ভাষার দূরত্বে হাসপাতালমুখী হতে চান না পাহাড়ি প্রবীণেরা
Published: 8th, August 2025 GMT
ভাষার প্রতিবন্ধকতা, সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা, ব্যয়বহুল চিকিৎসার কারণে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের মতো রোগে ভুগলেও হাসপাতালমুখী হন না পাহাড়ি এলাকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রবীণেরা। আধুনিক চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় প্রবীণদের অনেকে প্রতিকার পেতে সনাতনী চিকিৎসার আশ্রয় নেন। কেউ কেউ বৈদ্য ও গণকের দ্বারস্থ হন।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ-সংশ্লিষ্ট আচরণ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এচিত্র উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার বিএমইউর সম্মেলনকক্ষে এ গবেষণার সঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলে ম্যালেরিয়া নিয়ে সচেতনতার চিত্র ও খাগড়াছড়ি অঞ্চলে গর্ভবতী নারীদের ফুড ট্যাবু (বিশ্বাসজনিত খাবার বর্জন) বিষয়ক ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। দুই বছর ধরে সময় নিয়ে এসব গবেষণা সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
এই তিনটি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত গবেষকদের দুজন বিএমইউর সাবেক শিক্ষার্থী ও একজন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের (নিপসম) প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনজনই পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দা।
প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবার চিত্র নিয়ে করা গবেষণার মূল গবেষক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল অফিসার ডা.
রাজন তালুকদার বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকসহ অন্য স্টাফদের মধ্যে প্রায়ই বাংলাভাষী হওয়ায় চিকিৎসকদের কাছে প্রবীণেরা তাঁদের সমস্যা বুঝিয়ে বলতে পারেন না। সঙ্গে সঙ্গী না থাকলে ভাষিক যোগাযোগে অসুবিধার মুখে পড়তে হয় তাঁদের। সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় দেখে তাঁরা হাসপাতালে যেতে উৎসাহ পান না।
রাজন বলেন, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্টের নানা সমস্যা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রবীণদের কাছে প্রায় অপরিচিত নাম। তাঁদের কিছুসংখ্যক হাসপাতালে গেলেও রোগ নির্ণয়ে করতে দেওয়া বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে ভয় পান। বড় কোনো রোগ ধরা পড়তে পারে, এমন ভীতি থেকে তাঁরা এসব করতে চান না।
খাগড়াছড়ি জেলার সন্তান এই গবেষক বলেন, অনেকে আশপাশের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনে নিজের রোগের চিকিৎসা নিজে করা শুরু করেন (সেলফ মেডিকেশন)। বৈদ্য বা গণকের কাছে যান অনেকে। কেউ কেউ দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শকে অমান্য করে দ্বিগুণ ডোজের ওষুধ খেয়ে নেন বলে জানান তিনি।
ম্যালেরিয়া নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে রাঙামাটি জেলায়
তিন পার্বত্য জেলায় মশাবাহিত ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপ বেশি। ম্যালেরিয়া নিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কতটুকু সচেতনতা ও জ্ঞান আছে, সেটা নিয়ে ‘কমিউনিটি পর্যায়ে ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠী সমূহের ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ’ শীর্ষক এ গবেষণা পরিচালনা করেছেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের (নিপসম) প্রাক্তন শিক্ষার্থী ডা. অনির্বাণ চাকমা।
অনির্বাণ চাকমা বলেন, তাঁর গবেষণাটি রাঙামাটি জেলার তিনটি উপজেলা নানিয়ারচর, কাউখালী ও রাঙামাটি সদর উপজেলায় পরিচালিত হয়। ২৩৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল এ গবেষণার জন্য।
অনির্বাণ চাকমা বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয়, এমন ধারণা ৯৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে আছে। আর প্রায় ৩১ শতাংশ বলেছেন, বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে ম্যালেরিয়া হয়। ৭৩.৫ শতাংশ বলেছেন, ম্যালেরিয়া হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
অন্যদিকে প্রায় ৬১ শতাংশ মানুষ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসাকে ম্যালেরিয়ার লক্ষণগুলোর একটি হিসেবে ধারণা রাখেন জানিয়ে অনির্বাণ বলেন, ম্যালেরিয়া রোগের আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ যেমন নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর জ্বর আসা ও শরীর ঘেমে জ্বর নেমে যাওয়ার ব্যাপারে জানেন শুধু যথাক্রমে ৯ দশমিক ৮ ও ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
বিশ্বাসের কারণে গর্ভবর্তী নারীদের পুষ্টিকর খাবার বর্জন
পার্বত্য অঞ্চলের খাগড়াছড়ি জেলায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর গর্ভবতী নারীদের ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশকে বিশ্বাসের কারণে কোনো না কোনো খাবার বর্জন করেছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
এ গবেষণার অন্যতম গবেষক ডা. লাবণ্য ত্রিপুরা অসুস্থ থাকায় ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। তাঁর পক্ষে এ গবেষণা তুলে ধরেন বিএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান।
খালেকুজ্জামান বলেন, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ও একটি ইউনিয়ন সাবসেন্টারে সেবা নিতে আসা গর্ভবতী নারীদের ওপর গবেষণাটি করা হয়।
খালেকুজ্জামান বলেন, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা জাতিগোষ্ঠীর গর্ভবতী নারীরা শাকসবজি, ফল ও মাংস মিলিয়ে ৬৪ ধরনের খাদ্য বর্জন করেন গর্ভকালে।
সামাজিক সংস্কৃতিতে বহু বছর ধরে লালিত বিশ্বাসকে এটার কারণ উল্লেখ করে খালেকুজ্জামান বলেন, যেমন নারী মনে করেন, গর্ভকালে কাঁঠাল খেলে সন্তান শরীরে কাঁঠালের মতো কাঁটা তৈরি হতে পারে। এ ধরনের ট্যাবু বা বিশ্বাস টিকিয়ে রাখেন মূলত গর্ভবতী নারীর মা, খালা, শাশুড়ি, ননদ।
এসব জাতিগোষ্ঠীর সমাজে সচেতনতা তৈরি করে এসব ট্যাবু ভাঙার ওপর গুরুত্বারোপ করেন খালেকুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে বিএমইউর পাবলিক ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. আতিকুল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএমইউর উপাচার্য ডা. শাহিনুল আলম।
শাহিনুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো নতুন নতুন জ্ঞান তৈরি করা। সে জন্য গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। বিএমইউর আন্তর্জাতিক মানের ৩০০ গবেষক রয়েছেন, যাঁরা স্বাস্থ্যের নানা ক্ষেত্রে গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএমইউর ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক নাহরিন আকতার ও নিপসমের পরিচালক জিয়াউল ইসলাম।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন র ব ণ ন বল ন প রব ণ
এছাড়াও পড়ুন:
ভাষার দূরত্বে হাসপাতালমুখী হতে চান না পাহাড়ি প্রবীণেরা
ভাষার প্রতিবন্ধকতা, সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা, ব্যয়বহুল চিকিৎসার কারণে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের মতো রোগে ভুগলেও হাসপাতালমুখী হন না পাহাড়ি এলাকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রবীণেরা। আধুনিক চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় প্রবীণদের অনেকে প্রতিকার পেতে সনাতনী চিকিৎসার আশ্রয় নেন। কেউ কেউ বৈদ্য ও গণকের দ্বারস্থ হন।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ-সংশ্লিষ্ট আচরণ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এচিত্র উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার বিএমইউর সম্মেলনকক্ষে এ গবেষণার সঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলে ম্যালেরিয়া নিয়ে সচেতনতার চিত্র ও খাগড়াছড়ি অঞ্চলে গর্ভবতী নারীদের ফুড ট্যাবু (বিশ্বাসজনিত খাবার বর্জন) বিষয়ক ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। দুই বছর ধরে সময় নিয়ে এসব গবেষণা সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
এই তিনটি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত গবেষকদের দুজন বিএমইউর সাবেক শিক্ষার্থী ও একজন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের (নিপসম) প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনজনই পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দা।
প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবার চিত্র নিয়ে করা গবেষণার মূল গবেষক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল অফিসার ডা. রাজন তালুকদার বলেন, বাংলাদেশে ৭০ শতাংশ মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে, যেমন ক্যানসার, হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রবীণদের এসব রোগ হলে তাঁরা কী করেন, সেটা নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত নেই।
রাজন তালুকদার বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকসহ অন্য স্টাফদের মধ্যে প্রায়ই বাংলাভাষী হওয়ায় চিকিৎসকদের কাছে প্রবীণেরা তাঁদের সমস্যা বুঝিয়ে বলতে পারেন না। সঙ্গে সঙ্গী না থাকলে ভাষিক যোগাযোগে অসুবিধার মুখে পড়তে হয় তাঁদের। সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় দেখে তাঁরা হাসপাতালে যেতে উৎসাহ পান না।
