গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ১ মিনিটের পর থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এ সময়ের পর রপ্তানি পণ্যের যেসব কনটেইনার জাহাজে বোঝাই করা হয়েছে, সেসব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক দিতে হবে। রপ্তানিকারক ও পণ্য পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত শিপিং লাইনের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে পাল্টা শুল্ক এড়িয়ে গত ছয় দিনে (১ থেকে ৬ আগস্ট) প্রায় ১৪ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। সারা দেশের ৫৭৬টি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে এসব পোশাক রপ্তানি করেছে। অবশ্য পাল্টা শুল্ক এড়াতে গত মাসেও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের হিসাবে, গত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো পণ্যের রপ্তানিমূল্য ছিল প্রায় ৮০ কোটি ডলার।

পাল্টা শুল্ক কার্যকরের আগে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা ৫৭৬টি প্রতিষ্ঠানের একটি চট্টগ্রামের ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলস। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির দুটি চালান পাল্টা শুল্ক কার্যকরের আগে রপ্তানি হয়েছে। জানতে চাইলে ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নির্ধারিত সময়সীমার আগে জাহাজে বোঝাই হওয়ার কারণে যে দুটি চালান যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে, সেগুলোতে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হবে না। তিনি আরও বলেন, ‘শনিবার আমাদের প্রতিষ্ঠানের আরও দুটি চালান রপ্তানি হবে যুক্তরাষ্ট্রে। এই দুই চালানে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হবে। যদিও চালান দুটি অনেক আগেই রপ্তানির জন্য প্রস্তুত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করার পর মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চালান দুটি নিতে রাজি হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তবে দফায় দফায় পাল্টা শুল্কহার পরিবর্তন করে ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর করার কথা জানানো হয়। সে অনুযায়ী গতকাল রপ্তানিকারক দেশের বন্দরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রগামী যেসব কনটেইনার বোঝাই হবে, সেগুলোর ওপর পাল্টা শুল্ক কার্যকর হবে।

বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্কহার প্রথমে ৩৭ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। পরে ৮ জুলাই তা কিছুটা কমিয়ে করা হয় ৩৫ শতাংশ। আর ৩১ জুলাই চূড়ান্তভাবে ২০ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

শেষ মুহূর্তে বন্দর ছাড়ল একটি জাহাজ

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, পাল্টা শুল্ক কার্যকরের আগে গতকাল বন্দর ছেড়ে গেছে কনটেইনারবাহী একটি জাহাজ। এই জাহাজে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্য দেশেরও কনটেইনার পণ্য রয়েছে। পতেঙ্গা টার্মিনাল হিসেবে পরিচিত আরএসজিটি চিটাগং টার্মিনাল থেকেই জাহাজটি ছেড়ে যায়।

কোন জাহাজ কবে ছেড়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস কীভাবে তা নিশ্চিত করবে, জানতে চাইলে শিপিং লাইনের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কনটেইনার জাহাজে তোলা হলে সেই কনটেইনার পণ্যের মালিকানা দলিলে (বিল অব লোডিং) জাহাজীকরণের তারিখ উল্লেখ করা থাকে। এই নথিই কনটেইনারটি কোন সময়ে জাহাজে তোলা হয়েছে, তা নিশ্চিত করে।

শিপিং লাইনের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল সকাল ১০টা ১ মিনিটের পর নতুন করে যেসব কনটেইনার পণ্য জাহাজে বোঝাই হচ্ছে, সেগুলোতে পাল্টা শুল্ক কার্যকর শুরু হবে। কনটেইনার বোঝাই এসব রপ্তানি পণ্য প্রথমে সিঙ্গাপুর বা কলম্বো বন্দরে নেওয়া হবে। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী বড় জাহাজে তুলে দেওয়া হবে। এ হিসাবে এসব রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে শুরু করবে ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর। এসব পণ্য পৌঁছানোর পরই কার্যত পাল্টা শুল্ক আদায় শুরু হবে।

রপ্তানিকারকদের স্বস্তি

গত ৮ জুলাই বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করার পর রপ্তানিকারকেরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। কারণ, প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে তখন বাংলাদেশের শুল্কহার ছিল বেশি। এ পরিস্থিতিতে পাল্টা শুল্কহার কার্যকরের আগে যুক্তরাষ্ট্রগামী পণ্য রপ্তানিতে বাড়তি চাপ তৈরি হয়। মার্কিন ক্রেতারা দ্রুত পণ্য জাহাজীকরণের তাগাদা দেন। রপ্তানিকারকেরাও এক-দুই সপ্তাহ আগে পণ্য তৈরি করে বন্দরে পাঠিয়ে দেন।

তবে গত ৩১ জুলাই পাল্টা শুল্ক নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর বাংলাদেশের পণ্যে শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এরপরই মূলত দুশ্চিন্তামুক্ত হন রপ্তানিকারকেরা। ফলে শেষ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রগামী পণ্য রপ্তানিতে চাপ কমে যায়। জুলাই মাসে পণ্য রপ্তানির চাপ থাকলেও শেষ মুহূর্তে বন্দরে চাপ নেই বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেদিন পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, সেদিনই মূলত শঙ্কা কেটে গেছে। আমাদের প্রতিযোগিতায় থাকার দরকার ছিল। এখন আমরা প্রতিযোগিতায় আছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ ল ক ক র যকর কর মকর ত প রথম গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

পূজায় থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা: র‌্যাব 

শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‌্যাব-১।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় র‌্যাব-১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) পারভেজ রানা জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়। ভক্তরা ঘর-বাড়ি, পূজামণ্ডপ ও মন্দির সাজানোর কাজ শুরু করেন এবং বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। উৎসবকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-১ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উৎসব শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে পূজামণ্ডপ, মন্দির ও আশপাশের এলাকায় বিশেষ তৎপরতা চালানো হচ্ছে। মহালয়ার দিন থেকেই পূজার প্রস্তুতি শুরু হওয়ায় র‌্যাব-১ বাড়তি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পূজামণ্ডপ কেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ টহল চালানো হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

টেকনাফে মানব পাচারকারী চক্রের আস্তানা থেকে ৮৪ জনকে উদ্ধার

বগুড়ায় ৫ মণ ওজনের কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার

তিনি জানান, শহর ও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট, যেখানে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি মণ্ডপ এলাকায় সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। দুর্গাপূজার সময় যাতে কেউ নাশকতা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সব ধরনের সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। পূজা উদযাপনকে ঘিরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন ও পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে র‌্যাব।

ঢাকা/এমআর/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