লেভেল প্লেয়িং ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া হাত পা বেঁধে সাঁতার কাটার শামিল: জাপা
Published: 8th, August 2025 GMT
দেশে এখন নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন,“দেশে যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত স্বাভাবিক না থাকে, পুলিশ ও প্রশাসন যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকে তাহলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে হাত পা বেঁধে সাঁতার কাটতে নামার শামিল। সরকার নিরপেক্ষ হলে তবেই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে।”
শুক্রবার (৮ আগস্ট) কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শামীম পাটোয়ারী বলেন, “জাতীয় পার্টির সাথে বর্তমান সরকার অবিচার করছে। অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও নির্বাচন কমিশন দফায় দফায় সভা করছে। কিন্তু, নিবন্ধিত এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ জাতীয় পার্টিকে সভায় ডাকছে না। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের শপথ নিলে অবশ্যই জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় ডাকা উচিৎ। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার এটি একটি বড় নিদর্শন হচ্ছে জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় ডাকা হচ্ছে না।”
আরো পড়ুন:
তারা বহিষ্কৃত, কাউন্সিল অবৈধ: শামীম পাটোয়ারী
জিএম কাদের বাদ, জাপার কাউন্সিল শনিবার
“দেশের নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। রাষ্ট্রের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এমন বাস্তবতায় মনে হচ্ছে নির্বাচন করার জন্য সরকারের কোন আন্তরিকতা ছিল না। নির্বাচন নিয়ে সরকার নতুন ইনিংস শুরু করেছে, আমরা দেখতে চাই এই ইনিংসে সরকার কেমন ব্যাটিং বোলিং করে। এরপরই আমরা নির্বাচনের ব্যাপারে সঠিক মন্তব্য করতে পারব। এখন যদি সরকার সচেষ্ট হয় তাহলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে হয়তো নির্বাচন করা সম্ভব হবে। নির্বাচনের জন্য সরকারের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা থাকতে হবে।”
তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষে সংসদে একমাত্র জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের জোরালোভাবে বক্তৃতা করেছেন। গেল বছর ২৫ জুলাই বর্ধিত সভা ডেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়েছিল জাতীয় পার্টি। আমাদের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল। রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে আমাদের দুজন নেতা শহীদ হয়েছেন। অন্তত ৪ জন কারাবরণ করেছে এবং কয়েকশ নেতাকর্মী মামলায় জর্জরিত হয়ে পালিয়ে বেরিয়েছিল। তখন জাতীয় পার্টি বলেছিল, সরকার যা করছে তা পরিস্কারভাবে গণহত্যা। সে সময়ে গণহত্যা বন্ধের দাবিও জানিয়েছিল জাতীয় পার্টি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে আন্দোলনের পরে আমরা দেখলাম আন্দোলনের কৃতিত্ব একটি ক্ষুদ্র অংশ দখল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”
রাজনীতিতে সব দলেরই ভুল ত্রুটি আছে জানিয়ে দলটির মহাসচিব বলেন, “২০১৪ সালে আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ২৭০ জনের বেশি প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিল।পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং গোলাম মোহাম্মদ কাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিলেন।পরবর্তীতে এরশাদকে সিএমএইচ এ ভর্তি করে কি করা হয়েছিল তা আপনারা সবাই জানেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেশের প্রায় সব দলই অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনটিও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। আগামী দিনে আমরা গণমানুষের প্রত্যাশা এবং তারুণ্যের স্বপ্নকে সামনে রেখে রাজনীতি করব।”
গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি ফুটবলের ‘পেলে’
