‎এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ১-১ সমতায় প্রথমার্ধ শেষ করেছে বাংলাদেশ। শুরুতে তৃষ্ণা রানীর সৌজন্যে বাংলাদেশই এগিয়ে গিয়েছিল। পরে দক্ষিণ কোরিয়া সমতা এনেছে।

ভিয়েনতিয়েনের নিউ লাওস ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের এই ম্যাচ ড্র করতে পারলে আগামী বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপের টিকিট কাটবে বাংলাদেশ। এর আগে বাংলাদেশ কখনো এই টুর্নামেন্টে খেলতে পারেনি।

বাংলাদেশ ম্যাচে এগিয়ে যায় ১৫তম মিনিটে। ‎বাঁ প্রান্ত ধরে আক্রমণে ওঠা শান্তি মার্ডি চমৎকারভাবে বল বাড়ান অপর পাশে থাকা তৃষ্ণা রানীর কাছে। পূর্ব তিমুরের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা এই ফরোয়ার্ড সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি। দক্ষিণ কোরিয়ার জালে বল ঠেলেই সতীর্থদের নিয়ে উদ্‌যাপনে মাতেন।
‎তবে এই লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০ মিনিটে লি হিয়াং বাংলাদেশের এলোমেলো রক্ষণের সুযোগ কাজে লাগান। তাতেই ম্যাচে সমতায় ফেরে দক্ষিণ কোরিয়া।‎
‎গোলশূন্য থেকে ১-১ সমতার পর নতুন উদ্যমে লড়াই শুরু করে দুই দল৷ বিরতির আগে টানা আক্রমণের চেষ্টা চালিয়ে গেছে দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশ ছিল সুযোগ তৈরির অপেক্ষায়।
ম্যাচের দুই মিনিটেই প্রতিপক্ষ গোলকিপারকে একা পাওয়ার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি মোসাম্মত সাগরিকা। ৫ থেকে ৯ এই চার মিনিটের মধ্যে তিনবার দক্ষিণ কোরিয়ার আক্রমণ অফসাইডে কাটা পড়ে।

‎এশিয়ার ৩৩টি দল নিয়ে বাছাইপর্ব চলছে আটটি গ্রুপে ভাগ হয়ে। প্রতি গ্রুপের সেরা দল আর সেরা তিন রানার্সআপ জায়গা করে নেবে আগামী বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মূল আসরে।

‎এইচ’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশ প্রথম দুই ম্যাচে লাওস ও পূর্ব তিমুরকে হারিয়ে ৬ পয়েন্ট পেয়েছে। একই দলগুলোকে হারিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পয়েন্টও ৬। এমনকি বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার গোল পার্থক্যও +১০। তবে বাংলাদেশ করেছে ১১ গোল, দক্ষিণ কোরিয়া ১০টি। এক গোল বেশি করায় দক্ষিণ কোরিয়াকে টপকে বাংলাদেশ এখন টেবিলের শীর্ষে।

‎আজকের ম্যাচ ড্র হলে বাংলাদেশ ও কোরিয়া দুই দলই একটি পয়েন্ট করে পাবে। সে ক্ষেত্রে গ্রুপের শীর্ষে থেকেই আগামী বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় এশিয়ান কাপে নাম লেখাবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী দল। আর যদি হেরে যায়, তবু রানার্সআপ দলগুলোর মধ্যে সেরা তিনে থাকতে পারলে মূল পর্বের টিকিট পাওয়া যাবে।

‎এরই মধ্যে ৮ গ্রুপ থেকে ১৪টি দল বিদায় নিয়েছে। আজ শেষ রাউন্ডে নির্ধারণ হয়ে যাবে কোন ৮ দল গ্রুপসেরা হবে। আর কোন তিন দল যাবে সেরা রানার্সআপের তালিকায় থেকে।

‎টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে লাওসকে ৩-১ গোলে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে পূর্ব তিমুরকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

পাহাড় থেকে পৃথিবীর পথে 

পিঠে থুরুং (ঝুড়ি) বাঁধা এক জুমিয়া নারী। মাথায় পাগড়ির বা শিরস্ত্রাণের মতো একটা ট্যাংক। ছবির পরিসরজুড়ে বিশালাকৃতির সেই নারীর চারপাশে বন্দুকধারী অসংখ্য ছায়ামূর্তি। তাদের আকৃতি নারীর তুলনায় বহুগুণ খর্বকায়। ট্যাংকের নল দিয়ে সেসব ছায়ামূর্তির ওপর পড়ছে পাতা আর ফুল।

শিল্পী জয়দেব রোয়াজা কালি ও কলমে এই ছবি এঁকেছিলেন ২০২৩ সালে। তাঁর অন্য সব ছবির মতোই এটিও পাহাড়ের সমকালীন অবস্থাই কেবল তুলে ধরে না; বরং তাকে ভীষণভাবে ছাপিয়ে যায়। বাস্তবতা পেরিয়ে জাদুবাস্তবতার সীমায় এসে দাঁড়ায়। মানুষের জীবন, সংগ্রাম আর প্রকৃতি সব ভেঙেচুরে কবিতার একটি পঙ্‌ক্তির ভেতরে যেন প্রবেশ করে।

