বস্তিবাসীর জনস্বাস্থ্য নিয়ে গুরুত্ব দিন
Published: 9th, August 2025 GMT
নগর উন্নয়নের বৈষম্যের চূড়ান্ত বাস্তবতা হচ্ছে বস্তি এলাকা। নগরের সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েও তারা নগরবাসী। সরকারি বরাদ্দের ছিটেফোঁটার মতো করুণা বর্ষণ হয় তাদের ওপর। ফলে এক অমানবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে বাধ্য হয় তারা। বস্তির শিশুদের বেড়ে ওঠায় যে অনিশ্চয়তা, তা কখনো কাটে না। এর মধ্যে জনস্বাস্থ্যের চরম অবনতি আরও দুশ্চিন্তা তৈরি করে। যেমনটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ঢাকার বস্তির শিশুদের রক্তে সিসার বিপজ্জনক মাত্রা ধরা পড়েছে, যা খুবই বিপজ্জনক।
আইসিডিডিআরবির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে এসব শিশুর ৯৮ শতাংশের রক্তেই উচ্চমাত্রার সিসা পাওয়া গেছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শিশুদের জন্য সিসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই—এই সহজ সত্যটি জানার পরও এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
রক্তে এই মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতির কারণ চিহ্নিত হয়েছে সিসানির্ভর শিল্প, যেমন পুরোনো ব্যাটারি রিসাইক্লিং ও সিসা গলানোর কারখানা। এসব কারখানার এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে সিসাদূষণের হার অন্যদের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি। এটি স্পষ্ট করে যে পরিবেশগত দূষণ শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা মারাত্মক হুমকি।
শিশুদের শরীরে সিসার উপস্থিতি শুধু তাদের তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, বরং তাদের দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্যও চরম ক্ষতিকর। সিসা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে, স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে এবং শেখার ক্ষমতা ও আচরণগত সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অশনিসংকেত।
এই নীরব বিপর্যয় রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। শুধু গবেষণা ও আলোচনা সভা করে দায় সারলে চলবে না। সরকারকে অবশ্যই দ্রুত সিসানির্ভর শিল্পকারখানাগুলো আবাসিক এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে হবে বা সেগুলো আধুনিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে দূষণের অন্যান্য উৎস যেমন সিসাযুক্ত প্রসাধনসামগ্রী ও রান্নার পাত্রের ব্যবহার বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য শুধু সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন গণসচেতনতা। অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সিসাদূষণ একটি জনস্বাস্থ্যসংকট, যা আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। শিশুদের সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য এখনই সময় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চার গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র সাঁকোটি পানির নিচে
পা দিলেই দুলে ওঠে সাঁকো। কাঠ ও বাঁশের এই সাঁকোটির কোথাও হেলে পড়েছে, আবার কোথাও ভেঙেছে। এই সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায়ই পা ফসকে হ্রদের পানিতে পড়ছেন অনেকে। এমন অবস্থা রাঙামাটির ভেদভেদী আনসার ক্যাম্প থেকে উলুছড়া গ্রামে যাওয়ার একমাত্র সাঁকোটির। এটি দিয়েই চারটি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। সম্প্রতি পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ায় সাঁকোটিও তলিয়ে গেছে। এ কারণে লোকজনের ভোগান্তি আরও কয়েক গুণ বেড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে ও পৌরসভার কিছু অনুদানে সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের দুই বছরের মধ্যেই এটি ভেঙে পড়ে। এর পর থেকে গ্রামের বাসিন্দারা নিজেরাই প্রতিবছর সংস্কার করেন। এটি দিয়ে যাতায়াত করেন উলুছড়া, আলুটিলা, নতুনপাড়া ও কাটাছড়ি নিচপাড়া গ্রামের মানুষ। প্রতিবছর বর্ষায় কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়লে এই সাঁকো দিয়ে পারাপারে বিপত্তি বাঁধে। এ বছরও একই অবস্থা। সাঁকোর কোনো কোনো অংশ প্রায় তিন থেকে চার ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
আমাদের কেনাকাটা, চিকিৎসা, স্কুলে যাওয়া—সবকিছুই এই পথে গিয়ে করতে হয়। এখন সাঁকোটি তলিয়ে যাওয়ায় চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কোথায় গেলে এর সমাধান পাব, তা জানা নেই। আমরা সেতু নির্মাণে সরকারের সহযোগিতা চাই।রবিধন চাকমা, কার্বারি (গ্রামপ্রধান), উলুছড়ি গ্রামউলুছড়া গ্রামের বাসিন্দা বিমল চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের গ্রামে যাতায়াতের একটাই রাস্তা, যেতে হয় এই সাঁকো পার হয়ে। এখন সাঁকোটি পানির নিচে। প্রতিদিন স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধ মানুষজন, রোগীরা ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হচ্ছেন। অনেক সময় লোকজন সাঁকো থেকে পানিতে পড়ে যাচ্ছেন।’
কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ায় সাঁকোটি তলিয়ে গেছে। এরপরও সেটি দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের