সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটা অদ্ভুত জায়গা। বলা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই সামাজিক না। যদি সেখানে কখনো নায়ক হন, আপনাকে খলনায়ক হওয়ার অপেক্ষাতেও থাকতে হবে।

ভালোবাসা পেলে ঘৃণাও যে পাবেনই, অবধারিত। ভারতীয় পেসার যশপ্রীত বুমরার কথা ভাবুন। ভারতের ইংল্যান্ড সিরিজ শুরুর আগে অনেক ভারতীয় সমর্থকের কাছে তিনি ছিলেন সবেধন নীলমণি। সিরিজ শেষে? তিনিই নাকি প্রতারক!

সিরিজ শুরুর আগেই বুমরা জানিয়েছিলেন, তিনি ইংল্যান্ড সফরে তিনটি টেস্ট খেলবেন। নিজে নিজে তো আর সিদ্ধান্ত নেননি! টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত। তখন বুমরাকে নিয়ে কোনো সমালোচনা হয়নি।

বুমরা হঠাৎ করে অনেকের চোখে খারাপ হয়ে গেলেন তাঁর সতীর্থ মোহাম্মদ সিরাজ সিরিজের পাঁচটি টেস্ট খেলায়। ‘অ্যান্ডারসন–টেন্ডুলকার ট্রফির’ সব টেস্টেই নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন সিরিজ। আর তাঁর হাত ধরেই ওভাল টেস্ট জিতে সিরিজ ড্র করেছে ভারত।

এসবের পরই বুমরা হয়ে গেলেন চোখের বালি। সিরাজ পারলে বুমরা কেন নন!
তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় কয়েক দিন আগেই যাঁকে সর্বকালের সেরা বলে দাবি করা হলো, সেখানে বুমরার নামই এখন ট্রল ট্রেন্ডিংয়ে। পারফরম্যান্স নিয়ে কিন্তু এখনো প্রশ্ন নেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে বুমরা ৫ ইনিংস বোলিং করে নিয়েছেন ১৪ উইকেট, যা সিরিজের চতুর্থ সর্বোচ্চ।

আমি আশা করি, ভারতীয় ক্রিকেটের অভিধান থেকে “ওয়ার্ক লোড” শব্দটা চিরতরে বাদ যাবে। আমি অনেক দিন ধরেই এটা বলে আসছি।সুনীল গাভাস্কার

প্রশ্ন বুমরার নিবেদন নিয়ে। অনেকেরই দাবি, ‘ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্ট’ বলে যে কথাটা বলা হয়, সেটা আদতে কিছুই নয়। মোক্ষম উদাহরণ তো সিরাজই। ২০১৮ সালে অভিষেকের পর থেকে যার ওয়ার্ক লোড নিয়ে কখনো কোনো কথাই হয়নি। সদ্য সমাপ্ত সিরিজে ৪৭টি স্পেলে বোলিং করেছেন সিরাজ, যেখানে প্রতিটি বলেরই গতি ঘণ্টায় ১৩১ কিলোমিটারের বেশি। সিরাজের এমন পারফরম্যান্স বুমরাকেই শুধু না, ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’ কথাটাকেও যেন চাপে ফেলে দিয়েছে!

আর এই পালে হাওয়া দিয়েছেন কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কারও। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি আশা করি, ভারতীয় ক্রিকেটের অভিধান থেকে “ওয়ার্ক লোড” শব্দটা চিরতরে বাদ যাবে। আমি অনেক দিন ধরেই এটা বলে আসছি। আমার মনে হয়, আমাদের সবার মাথায় রাখা উচিত—এই “ওয়ার্ক লোড” আসলে যতটা মানসিক ব্যাপার, ততটা শারীরিক নয়।’

ভারতের হয়ে ৭৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা সন্দীপ প্যাটেল তো গত পরশু সরাসরি বুমরাকে আক্রমণ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি ভাবছি, কীভাবে বিসিসিআই এসব মেনে নিচ্ছে। ফিজিও কি অধিনায়ক ও প্রধান কোচের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

তাহলে নির্বাচকদের কথার কী হবে? আমরা কি ধরে নেব, এখন থেকে দল নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে ফিজিও বসবে? সিদ্ধান্তও কি সে নেবে? আমি দেখেছি সুনীল গাভাস্কারকে ম্যাচের পাঁচ দিনই ব্যাট করতে, কপিল দেবকে টেস্ট ম্যাচের অধিকাংশ দিন বল করতে। এমনকি আমাদের নেটেও বল করত। তারা কখনো বিরতি চাননি, অভিযোগ করেননি, আর তাদের ক্যারিয়ার ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে।’

ভারতের পেস আক্রমণকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বুমরা ও সিরাজ।.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজের জন্য নতুন অনুপ্রেরণা

মঞ্চ থেকে নামতে নামতেই মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথম আলোর আলোকচিত্রী শামসুল হককে অনুরোধ জানালেন, ‘ভাই, ছবিগুলো কিন্তু পাঠিয়ে দেবেন…।’ চেয়ারে রেখে যাওয়া ফোনে ততক্ষণ কল চলে এসেছিল স্ত্রী রাবেয়া প্রীতির। সিটি গ্রুপ-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারে বর্ষসেরা রানারআপ হওয়ার খবরটি তাঁকেই আগে জানালেন মিরাজ।

বাংলাদেশ দলের অলরাউন্ডার মিরাজ পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে বললেন, ‘আগেও দুবার রানারআপ হয়েছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়া হলো না! তবে খুব ভালো লাগছে। এখানে এলে সব সময়ই ভালো লাগে।’ তাহলে কি পরেরবার বর্ষসেরা হতে চাইবেন? প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসি দিলেও কিছু বলেননি। মাঠে পারফরম্যান্স করেই হয়তো সেই দাবি জানিয়ে রাখবেন।

সতীর্থ তাসকিন আহমেদের সঙ্গেই অনুষ্ঠানের পুরো সময় বসেছিলেন মিরাজ। তাঁদের মধ্য থেকে আগে মিরাজকে মঞ্চ ডেকে নেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারে দুজন রানারআপ হন, একজন যে মিরাজ, তা জানা হয়ে গেছে ততক্ষণে। কিন্তু অন্যজন কে?

আরও পড়ুন১০ কোটি টাকায় বায়োমেকানিকস ল্যাব বানাবে বিসিবি১৩ ঘণ্টা আগে

হাবিবুলের কাছ থেকে মিরাজই পান পরের নামটি ঘোষণার দায়িত্ব। একটু নাটকীয়তা করে তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘আমার পাশেই বসা ছিল…। তাসকিন।’ সতীর্থ মঞ্চে আসার পর অনুভূতিটা শুরুতে জানাতে হলো মিরাজকেই। পুরস্কার পাবেন কি না, ওই দ্বিধা নিয়েই তিনি এসেছিলেন অনুষ্ঠানে। কাল রাতেও যখন পুনরায় নিমন্ত্রণ পান, তখনো নাকি বারবার জানতে চাইছিলেন পুরস্কার পাবেন কি না।

সংশয় শেষ হয়েছে গতকাল পুরস্কার পাওয়ার পর। তবে শুরুতে তিনি নিজেও নাকি মনে করতে পারছিলেন না কেন পেয়েছেন এই পুরস্কার, ‘২০২৪ সালে কী করেছি মনে নেই!’ একটু পরই অবশ্য গত বছরের কথা মনে পড়ে গেছে। এর মধ্যে একটি পারফরম্যান্সকে তো স্বীকৃতি দিয়েছেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা হিসেবেই, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলাম। এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন।’

দুই বর্ষসেরা রানার আপ মিরাজ ও তাসকিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিরাজের জন্য নতুন অনুপ্রেরণা