খরায় বাড়বে গাছের মৃত্যু, আরও উষ্ণ হবে পৃথিবী: গবেষণা
Published: 10th, August 2025 GMT
খরার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে গাছের মৃত্যু বাড়বে। এতে আরও উষ্ণ হয়ে উঠবে পৃথিবী। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও জনজীবনে। এ ছাড়া পৃথিবীর উষ্ণ হওয়া ঠেকাতে বর্তমানে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, খরায় গাছের মৃত্যু সেই সংকট মোকাবিলাকে আরও কঠিন করে তুলবে।
গাছের ওপর খরার প্রভাব নিয়ে করা বৈশ্বিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ৩১ জুলাই বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী সায়েন্স–এ ‘উষ্ণমণ্ডলীয় গাছের কাণ্ডের বৃদ্ধিতে খরার প্রভাব সামান্য’ শীর্ষক এই গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
বেশ কয়েকটি দেশের গবেষক মিলে গবেষণাটি করেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার জুইডেমা, ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের অধ্যাপক পিটার গ্রোয়েনেন্ডি, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অধ্যাপক ভেলেরি ট্রাউট ও অধ্যাপক ফ্লোরিন বাবস্ট।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক বছরগুলো বাছাই করেছিলেন তাঁরা। খরার এসব বছরে গাছের বর্ষবলয় স্বাভাবিক বছরের তুলনায় কতটা সংকুচিত ছিল, তা দেখেছেন। এ ছাড়া খরার পরে দুই বছরে গাছের বর্ষবলয়ের প্রস্থ পরিমাপ করেও দেখা হয়।গবেষকেরা জানান, ১৯৩০ সাল থেকে প্রায় ১০০ বছর সময়কালে ৩৬টি দেশের ৫০০টি স্থানের ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তাঁরা। আমাজন বন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এর আগে এত গাছের বর্ষবলয় নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।
উল্লেখ্য, বয়স্ক গাছকে আড়াআড়িভাবে করাত দিয়ে কাটলে ভেতরে গাঢ় রঙের যে বৃত্তাকার বলয় দেখা যায়, তা গুনে গাছের বয়স সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। সেই বৃত্তাকার বলয়কে বলা হয় গাছের বর্ষবলয় বা ট্রি রিংস।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক বছরগুলো বাছাই করেছিলেন তাঁরা। খরার এসব বছরে গাছের বর্ষবলয় স্বাভাবিক বছরের তুলনায় কতটা সংকুচিত ছিল, তা দেখেছেন। এ ছাড়া খরার পরে দুই বছরে গাছের বর্ষবলয়ের প্রস্থ পরিমাপ করেও দেখা হয়।
গবেষকেরা জানান, ১৯৩০ সাল থেকে প্রায় ১০০ বছর সময়কালে ৩৬টি দেশের ৫০০টি স্থানের ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তাঁরা। আমাজন বন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এর আগে এত গাছের বর্ষবলয় নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে খরার বছরে গাছের বৃদ্ধি ছিল স্বাভাবিক বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কম।
গবেষক মিজানুর রহমান গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে খরায় গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে, বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বনে চিক্রাশিগাছের বৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
তবে খরার পরও বেশির ভাগ স্থানে গাছের বৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়েছে সামান্য। কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলেছেন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন কার্বন শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ জন্য খরার পরও প্রকৃতিতে তার প্রভাব পড়ে খুব কম। কিন্তু পরিস্থিতি আর তেমনটা থাকবে না। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী ক্রমেই উষ্ণ হয়ে উঠছে। পাশাপাশি খরাও বাড়ছে। এতে গাছের কার্বণ শোষণের স্বাভাবিক যে প্রক্রিয়া, তা ধীর ধীরে কমছে।
বাংলাদেশে খরায় গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে, বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বনে চিক্রাশিগাছের বৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল।গবেষণায় দেখা গেছে, খরার প্রভাবে বছরে অতিরিক্ত প্রায় দশমিক ১ শতাংশ গাছ মারা যেতে পারে। এতে দুটি বিষয় হবে। প্রথমত; গাছ কমে যাওয়ায় সেসব গাছ যে পরিমাণ কার্বন শোষণ করত, সেই পরিমাণ কার্বন প্রকৃতিতেই থেকে যাবে। আবার গাছ মরার পর পচে যাওয়া এসব গাছ থেকে অতিরিক্ত কার্বন নির্গত হবে।
গবেষক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত গাছের কাণ্ড বৃদ্ধিতে ও একই সঙ্গে গাছের কার্বন শোষণে খরার প্রভাব সীমিত পর্যায়ে আছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান যে প্রবণতা, তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এই স্থিতিশীলতা থাকবে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবদুল আজিজ আল–শেখের ইন্তেকাল
সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবদুল আজিজ আল–শেখ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। সৌদির রয়েল কোর্ট এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
রিয়াদের ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহ মসজিদে বাদ আসর শেখ আবদুল আজিজ আল–শেখের জানাজা হয়। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববিসহ দেশটির সব মসজিদে তাঁর গায়েবানা জানাজা পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সৌদি বাদশাহ এবং যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান গ্র্যান্ড মুফতির পরিবার, সৌদি জনগণ ও ইসলামি বিশ্বের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
সৌদি আরবের রয়েল কোর্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শেখ আবদুল আজিজ আল–শেখের মৃত্যুতে সৌদি আরব ও মুসলিম বিশ্ব একজন বিশিষ্ট আলেমকে হারাল। তিনি ইসলাম ও মুসলিমদের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।’
শেখ আবদুল আজিজ আল–শেখ বিশ্বখ্যাত ইসলামি পণ্ডিত ছিলেন। তিনি সৌদি আরবের জেনারেল প্রেসিডেন্সি অব স্কলারলি রিসার্চ অ্যান্ড ইফতা–এর প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি তিনি মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের সুপ্রিম কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন।
১৯৯৯ সালের জুন মাসে সৌদি আরবের সাবেক বাদশাহ ফাহাদ শেখ আবদুল আজিজ আল–শেখকে সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি নিযুক্ত করেন।
শেখ আবদুল আজিজ আল–শেখ ১৯৪৩ সালের ৩০ নভেম্বর পবিত্র মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অল্প বয়সেই পবিত্র কোরআনে হাফেজ হন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ১৯৬১ সালে তিনি রিয়াদের ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে আরবি ও ইসলামি শরিয়াহ বিষয়ে ১৯৬৫ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
উচ্চশিক্ষা শেষে ১৯৬৫ সালে রিয়াদের ইমাম আল-দাওয়া স্কলারলি ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে আট বছর শিক্ষকতা করেন। এরপর তিনি ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও পরে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি রিয়াদের উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ইনস্টিটিউটেও শিক্ষকতা করেন। তিনি সৌদি আরবের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।
শেখ আবদুল আজিজ আল–শেখ ১৯৮২ সালে আরাফাতের ঐতিহাসিক নামিরাহ মসজিদে ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা ৩৪ বছর নামিরাহ মসজিদে পবিত্র হজের সময় আরাফাতের খুতবা পাঠ করেন তিনি।
১৯৮৭ সালে সিনিয়র স্কলারস কাউন্সিলে নিযুক্ত হন শেখ আবদুল আজিজ আল–শেখ। ১৯৯১ সালে তিনি স্কলারলি রিসার্চ অ্যান্ড ইফতার স্থায়ী কমিটির পূর্ণকালীন সিনিয়র সদস্য হন। ১৯৯৫ সালে তিনি সৌদি আরবের ডেপুটি গ্র্যান্ড মুফতি নিযুক্ত হন।
১৯৯৯ সালে তৎকালীন গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ ইবনে বাজের মৃত্যুর পর তাঁকে গ্র্যান্ড মুফতি, সিনিয়র স্কলারদের কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং ইসলামিক রিসার্চ ও ইফতার সাধারণ সভাপতির পদে মন্ত্রী সমমানের মর্যাদায় নিয়োগ দেওয়া হয়।