পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল মেরুর দিকে সরে যাচ্ছে
Published: 23rd, September 2025 GMT
ধরুন, ঠিক এ মুহূর্তে আপনার মাথার ওপরে বায়ুর মধ্য দিয়ে সরু আর্দ্রতার বিশেষ একটি ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। এমন সরু আর্দ্র বায়ুর প্রবাহকে বায়ুমণ্ডলীয় নদী বলে। এমন বায়ুমণ্ডলীয় নদী আমাজন নদীর চেয়ে বেশি পানি বহন করতে পারে। বায়ুমণ্ডলীয় নদীতে তরল পানির পরিবর্তে জলীয় বাষ্প থাকে। এই বায়ুমণ্ডলীয় নদী স্থলভাগে পৌঁছালে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া দেখা যায়। তখন বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হয়। তখন প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি বা তুষারপাত ঘটতে পারে। একটি শক্তিশালী বায়ুমণ্ডলীয় নদী যেকোনো পর্বতমালাকে কয়েক ফুট তুষারে ঢেকে দিতে পারে। একই সঙ্গে বেশ তীব্র বন্যা সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা বারবারার বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় জানিয়েছেন, এসব বায়ুমণ্ডলীয় নদী তাদের ঐতিহাসিক গতিপথ ধরে এখন আর চলছে না। তারা উভয় মেরুর দিকে সরে যাচ্ছে। বিষয়টিকে একটি অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন বলা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জে লি সম্প্রতি বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা নিয়ে আরেক বিজ্ঞানী কুইংহুয়া ডিংয়ের সঙ্গে কাজ করছেন। গবেষক লি বলেন, বায়ুমণ্ডলীয় নদী উভয় গোলার্ধেই মেরুর দিকে সরে যাচ্ছে। এতে উচ্চ অক্ষাংশে ভারী বৃষ্টি ও ঝড় তৈরি হচ্ছে। এতে বিশ্বজুড়ে বৃষ্টির ধরনকে নতুন করে তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন জলবায়ু মডেল থেকে এমন পরিবর্তনের পূর্বাভাস সম্পর্কে তেমন তথ্য জানা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা ইউরোপীয় সেন্টার ফর মিডিয়াম-রেঞ্জ ওয়েদার ফরকাস্টসের ডেটা ব্যবহার করে অতীতের বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন। বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট, আবহাওয়া বেলুন ও বিভিন্ন স্থল স্টেশনের ১৯৭৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সময়ের তথ্যাদি পর্যবেক্ষণ করছেন।
বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ডেটা মডেল একত্র করে প্রতি ঘণ্টার বায়ুমণ্ডলীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। বিজ্ঞানীরা তথ্য বিশ্লেষণের পর অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ জলীয় বাষ্প পরিবহনের করিডর শনাক্ত করেন। এসব করিডরকে বায়ুমণ্ডলীয় নদী চিহ্নিত করেন। প্রায় ৪০ বছরের ডেটা বিশ্লেষণ করার পর দেখা যাচ্ছে, এসব বায়ুমণ্ডলীয় নদী মেরুর দিকে কয়েক ডিগ্রি অক্ষাংশ সরে গেছে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, ঝড়ের গতিপথ লস অ্যাঞ্জেলেস ও সান ফ্রান্সিসকোর মধ্যবর্তী দূরত্বের সমানমতো সরে গেছে।
প্রথমে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, মানুষের সৃষ্ট কারণে জলবায়ুর উষ্ণতার ফলে এসব বায়ুমণ্ডলীয় নদীর স্থান পরিবর্তন হচ্ছে। তথ্য বলছে, সমুদ্রের অবস্থার পরিবর্তনের কারণে বায়ুমণ্ডলীয় নদীর স্থান বদলে যাচ্ছে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রার ভিন্নতা বায়ুমণ্ডলীয় নদীপ্রবাহকে প্রভাবিত করছে। বিজ্ঞানী ডিং বলেন, ‘আমাদের ধারণা, এমন পরিবর্তনের জন্য শুধু মনুষ্যসৃষ্ট প্রভাব মূল কারণ নয়।’
পৃথিবীর সামগ্রিক উষ্ণতা বাড়ছে। এতে বৃহৎ আকারের বায়ুস্রোত পরিবর্তিত হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন জেট স্ট্রিম মেরুর দিকে সরে যাচ্ছে। এতে বায়ুমণ্ডলীয় নদী জেট স্ট্রিম অনুসরণ করে সরে যাচ্ছে। এতে যেসব জায়গায় সাধারণত শীতকালে বায়ুমণ্ডলীয় নদী থেকে নিয়মিত বৃষ্টি হতো, সেখানে খরা দেখা যাচ্ছে। আবার উচ্চ অক্ষাংশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিরল ঝড় দেখা যাচ্ছে। এসব তথ্য ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: আর্থ ডটকম
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় বাড়ির পাশে খেলা করার সময় পুকুরের পানিতে ডুবে মো. তাকরিম (৩) ও মো. আদনান (৫) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর কুট্টাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত মো. তাকরিম (৩) সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া উত্তর এলাকার আক্তার হোসেনের ছেলে ও একই উপজেলার উচালিয়াপাড়া এলাকার মো. আরাফাত মিয়ার ছেলে মো. আদনান (৫)।
আরো পড়ুন:
‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম, দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ আহত ৮
আদনান কিছু দিন আগে উত্তর কুট্টপাড়া এলাকায় তার নানার বাড়িতে বেড়াতে আসে। সকালে তার মামাত ভাই তাকরিমের সঙ্গে বাড়ির পুকুরের পাশে খেলা করছিল। খেলার এক পর্যায়ে দুই শিশু পুকুরের পানিতে ডুবে যায়। পরে স্বজনরা শিশুদের বাড়ির পাশে না দেখে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তাদের সন্ধান পায়নি।
দুপুরে স্থানীয়রা বাড়ির পাশে পুকুরে দুই শিশুটিকে ভাসতে দেখেন। পরে তাদের পুকুর থেকে উদ্ধার করে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী জানান, দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/পলাশ/বকুল