান।