সিরাজের মাত, বুমরার ঘাত আর তাসকিনের ভাবনা
Published: 10th, August 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটা অদ্ভুত জায়গা। বলা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই সামাজিক না। যদি সেখানে কখনো নায়ক হন, আপনাকে খলনায়ক হওয়ার অপেক্ষাতেও থাকতে হবে।
ভালোবাসা পেলে ঘৃণাও যে পাবেনই, অবধারিত। ভারতীয় পেসার যশপ্রীত বুমরার কথা ভাবুন। ভারতের ইংল্যান্ড সিরিজ শুরুর আগে অনেক ভারতীয় সমর্থকের কাছে তিনি ছিলেন সবেধন নীলমণি। সিরিজ শেষে? তিনিই নাকি প্রতারক!
সিরিজ শুরুর আগেই বুমরা জানিয়েছিলেন, তিনি ইংল্যান্ড সফরে তিনটি টেস্ট খেলবেন। নিজে নিজে তো আর সিদ্ধান্ত নেননি! টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত। তখন বুমরাকে নিয়ে কোনো সমালোচনা হয়নি।
বুমরা হঠাৎ করে অনেকের চোখে খারাপ হয়ে গেলেন তাঁর সতীর্থ মোহাম্মদ সিরাজ সিরিজের পাঁচটি টেস্ট খেলায়। ‘অ্যান্ডারসন–টেন্ডুলকার ট্রফির’ সব টেস্টেই নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন সিরিজ। আর তাঁর হাত ধরেই ওভাল টেস্ট জিতে সিরিজ ড্র করেছে ভারত।
এসবের পরই বুমরা হয়ে গেলেন চোখের বালি। সিরাজ পারলে বুমরা কেন নন!
তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় কয়েক দিন আগেই যাঁকে সর্বকালের সেরা বলে দাবি করা হলো, সেখানে বুমরার নামই এখন ট্রল ট্রেন্ডিংয়ে। পারফরম্যান্স নিয়ে কিন্তু এখনো প্রশ্ন নেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে বুমরা ৫ ইনিংস বোলিং করে নিয়েছেন ১৪ উইকেট, যা সিরিজের চতুর্থ সর্বোচ্চ।
প্রশ্ন বুমরার নিবেদন নিয়ে। অনেকেরই দাবি, ‘ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্ট’ বলে যে কথাটা বলা হয়, সেটা আদতে কিছুই নয়। মোক্ষম উদাহরণ তো সিরাজই। ২০১৮ সালে অভিষেকের পর থেকে যার ওয়ার্ক লোড নিয়ে কখনো কোনো কথাই হয়নি। সদ্য সমাপ্ত সিরিজে ৪৭টি স্পেলে বোলিং করেছেন সিরাজ, যেখানে প্রতিটি বলেরই গতি ঘণ্টায় ১৩১ কিলোমিটারের বেশি। সিরাজের এমন পারফরম্যান্স বুমরাকেই শুধু না, ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’ কথাটাকেও যেন চাপে ফেলে দিয়েছে!
আর এই পালে হাওয়া দিয়েছেন কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কারও। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি আশা করি, ভারতীয় ক্রিকেটের অভিধান থেকে “ওয়ার্ক লোড” শব্দটা চিরতরে বাদ যাবে। আমি অনেক দিন ধরেই এটা বলে আসছি। আমার মনে হয়, আমাদের সবার মাথায় রাখা উচিত—এই “ওয়ার্ক লোড” আসলে যতটা মানসিক ব্যাপার, ততটা শারীরিক নয়।’
ভারতের হয়ে ৭৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা সন্দীপ প্যাটেল তো গত পরশু সরাসরি বুমরাকে আক্রমণ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি ভাবছি, কীভাবে বিসিসিআই এসব মেনে নিচ্ছে। ফিজিও কি অধিনায়ক ও প্রধান কোচের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
তাহলে নির্বাচকদের কথার কী হবে? আমরা কি ধরে নেব, এখন থেকে দল নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে ফিজিও বসবে? সিদ্ধান্তও কি সে নেবে? আমি দেখেছি সুনীল গাভাস্কারকে ম্যাচের পাঁচ দিনই ব্যাট করতে, কপিল দেবকে টেস্ট ম্যাচের অধিকাংশ দিন বল করতে। এমনকি আমাদের নেটেও বল করত। তারা কখনো বিরতি চাননি, অভিযোগ করেননি, আর তাদের ক্যারিয়ার ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে।’
ভারতের পেস আক্রমণকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বুমরা ও সিরাজ।.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রীলঙ্কা দলে প্রথমবার ডাক পেলেন এসহান, টি-টোয়েন্টিতে ফিরলেন রাজাপাকসে
আসন্ন পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে আয়োজিত ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার সহ-অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন দাসুন শানাকা। গতিতে তোলপাড় করা তরুণ পেসার এহসান মালিঙ্গা প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন আর এই সিরিজে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও তিনি জায়গা পেয়েছেন। যা ত্রিদেশীয় সিরিজের আগেই অনুষ্ঠিত হবে।
২৩ বছর বয়সী মিডল-অর্ডার ব্যাটার পাভন রতনায়েকে যুক্ত হয়েছেন ওয়ানডে দলে। তাকে দলে নেওয়ার পেছনে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের চেয়ে বরং ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘমেয়াদি ধারাবাহিকতাই বড় ভূমিকা রেখেছে। যদিও জুলাইয়ের শেষ দিকে তিনি একটি লিস্ট-এ শতক হাঁকিয়ে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছিলেন।
আরো পড়ুন:
ঢাকা ক্যাপিটালসের জার্সিতে খেলবেন তাসকিন!
২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভেন্যুর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ
অন্যদিকে, হাঁটুর চোট থেকে পুরোপুরি সেরে না ওঠায় ওয়ানডে সিরিজে খেলতে পারছেন না দিলশান মাদুশাঙ্কা। তার জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন মালিঙ্গা। একই সঙ্গে শ্বাসনালির সংক্রমণে ভুগছেন মাথিশা পাথিরানা। ফলে তিনি নেই টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে। পাথিরানার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আসিথা ফার্নান্দো।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রত্যাবর্তন ঘটেছে ভানুকা রাজাপাকসের। বছরের শুরুতে শেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন তিনি। এরপর দুইটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ও এশিয়া কাপ মিস করেন। তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এসএলসি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে তার বিস্ফোরক পারফরম্যান্স (মাত্র চার ইনিংসে ১৬৩ স্ট্রাইক রেট) তাকে আবারও জাতীয় দলে ফিরিয়ে এনেছে। মাঝের সারিতে শক্তি যোগাতে এই অন্তর্ভুক্তি শ্রীলঙ্কার জন্য বড় স্বস্তি।
তবে বিস্ময়করভাবে বাদ পড়েছেন নুয়ানিদু ফার্নান্দো। এসএলসি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে তিনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেও তার স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ১২৪। যা নির্বাচকদের চোখে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেনি।
বাঁহাতি স্পিনার দুনিথ ওয়েলালাগে এবারও মূল দলে জায়গা পাননি। তবে তিনি নেতৃত্ব দেবেন শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলকে। যারা অংশ নেবে দোহায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রাইজিং স্টারস টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে। নুয়ানিদু ফার্নান্দোকেও রাখা হয়েছে সেই দলে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে রাওয়ালপিন্ডিতে, যথাক্রমে ১১, ১৩ ও ১৫ নভেম্বর। এরপর ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হবে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ, রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরে। ফাইনাল নির্ধারিত হয়েছে ২৯ নভেম্বর।
শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে স্কোয়াড:
চারিথ আসালাঙ্কা (অধিনায়ক), পাথুম নিসাঙ্কা, লাহিরু উদারা, কামিল মিশারা, কুশল মেন্ডিস, সাদিরা সামারাবিক্রমা, কামিন্দু মেন্ডিস, জানিথ লিয়ানাগে, পাভন রতনায়েকে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাহেশ থিকশানা, জেফরি ভ্যান্ডারসে, দুষ্মন্ত চামিরা, আসিথা ফার্নান্দো, প্রমোদ মাদুশান ও এহসান মালিঙ্গা।
ত্রিদেশীয় সিরিজে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড:
চারিথ আসালাঙ্কা (অধিনায়ক), পাথুম নিসাঙ্কা, কুশল মেন্ডিস, কুশল পেরেরা, কামিল মিশারা, দাসুন শানাকা (সহ-অধিনায়ক), কামিন্দু মেন্ডিস, ভানুকা রাজাপাকসে, জানিথ লিয়ানাগে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাহেশ থিকশানা, দুশান হেমান্থা, দুষ্মন্ত চামিরা, নুয়ান তুষারা, আসিথা ফার্নান্দো ও এহসান মালিঙ্গা।
ঢাকা/আমিনুল