৫৪ বছর পর স্বাধীনতার পক্ষে–বিপক্ষে বলে বিভক্তি সৃষ্টি কাম্য নয়: সালাহউদ্দিন আহমদ
Published: 9th, August 2025 GMT
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রির মাধ্যমে দেশের মানুষের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে–বিপক্ষে এই বক্তব্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করা আমাদের কাম্য হতে পারে না। আমরা কেউই স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এটা কামনা করতে পারি না।’
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠী প্রসঙ্গ ও জাতীয় নিরাপত্তা ভাবনা’ শীর্ষক এই বৈঠকের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক গবেষণা সংস্থা সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন।
বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই জাতিকে বিভক্ত করার মানসিকতা দেখেছি। এখানে স্বাধীনতার পক্ষ–বিপক্ষ বলে আমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে যে বাণিজ্য হয়েছে, রাজনীতিকরণ হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে বাণিজ্য হয়েছে, চেতনা বিক্রি করতে করতে যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সব মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে সবাই সশস্ত্র সংগ্রামে না থাকলেও মানসিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল এবং দেশের সব মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে ছিল।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল বলে যাদের আমরা বিভক্ত করতে চাই, তাদের মধ্যেও দেশের স্বাধীনতার পর সেই স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার মতো কোনো প্রকাশ্য মানসিকতা আমরা দেখিনি। যারা হয়তো দেশের স্বাধীনতাকে গ্রহণ করতে পারেনি, তাদের মধ্যে কিছু ভিন্ন চিন্তা থাকতে পারে। কিন্তু সে রকম দুঃসাহস দেশে কেউ দেখায়নি যে স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার মতো কোনো বিভক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছে। আজ পর্যন্ত আমরা দেখিনি।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে অনেক আগে থেকেই একটি আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা চালু আছে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ সবাইকে এ বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। সাম্প্রতিককালে কুকি–চিনের ঘটনা দেশবাসী ও নিরাপত্তা বাহিনীকে চিন্তিত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেটা আমরা সাদা চোখে দেখছি, সেটার পেছনেও পর্দার অন্তরালের কারণ আছে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখানে আমাদের পার্বত্য অঞ্চল ও ভারতের একটি অঞ্চল, মিয়ানমারের একটি অঞ্চল নিয়ে আরেকটি বৈশ্বিক কোনো কোনো শক্তির পরিকল্পনা আছে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এই ভূখণ্ডকে হয়তোবা তারা অন্যভাবে সাজাতে চায়। এর বেশি আমি আজ বলতে চাই না। সে জন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে; যাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যেকোনো এ রকম পরিকল্পনা আমাদের ভূখণ্ডকে নিয়ে সফল হতে না পারে।’
বাংলাদেশে বসবাসকারী সবারই পরিচয় বাংলাদেশি হতে হবে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী, উপজাতি ও আধা উপজাতি—সব জনসমষ্টি, সব সত্তাকে বাংলাদেশি হতে হবে একটি ঐক্যবদ্ধ নেশন (জাতি) তৈরিতে। সেই ঐক্যবদ্ধ জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্যই আমরা একাত্তরের পর চব্বিশে আবার রক্ত দিয়েছি।’
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.
সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির শাহজাহান চৌধুরী, বিএনপির মিডিয়া সেলের চেয়ারম্যান আলমগীর মোহাম্মদ মওদুদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ও আমজনতার দলের সদস্যসচিব তারেক রহমান। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান।
বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ আব্দুর রব, ওসমানী সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুফি মুস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ বরকত আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেক ফজল, প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল ইউসুফ, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাবু রুইথি কার্বারি, অ্যাকটিভিস্ট থোয়াই চিং মং শাক প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স ব ধ নত র রহম ন আম দ র হ ম মদ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের বিপক্ষে ফারুকি, নাজাত আর গুলবদিনকে বাদ দিল আফগানিস্তান
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। এই দলে জায়গা হয়নি বাঁহাতি পেসার ফজলহক ফারুকি এবং অলরাউন্ডার গুলবদিন নাইব ও করিম জানাতের।
এশিয়া কাপ শেষ হওয়ার পর আগামী ২ অক্টোবর আরব আমিরাতে শুরু হবে দুই দলের ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এরপর ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও খেলবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান।
এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়া আফগানিস্তান আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে তরুণদের সুযোগ দিয়েছে। ফারুকির জায়গায় দলে নেওয়া হয়েছে বাঁহাতি পেসার বশির আহমদকে। ২০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের এখনো আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটে ১৪টি টি-টোয়েন্টি খেলে ৯.০৬ ইকোনমি রেটে ১২টি উইকেট নিয়েছেন বশির।
নতুন মুখ হিসেবে টি-টোয়েন্টি দলে এসেছেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ওয়াফি উল্লাহ তারখিলও। ১৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার সম্প্রতি শপাগিজা ক্রিকেট লিগে নজর কেড়েছেন। সেখানে তিনি ৯ ইনিংসে ৩৭.২৫ গড় এবং ১৫৫.২০ স্ট্রাইক রেটে ২৯৮ রান করেন, যা লিগের তৃতীয় সর্বোচ্চ।
এ ছাড়া দলে ফেরানো হয়েছে পেসার আবদুল্লাহ আহমদজাই। তিনি অবশ্য এশিয়া কাপের রিজার্ভ দলে ছিলেন। এর বাইরে রহস্য স্পিনার আল্লাহ গজনফরকে ওয়ানডে দলে রাখা হলেও তাঁকে টি-টোয়েন্টিতে রাখা হয়নি। সেখানে থাকবেন রিজার্ভ হিসেবে।
এসিবির প্রধান নির্বাহী নাসিব খান বলেন, ‘আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দীর্ঘ ছয় মাসের বিরতি শেষে আমরা এখন টি-টোয়েন্টিতে ব্যস্ত মৌসুম শুরু করতে যাচ্ছি। এই সুযোগ আগামী বছরের আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দলকে দারুণভাবে প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে। ২০২৫ সালের এশিয়া কাপে আমাদের পারফরম্যান্স প্রত্যাশা অনুযায়ী ছিল না। কিন্তু উত্থান-পতন খেলারই অংশ। আমরা আশা করি, আফগানরা দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে এবং আমাদের দেশকে গর্বিত করবে।’
আগামী ২, ৩ ও ৫ অক্টোবর শারজায় তিনটি টি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আবুধাবিতে ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে ৮ অক্টোবর। একই ভেন্যুতে পরের দুই ম্যাচ ১১ ও ১৪ অক্টোবর।
এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান দুই দলই গ্রুপ ‘বি’-তে খেলেছে। আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশ ৮ রানে আফগানিস্তানকে হারায়।
আফগানিস্তান টি-টোয়েন্টি দলরশিদ খান (অধিনায়ক), ইবরাহিম জাদরান (সহ-অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ (উইকেটরক্ষক), মোহাম্মদ ইসহাক (উইকেটরক্ষক), সেদিকউল্লাহ আতাল, ওয়াফি উল্লাহ তারখিল, দারউইশ রাসুলি, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নবী, শরফুদ্দিন আশরাফ, নূর আহমেদ, মুজিব উর রেহমান, বশির আহমদ, ফরিদ আহমদ মালিক ও আবদুল্লাহ আহমদজাই। রিজার্ভ: আল্লাহ গজনফর, রহমত শাহ।আফগানিস্তান ওয়ানডে দলহাশমতউল্লাহ শহীদি (অধিনায়ক), রহমত শাহ (সহ-অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ (উইকেটরক্ষক), ইকরাল আলিখিল (উইকেটরক্ষক), ইবরাহিম জাদরান, সেদিকউল্লাহ আতাল, দারউইশ রাসুলি, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নবি, রশিদ খান, নানগেয়ালিয়া খারোটি, আল্লাহ গজনফর, আবদুল্লাহ আহমদজাই, বশির আহমদ, মোহাম্মদ সেলিম সাফি। রিজার্ভ: বিলাল সামি, ফরিদুন দাউদজাই।