রাজন বলেন, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্টের নানা সমস্যা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রবীণদের কাছে প্রায় অপরিচিত নাম। তাঁদের কিছুসংখ্যক হাসপাতালে গেলেও রোগ নির্ণয়ে করতে দেওয়া বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে ভয় পান। বড় কোনো রোগ ধরা পড়তে পারে, এমন ভীতি থেকে তাঁরা এসব করতে চান না।
খাগড়াছড়ি জেলার সন্তান এই গবেষক বলেন, অনেকে আশপাশের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনে নিজের রোগের চিকিৎসা নিজে করা শুরু করেন (সেলফ মেডিকেশন)। বৈদ্য বা গণকের কাছে যান অনেকে। কেউ কেউ দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শকে অমান্য করে দ্বিগুণ ডোজের ওষুধ খেয়ে নেন বলে জানান তিনি।
ম্যালেরিয়া নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে রাঙামাটি জেলায়
তিন পার্বত্য জেলায় মশাবাহিত ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপ বেশি। ম্যালেরিয়া নিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কতটুকু সচেতনতা ও জ্ঞান আছে, সেটা নিয়ে ‘কমিউনিটি পর্যায়ে ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠী সমূহের ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ’ শীর্ষক এ গবেষণা পরিচালনা করেছেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের (নিপসম) প্রাক্তন শিক্ষার্থী ডা. অনির্বাণ চাকমা।
অনির্বাণ চাকমা বলেন, তাঁর গবেষণাটি রাঙামাটি জেলার তিনটি উপজেলা নানিয়ারচর, কাউখালী ও রাঙামাটি সদর উপজেলায় পরিচালিত হয়। ২৩৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল এ গবেষণার জন্য।
অনির্বাণ চাকমা বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয়, এমন ধারণা ৯৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে আছে। আর প্রায় ৩১ শতাংশ বলেছেন, বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে ম্যালেরিয়া হয়। ৭৩.৫ শতাংশ বলেছেন, ম্যালেরিয়া হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
অন্যদিকে প্রায় ৬১ শতাংশ মানুষ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসাকে ম্যালেরিয়ার লক্ষণগুলোর একটি হিসেবে ধারণা রাখেন জানিয়ে অনির্বাণ বলেন, ম্যালেরিয়া রোগের আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ যেমন নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর জ্বর আসা ও শরীর ঘেমে জ্বর নেমে যাওয়ার ব্যাপারে জানেন শুধু যথাক্রমে ৯ দশমিক ৮ ও ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
বিশ্বাসের কারণে গর্ভবর্তী নারীদের পুষ্টিকর খাবার বর্জন
পার্বত্য অঞ্চলের খাগড়াছড়ি জেলায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর গর্ভবতী নারীদের ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশকে বিশ্বাসের কারণে কোনো না কোনো খাবার বর্জন করেছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
এ গবেষণার অন্যতম গবেষক ডা. লাবণ্য ত্রিপুরা অসুস্থ থাকায় ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। তাঁর পক্ষে এ গবেষণা তুলে ধরেন বিএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান।
খালেকুজ্জামান বলেন, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ও একটি ইউনিয়ন সাবসেন্টারে সেবা নিতে আসা গর্ভবতী নারীদের ওপর গবেষণাটি করা হয়।
খালেকুজ্জামান বলেন, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা জাতিগোষ্ঠীর গর্ভবতী নারীরা শাকসবজি, ফল ও মাংস মিলিয়ে ৬৪ ধরনের খাদ্য বর্জন করেন গর্ভকালে।
সামাজিক সংস্কৃতিতে বহু বছর ধরে লালিত বিশ্বাসকে এটার কারণ উল্লেখ করে খালেকুজ্জামান বলেন, যেমন নারী মনে করেন, গর্ভকালে কাঁঠাল খেলে সন্তান শরীরে কাঁঠালের মতো কাঁটা তৈরি হতে পারে। এ ধরনের ট্যাবু বা বিশ্বাস টিকিয়ে রাখেন মূলত গর্ভবতী নারীর মা, খালা, শাশুড়ি, ননদ।
এসব জাতিগোষ্ঠীর সমাজে সচেতনতা তৈরি করে এসব ট্যাবু ভাঙার ওপর গুরুত্বারোপ করেন খালেকুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে বিএমইউর পাবলিক ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. আতিকুল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএমইউর উপাচার্য ডা. শাহিনুল আলম।
শাহিনুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো নতুন নতুন জ্ঞান তৈরি করা। সে জন্য গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। বিএমইউর আন্তর্জাতিক মানের ৩০০ গবেষক রয়েছেন, যাঁরা স্বাস্থ্যের নানা ক্ষেত্রে গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএমইউর ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক নাহরিন আকতার ও নিপসমের পরিচালক জিয়াউল ইসলাম।