১৯৭৩ সালে খাগড়াছড়ির খামারপাড়ার একটি ত্রিপুরা পরিবারে জন্ম জয়দেব রোয়াজার। মা নীহারিকা ত্রিপুরা আর বাবা হিরণ্ময় রোয়াজা। হিরণ্ময় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। শান্ত নিরিবিলি পাড়ার বাসিন্দা তাঁরা। পাহাড়, ঝিরি, ঝরনা আর জুমখেত দেখতে দেখতে বড় হওয়া। স্কুলে কবিতার বইয়ের ইলাস্ট্রেশন নকল করে খাতায় আঁকতেন। কবিতার চেয়ে ভালো লাগত ইলাস্ট্রেশন। শেষে এই ভালো লাগারই জয় হলো। বাংলাদেশের এই সময়কার এক উজ্জ্বল শিল্পী জয়দেব। তাঁর শিল্পকর্মের পরিচিতি ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে। 

একনজরে জয়দেব

চারুকলার নতুন মাধ্যম পারফরম্যান্স আর্ট। জয়দেব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই এই মাধ্যমের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই ধারার শিল্পীরা নিজের শরীরকেই করে তোলেন ক্যানভাস। সঙ্গে থাকে নানা প্রকাশভঙ্গি। পারফরম্যান্স করতে গিয়ে ছবি আঁকা ছাড়েননি তিনি। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের যেমন স্টোরিবোর্ড, তেমনি জয়দেবের পারফরম্যান্সের প্রতিটি ভঙ্গির ছবি আঁকা থাকে তাঁর স্কেচ খাতায়। এভাবেই দুই মাধ্যমকে যুক্ত করেছেন নিজের ধরনে। পাশাপাশি বড় ক্যানভাসেও ছবি আঁকেন। কালি ও কলমেই সিদ্ধহস্ত তিনি।

ভারতের কোচি বিয়েনাল, হংকং আর্ট বেজেল, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রায়েনিয়ালে অংশ নিয়েছেন তিনি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১১টির বেশি দেশে তিনি পারফরম্যান্স করেছেন। হয়েছে চিত্র প্রদর্শনীও। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের টেট মডার্ন মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট, চীনের হংকংয়ের এম প্লাস, ফ্রান্সের প্যারিসের ক্যাডিস্ট ফাউন্ডেশন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির গুগেনহাইম, ভারতের নয়াদিল্লির কিরণ নাদার মিউজিয়ামসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বহু জাদুঘরে তাঁর শিল্পকর্ম রক্ষিত আছে। বাংলাদেশে তাঁর শিল্পসংগ্রহ রয়েছে সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন এবং দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে। শিল্পবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা আর্ট রিভিউ এশিয়া, আর্ট নিউজ, ফোর্বস এবং ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু পত্রিকায় তাঁর শিল্পকর্মের সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। আবুধাবির গুগেনহাইম মিউজিয়াম জয়দেবের একটি শিল্পকর্ম বেশ ভালো দামে কিনে নিয়েছে। বর্তমানে তিনি মুম্বাইভিত্তিক ঝাভেরি কনটেমপোরারি গ্যালারির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। 

পাহাড় আর ঝিরির পথে পথে

খাগড়াছড়ি আর রাঙামাটির ঝিরি পথে বা কাপ্তাই হ্রদের নির্জনতায় সময় কাটে জয়দেব রোয়াজার। আন্তর্জাতিক খ্যাতি এলেও জীবন কাটান পাহাড়ি জুমিয়াদের মতো। কখনো মাছ ধরতে চলে যান জেলেদের সঙ্গে। আবার কখনো ঝিরি পথে হেঁটে হেঁটে দিন কাটে তাঁর। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কামিলাছড়ি গ্রামে নির্জন হ্রদের ধারে গড়ে তুলেছেন স্টুডিও। সেখানে সপ্তাহের দুই দিন কাটে তাঁর। পাহাড় ও পাহাড়ের মানুষজনকে নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বুনে তোলেন ক্যানভাসে।

জয়দেব দেশের শিল্পীসমাজ ও শিল্পবোদ্ধাদের জগৎ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন। তাঁর কথায়, ঢাকা তাঁকে কখনো টানে না। দু-এক দিন ঢাকা বা দেশের বাইরে থাকলে হাঁপিয়ে ওঠেন। ভাবেন, কখন ফিরবেন পাহাড়ে। 

সম্প্রতি কামিলাছড়িতে তাঁর স্টুডিওতে গিয়ে দেখা গেল আট ফুট দীর্ঘ একটি ক্যানভাসে কাজ করছেন তিনি। তিনতলা স্টুডিওর বারান্দায় এসে দাঁড়ালে অবারিত নীল হ্রদের হাতছানি। হ্রদের পাড়ে ঢেউখেলানো পাহাড়ের সারি। সেদিকে তাকালে আচ্ছন্ন হয়ে যেতে হয়। বারান্দায় বসে কথায় কথায় জানালেন নির্জন এই পাহাড়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে ছবি বিক্রির টাকায় এই স্টুডিও গড়ে তুলেছেন। স্ত্রী হাসনাহেনা পরশের সঙ্গে মিলে জঙ্গল পরিষ্কার করেছেন। একটাই চাওয়া, একটু আড়াল, একটু নির্জনতা। ছবি আঁকার জন্য এটুকু পরিসর চেয়েছেন জীবন থেকে। 

জয়দেব রোয়াজা

সম্পর্কিত নিবন্ধ