ফিলিস্তিন জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড সুলেইমান আল–ওবেইদ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক সাহায্য পেতে অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনি জনতার ওপর ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে প্রাণ হারান ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলার। ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএএফ) গতকাল তাদের ওয়েবসাইটে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সুলেইমানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুনবন্ধু সুয়ারেজ ও ‘দেহরক্ষী’ দি পলে কোয়ার্টার ফাইনালে মেসির মায়ামি৫ ঘণ্টা আগেপিএএফের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক সাহায্যের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় শহীদ হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় ও বিচ সার্ভিসেস দলের তারকা সুলেইমান আল–ওবেইদ। ফিলিস্তিন ফুটবলে সুলেইমান “দ্য গ্যাজেল (হরিণ)”, “দ্য ব্লাক পার্ল (কালো মুক্তা)”, “হেনরি অব প্যালেস্টাইন” এবং “পেলে অব প্যালেস্টাইন ফুটবল” নামে পরিচিত ছিলেন। পাঁচ সন্তান রেখে মারা গেছেন ফিলিস্তিন ফুটবলের এই পেলে।’
গাজায় জন্ম নেওয়া সুলেইমান সার্ভিসেস বিচ ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর পশ্চিম তীরে গিয়ে সেখানকার ক্লাব আল আমারি ইয়ুথ সেন্টারে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলেন। ২০১০–১১ মৌসুমে ফিলিস্তিনের প্রথম পেশাদার ফুটবল লিগ জেতেন সুলেইমান। আল আমারি ছেড়ে আল শাতিয়া ক্লাবে এক মৌসুম খেলেন সুলেইমান। এরপর গাজা স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে সাউদার্ন গভর্নরেটস প্রিমিয়ার লিগে ২০২৬–১৭ মৌসুমে ১৭ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। পরের মৌসুমে আল খাদামা ক্লাবের হয়েও লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।
আরও পড়ুনলা লিগায় সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া ১০ ফুটবলার৬ ঘণ্টা আগেপিএএফের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, দুর্দান্ত গতি ও দক্ষতার জন্য ২০০৭ সালে ফিলিস্তিন জাতীয় দলে জায়গা করে নেন সুলেইমান। ২০১৩ সালে জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলার আগে ২৪ ম্যাচে করেন ২ গোল। এর মধ্যে সুলেইমানের বিখ্যাত গোলটি ২০১০ সালে পশ্চিম এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন চ্যাম্পিয়নশিপে। ইয়েমেনের বিপক্ষে ‘সিজর্স কিকে’ চোখধাঁধানো গোলটি করেছিলেন।
সুলেইমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টোনা নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে লিখেছেন, ”‘সাহায্য পাওয়ার আশায় রাফায় অবস্থান করার সময় ফিলিস্তিন জাতীয় দলের তারকা সুলেইমান আল–ওবেইদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তাকে “ফিলিস্তিনের পেলে” ডাকা হতো। আমরা তাদের আর কত গণহত্যা করতে দেব? ফিলিস্তিন মুক্ত হোক।’”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘লম্বা ক্যারিয়ারে সুলেইমান আল–ওবেইদ ১০০–এর বেশি গোল করে ফিলিস্তিন ফুটবলের অন্যতম উজ্জ্বল তারকায় পরিণত হয়েছিলেন।’ তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে খেলাধুলা ও স্কাউটিং–সংশ্লিষ্ট পরিবারে শহীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৬২, যেটা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের নির্মূলীকরণ যুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হয়। ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন–সংশ্লিষ্ট মৃত মানুষের সংখ্যা ৩২১। এর মধ্যে রয়েছেন খেলোয়াড়, কোচ, প্রশাসক, সংগঠক, রেফারি ও ক্লাবের বোর্ড সদস্য।’
তবে গত ২৩ জুলাই পিএএফের এক্সে করা পোস্টের বরাত দিয়ে ফুটবলপ্যালেস্টাইন ওয়েবসাইট জানিয়েছে, গত ৬৬৯ দিনে ইসরায়েলের হামলায় ৪০০–এর বেশি ফুটবলার নিহত হয়েছেন। সেই পোস্টে তখন জানানো হয়েছিল, সর্বশেষ ৬৫৬ দিনে খেলাধুলা ও স্কাউটিং–সংশ্লিষ্ট ৮০০–এর বেশি নিহত হয়েছেন ইসরায়েলের হামলায়।
গত ২৯ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফিলিস্তিন অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে, শুধু জুলাই মাসেই গাজা ও দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় ৪০ জন ফিলিস্তিনি অ্যাথলেট নিহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘একেকটি দিন যায় আর ফিলিস্তিনের ক্রীড়াঙ্গনে বিয়োগান্ত ঘটনার নতুন অধ্যায় যোগ হয়।’
গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন দেড় লাখের বেশি; তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম প্রেসটিভি।