নগর উন্নয়নের বৈষম্যের চূড়ান্ত বাস্তবতা হচ্ছে বস্তি এলাকা। নগরের সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েও তারা নগরবাসী। সরকারি বরাদ্দের ছিটেফোঁটার মতো করুণা বর্ষণ হয় তাদের ওপর। ফলে এক অমানবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে বাধ্য হয় তারা। বস্তির শিশুদের বেড়ে ওঠায় যে অনিশ্চয়তা, তা কখনো কাটে না। এর মধ্যে জনস্বাস্থ্যের চরম অবনতি আরও দুশ্চিন্তা তৈরি করে। যেমনটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ঢাকার বস্তির শিশুদের রক্তে সিসার বিপজ্জনক মাত্রা ধরা পড়েছে, যা খুবই বিপজ্জনক।

আইসিডিডিআরবির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে এসব শিশুর ৯৮ শতাংশের রক্তেই উচ্চমাত্রার সিসা পাওয়া গেছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শিশুদের জন্য সিসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই—এই সহজ সত্যটি জানার পরও এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

রক্তে এই মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতির কারণ চিহ্নিত হয়েছে সিসানির্ভর শিল্প, যেমন পুরোনো ব্যাটারি রিসাইক্লিং ও সিসা গলানোর কারখানা। এসব কারখানার এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে সিসাদূষণের হার অন্যদের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি। এটি স্পষ্ট করে যে পরিবেশগত দূষণ শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা মারাত্মক হুমকি।

শিশুদের শরীরে সিসার উপস্থিতি শুধু তাদের তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, বরং তাদের দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্যও চরম ক্ষতিকর। সিসা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে, স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে এবং শেখার ক্ষমতা ও আচরণগত সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অশনিসংকেত। 

এই নীরব বিপর্যয় রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। শুধু গবেষণা ও আলোচনা সভা করে দায় সারলে চলবে না। সরকারকে অবশ্যই দ্রুত সিসানির্ভর শিল্পকারখানাগুলো আবাসিক এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে হবে বা সেগুলো আধুনিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে দূষণের অন্যান্য উৎস যেমন সিসাযুক্ত প্রসাধনসামগ্রী ও রান্নার পাত্রের ব্যবহার বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য শুধু সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন গণসচেতনতা। অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সিসাদূষণ একটি জনস্বাস্থ্যসংকট, যা আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। শিশুদের সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য এখনই সময় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় বাড়ির পাশে খেলা করার সময় পুকুরের পানিতে ডুবে মো. তাকরিম (৩) ও মো. আদনান (৫) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর কুট্টাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত মো. তাকরিম (৩)  সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া উত্তর এলাকার আক্তার হোসেনের ছেলে ও একই উপজেলার উচালিয়াপাড়া এলাকার মো. আরাফাত মিয়ার ছেলে মো. আদনান (৫)।

আরো পড়ুন:

‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম, দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ আহত ৮

আদনান কিছু দিন আগে উত্তর কুট্টপাড়া এলাকায় তার নানার বাড়িতে বেড়াতে আসে। সকালে তার মামাত ভাই তাকরিমের সঙ্গে বাড়ির পুকুরের পাশে খেলা করছিল। খেলার এক পর্যায়ে দুই শিশু পুকুরের পানিতে ডুবে যায়। পরে স্বজনরা শিশুদের বাড়ির পাশে না দেখে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তাদের সন্ধান পায়নি।

দুপুরে স্থানীয়রা বাড়ির পাশে পুকুরে দুই শিশুটিকে ভাসতে দেখেন। পরে তাদের পুকুর থেকে উদ্ধার করে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী জানান, দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। 

ঢাকা/পলাশ/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